সমুদ্র থেকে ফিরে আসছেন মৎস্যজীবীরা। দিঘায় পিটিআইয়ের তোলা ছবি।
১০ বছরের ব্যবধান। ফের একবার পরীক্ষার মুখে রাজ্য প্রশাসন। ২০০৯-এর ২৫ মে সাগরদ্বীপ এবং সুন্দরবন এলাকায় আঘাত হেনেছিল অতি ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড় আয়লা। শনিবার মধ্য রাতে আবারও তেমনই একটি অতি ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড় সুন্দরবনের উপর দিয়ে বয়ে যাবে। এ বার কি তৈরি প্রশাসন? ক্ষয়ক্ষতিকি আটকানো যাবে? কারণ, ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের গতি থাকবে আয়লার মতোই, ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার!
অতি ভয়ঙ্কর রূপ নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের দিকে এগোচ্ছে অতি ভয়ঙ্কর ঘূ্র্ণিঝড় বুলবুল। আগামী কাল শনিবার মধ্যরাতে থেকে রবিবার সকালের মধ্যে এ রাজ্যের সাগরদ্বীপ এবং বাংলাদেশের খেপুপাড়ার মধ্যে স্থলভাগে ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের গতিবেগ থাকবে ১১০ থেকে ১২০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায়। এমনকি তা ১৩০ কিলোমিটারও ছাড়িয়ে যেতে পারে।
আরও পড়ুন- ঘূর্ণিঝড়ের সাতকাহন
আলিপুর আবহাওয়া দফতর সূত্রে জানা যাচ্ছে, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া ঘূর্ণিঝড় বুলবুল উত্তরমুখী হয়ে এগোচ্ছে। শনিবার অভিমুখ পরিবর্তন হয়ে উত্তর-পূর্বমুখী হবে। যে ভাবে ঘূর্ণিঝড় গতি নিয়ে এগোচ্ছে, তাতে সুন্দরবনে ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না আবহাওয়া বিজ্ঞানীরা। সে কারণে উপকূলবর্তী প্রশাসনকে সতর্ক করা হয়েছে। নবান্ন থেকেও জেলা প্রশাসনকে তৎপর থাকতে বলা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় আবহবিজ্ঞান বিভাগের ঘূর্ণিঝড় বিভাগের প্রধান বিজ্ঞানী মৃত্যুঞ্জয় মহাপাত্র বলেন, “ঘূর্ণিঝড়টি উপকূলে আছড়ে পড়ার সময় গতিবেগ থাকতে পারে ১২৩ কিলোমিটারের আশপাশে। কোথাও কোথাও তা ১৩০ কিলোমিটারের গতি ছাড়াতে পারে। পশ্চিমবঙ্গের সাগরদ্বীপ এবং বাংলাদেশের খেপুপাড়ার মধ্যে তা ঘূর্ণিঝড়টি আছড়ে পড়তে পারে।”
দেখে নিন বুলবুলের লাইভ অবস্থান
শুক্রবার সকাল থেকেই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে দুই ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর-সহ উপকূলবর্তী জেলাতে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। এ দিন কলকাতাতেও বিক্ষোপ্ত ভাবে বৃষ্টি হচ্ছে। শনি ও রবিবার বৃষ্টির পরিমাণ আরও বাড়বে বলে আলিপুর আবহাওয়া দফতর সূত্রে খবর। ভারী বৃষ্টি হবেদুই ২৪ পরগনা ওপূর্ব মেদিনীপুরে। মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি হবে কলকাতা, হাওড়া, নদিয়া, হুগলি-সহ দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে।
একই সঙ্গে উত্তাল হয়ে উঠবে সমুদ্র। উত্তর ওড়িশা এবং পশ্চিমবঙ্গের উপকূলের সমুদ্রে জলোচ্ছ্বাস হবে। সে কারণে দিঘা, মন্দারমণি, শঙ্করপুর, তাজপুর, বকখালির সমুদ্রে নামতে নিষেধ করা হচ্ছে পর্যটকদের। ঝড়ের কারণে মাটির বাড়ি, কাঁচা রাস্তা, গাছপালা ভেঙে পড়তে পারে। তাই উপকূলের জেলার প্রশাসনকে আগেই সতর্ক করা হয়েছে।
আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গণেশকুমার দাস বলেন, “কলকাতা এবং আশপাশ এলাকায় ৫০ থেকে ৬০ কিলোমিটার গতিবেগে হাওয়া বইবে শনিবার। ওই দিন মধ্য রাতে আছড়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সুন্দরবনের উপর প্রভাব পড়বে। আগামী দু’দিন ভারী বৃষ্টি হবে।”
ঘূর্ণিঝড়ের কারণে মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। ফেরি সার্ভিস বন্ধ রাখাতে বলা হয়েছে। রাজ্যের মন্ত্রী তথা কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলেন, “বুলবুল নিয়ে রাজ্য প্রশাসন এবং কলকাতা পুরসভা সতর্ক আছে। নবান্নে ২৪ ঘণ্টা কন্ট্রোল রুম খোলা থাকবে। সবার ছুটি বাতিল করা হয়েছে। আমি নিজেও কন্ট্রোল রুমে থাকব।”
২০০৯-এর ২৫ মে উপকূলে আঘাত হেনেছিল সাগর দ্বীপে। এ রাজ্যের দুই চব্বিশ পরগনা, কলকাতা এবং বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ এলাকা লণ্ডভণ্ড হয়ে গিয়েছিল। ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার গতিবেগের ঘূর্ণিঝড় এবং তার সঙ্গে বিশাল জলোচ্ছ্বাস আছড়ে পড়ে সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ এলাকায়। শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গেই মৃত্যু হয়েছিল প্রায় ১৫০ মানুষের। বাংলাদেশ মিলিয়ে মৃত্যু হয়েছিল ৩৩৯ জনের। প্রায় ১০ লক্ষ মানুষ আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছিলেন। এছাড়া কয়েক লক্ষ বাড়িঘর চলে গিয়েছিল জলের তলায়। এ বার হয়তো এমন পরিস্থিতি এড়ানো যাবে—এমনটাই মনে করছে রাজ্যের প্রশাসনিক কর্তারা।
কারণ, প্রশাসনের পাশাপাশি আলিপুর আবহাওয়াও মনে করছে, পরিস্থিতি অনেকটাই পাল্টে গিয়েছে। প্রযুক্তির মাধ্যমে আগে থেকেই ঘূর্ণিঝড়ের গতিপ্রকৃতি জানা যাচ্ছে। সে কারণে সকলেই সতর্ক। সুন্দরবনের উপর দিয়ে অতি ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড় গেলেও ‘আয়লা’র মতো ক্ষয়ক্ষতি হবে না বলেই মনে করছে তারা।
দেখুন বুলবুলের গতিপথের ভিডিয়ো
আরও পড়ুন-ধেয়ে আসছে বুলবুল, অতীতে পশ্চিমবঙ্গে আছড়ে পড়েছিল যে সব ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড়
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy