Advertisement
০৬ অক্টোবর ২০২৪
Ranaghat Dakshin Assembly By-election

রানাঘাট দক্ষিণে যুদ্ধ কঠিন মানছে তৃণমূলও, হারানো ‘মুকুট’ ফেরানোর দায়িত্বে বহু লড়াইয়ের ‘সিংহ’ শঙ্কর

২০২১ সালে এই কেন্দ্রেরই পাশের কেন্দ্র রানাঘাট উত্তর-পশ্চিমে তৃণমূলের হয়ে হেরে গিয়েছিলেন শঙ্কর। এ বার তাঁর কাঁধেই রানাঘাট দক্ষিণ পুনরুদ্ধারের দায়িত্ব। শঙ্কর একে ‘দলের চ্যালেঞ্জ’ হিসেবে দেখছেন।

Ranaghat Dakshin Assembly By-election

(বাঁ দিকে) মুকুটমণি অধিকারী। শঙ্কর সিংহ (ডান দিকে)। —গ্রাফিক শৌভিক দেবনাথ।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০২৪ ১৭:১১
Share: Save:

সাল ২০২১: বিধানসভা নির্বাচনে রানাঘাট দক্ষিণে বিজেপি জিতেছিল ১৭ হাজার ভোটে। সাল ২০২৪: রানাঘাট লোকসভার মধ্যে এই বিধানসভাতে তৃণমূল পিছিয়ে প্রায় ৩৬ হাজার ভোটে।

সেই রানাঘাট দক্ষিণেই বুধবার উপনির্বাচন। ২০২১ সালে বিধানসভায় বিজেপির হয়ে জেতা মুকুটমণি অধিকারীই উপনির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থী। সদ্যসমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থী হয়ে পরাস্ত হয়েছিলেন তিনি। ভোটের অঙ্কে রানাঘাট দক্ষিণ যে ‘কঠিন’ চ্যালেঞ্জ, তা ঘরোয়া আলোচনায় মানছেন তৃণমূলের নেতারাও। তবে জয়ের মুকুট মাথায় তুলতে রানাঘাট দক্ষিণ পুনরুদ্ধারের দায়িত্বে প্রবীণ নেতা, প্রাক্তন কংগ্রেস বিধায়ক শঙ্কর সিংহ। তৃণমূলের অনেকের মতেই, শঙ্করই এই উপনির্বাচনের ‘রিং মাস্টার’। কারণ, দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকেই এই নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক দায়িত্ব দিয়েছেন। শঙ্কর অবশ্য বলছেন, ‘‘এটা দলের লড়াই। দলের সকলের কাছেই চ্যালেঞ্জ। ব্যক্তি হিসেবে আমি কেউ নই। পুরোটাই দল।’’

রানাঘাট দক্ষিণে মতুয়া ভোট ‘নির্ণায়ক’ শক্তি। দু’মাস আগে যে ভোট একচেটিয়া ভাবে পদ্মশিবিরের ঝুলিতে গিয়েছিল। দু’মাসে সেই পরিস্থিতি কতটা বদলানো সম্ভব? শঙ্করের বক্তব্য, ‘‘আমরা অনেক আগে থেকে এ বার নেমেছি। সব জায়গায় পৌঁছনোর চেষ্টা করেছি। আশা করি, আসনটা বার করতে পারব।’’ তৃণমূলের অনেক নেতাই ঘনিষ্ঠ বৃত্তের আলোচনায় মানছেন, অঙ্ক কঠিন হলেও উপনির্বাচন বলেই জয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ, এখানে সরকার বদলের বিষয় নেই। বিজেপির অবশ্য দাবি, দু’মাস আগে যে মানুষ তাঁদের ভোট দিয়েছেন, তাঁরা তৃণমূলকে ভোট দেবেন না। রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র রাজর্ষি লাহিড়ীর বক্তব্য, ‘‘তৃণমূল যদি ভোট লুট না করে, তা হলে আমরা রানাঘাট জিতব।’’ প্রসঙ্গত, রানাঘাট লোকসভা হারলেও পাশের কৃষ্ণনগর জিতেছে তৃণমূল। তবে অনেকেরই বক্তব্য, ওই আসনে তৃণমূলের মহুয়া মৈত্র জিতেছেন অনেকটাই ‘ব্যক্তিগত’ প্রচেষ্টায় এবং সংগঠনে। তবে এই উপনির্বাচনে রানাঘাট পুনরুদ্ধার করতে মিটিং-মিছিল করছেন মহুয়া। গিয়েছেন মানুস ভুঁইয়া-সহ তৃণমূলের অন্য নেতারাও।

তবে শাসক শিবিরের নেতারা কেউ কেউ ঘরোয়া আলোচনায় প্রার্থী নিয়ে বিবিধ মন্তব্য করছেন। রাজ্য তৃণমূলের এক প্রথম সারির নেতা রানাঘাটে প্রচার সেরে কলকাতায় ফিরে ঘনিষ্ঠমহলে আলোচনায় বলেছেন, ‘‘যত ক্ষোভ ত‌ো প্রার্থী নিয়েই। জিতলে দিদির মুখে ভর করে জিতব। হারলে প্রার্থীর জন্যই হারব।’’ সেটা অবশ্য রাজ্যের প্রায় সমস্ত আসন সম্পর্কেই সত্য। তবে তৃণমূলের কারও কারও বক্তব্য, মুকুটমণিকে প্রার্থী করা না হলে নৈতিক ভাবে ‘অন্যায়’ হত। কারণ, তিনি বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে লোকসভায় তৃণমূলের টিকিটে লড়েছিলেন। যেমনটা লড়েছিলেন রায়গঞ্জের কৃষ্ণ কল্যাণী। উপনির্বাচনে তাঁকেও প্রার্থী করেছে তৃণমূল। সেখানেও ভোটগ্রহণ বুধবার।

অনেকেই বলেন, রাজনীতিতে ‘অসম্ভব’ বলে কিছু হয় না। ২০২১ সালে এই কেন্দ্রেরই পাশের কেন্দ্র রানাঘাট উত্তর-পশ্চিমে তৃণমূলের হয়ে ভোটে লড়ে পরাস্ত হয়েছিলেন শঙ্কর। এ বার তাঁর কাঁধেই পুনরুদ্ধারের দায়িত্ব। শঙ্কর-ঘনিষ্ঠদের বক্তব্য, লোকসভা ভোটে বিবিধ সাংগঠনিক পরিকল্পনার আভাবে ৩৬ হাজার ভোটে পিছিয়ে থাকতে হয়েছিল। এ বার সেই ফাঁকগুলি অনেকটাই পূরণ করা গিয়েছে। শঙ্কর দীর্ঘ দিনের রাজনীতিক। একটা সময়ে নদিয়ার কংগ্রেস এবং শঙ্কর ছিলেন সমার্থক। ২০১৭ সালে দলবদল করে তিনি তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন। কংগ্রেসে থাকাকালীন এই শঙ্কর-সহ চার জনকে বিধানসভা ভোটে টিকিট দেওয়া নিয়ে প্রদেশ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ক্ষোভপ্রকাশ করে আলিপুর ট্রেজ়ারি বিল্ডিংয়ে গলায় ফাঁস লাগানোর চেষ্টা করেছিলেন মমতা। তখন তিনি যুব কংগ্রেস নেত্রী। সে ঘটনা বঙ্গ রাজনীতিতে সর্বজনবিদিত।

শঙ্কর এখনও পুরনো মেজাজেই থাকেন। পদ না থাকলেও দিনরাত তাঁর বাড়ির বাইরে থাকে অন্তত ৫০ জোড়া জুতো। তবে সার্বিক ভাবে বঙ্গ রাজনীতিতে শঙ্কর আগের ‘প্রাসঙ্গিকতা’ হারিয়েছেন বলেই মনে করেন অনেকে। বরং এখন তাঁর পুত্র যিশু তৃণমূলের উঠতি নেতা। রানাঘাট দক্ষিণ পুনরুদ্ধার হলে সাংগঠনিক এবং রাজনৈতিক ভাবে শঙ্করের হারানো মুকুটও পুনরুদ্ধার হবে বলে মত তাঁদের। প্রমাণিত হবে, পুরনো চাল ভাতে সত্যিই বাড়ে। বাড়বে কি? ছবি স্পষ্ট হয়ে যাবে শনিবার ফলপ্রকাশের দিন দুপুরের মধ্যেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Assembly By Election Mukutmani Adhikari TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE