শ্রদ্ধা: নেতাইয়ের শহিদ বেদিতে পার্থ চট্টোপাধ্যায় (বাঁ দিকে) এবং শুভেন্দু অধিকারী। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র
পারস্পরিক হুমকিতে তেতে উঠল শহিদ স্মরণের দুই মঞ্চ। নন্দীগ্রাম ও নেতাই— দু’জায়গাতেই সুর চড়ালেন শুভেন্দু অধিকারী ও তাঁর একদা সতীর্থ তৃণমূলের শীর্ষ নেতারা।
বৃহস্পতিবার ছিল নেতাই দিবস। কুড়মিদের বন্ধের মধ্যেই সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ বিনা বাধায় শুভেন্দু পৌঁছন নেতাই গ্রামে। জেলা বিজেপির নেতাদের সঙ্গেই শহিদ বেদিতে মালা দিয়ে শুভেন্দু বলেন, ‘‘২০১১ সালে লাশ কুড়িয়েছিলাম, আহতদের হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলাম। নেতাইবাসীর সঙ্গে আমার আত্মিক সম্পর্ক। এই সম্পর্কটা রাজনীতির ঊর্ধ্বে।’’ পরক্ষণেই অবশ্য ‘জয় শ্রীরাম’, ‘ভারতমাতা কি জয়’ শোনা যায় শুভেন্দুর গলায়।
তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় নেতাইয়ে পৌঁছন দুপুরে। তবে গ্রামে নয়, তৃণমূলের সভা হয়েছে লালগড়ের হাটচালায়। শুভেন্দু ফিরে গেলে নেতাইয়ের শহিদ বেদি গঙ্গাজলে শুদ্ধ করেন ব্লক তৃণমূল সভাপতি শ্যামল মাহাতো ও ঝাড়গ্রাম জেলা তৃণমূলের কো-অর্ডিনেটর অজিত মাহাতো। পরে গ্রামে মিছিলও করে তৃণমূল। আর সভা থেকে শুভেন্দুর নাম না করে পার্থের কটাক্ষ, ‘জঙ্গলমহলে এই উন্নয়ন তো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্যই। দল বদল করলে কি চোখটার অবস্থাও খারাপ হয়? যারা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সামনে রেখে লড়ল, মরল, সেই ইতিহাস উনি বদলাবেন কীভাবে?’’ আর এক তৃণমূল নেতা মদন মিত্রের হুঁশিয়ারি, ‘‘শুনে নিন শুভেন্দুবাবু, ও সব অমিত শাহ, নরেন্দ্র মোদী দেখাবেন না। এটা হল নেতাই। এই নেতাই থেকে পেটাই শুরু হবে।’’
নেতাই আন্দোলনের উত্তরাধিকার তাঁর ‘নিজস্ব’ বলে বরাবর দাবি শুভেন্দুর। তবে নেতাই থেকে গাড়িতে ফেরার পথে হাটচালায় তৃণমূলের মঞ্চ থেকে এ দিন তাঁকে শুনতে হয়েছে— ‘মীরজাফর দূর হটাও’, ‘শুভেন্দুর কালো হাত ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও’। নেতাই যাওয়ার রাস্তায় সাঁটানো পোস্টারেও ছিল বার্তা— ‘জঙ্গলমহলের মীরজাফর, শুভেন্দু দূর হটো’।
নন্দীগ্রামেও শহিদ স্মরণে ছিল জোড়া কর্মসূচি। বুধবার রাত ১২টার পরে সোনাচূড়ার শহিদ মিনারে শ্রদ্ধা জানিয়ে শুভেন্দু বলেন, ‘‘৩০টি শহিদ পরিবার এসেছে। আমি দল-বর্ণ-ধর্মের ঊর্ধ্বে উঠে নন্দীগ্রাম আন্দোলনের দিন ৭ জানুয়ারি, ১৪ মার্চ, ১০ নভেম্বর পালন করি। এই ধারা অব্যাহত থাকবে।’’ ভাঙাবেড়ার শহিদ বেদিতে ভোর সাড়ে চারটে নাগাদ শ্রদ্ধা জানাতে হাজির হন তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী। পরে এ দিন নন্দীগ্রামে দলের এক কর্মী সভাতেও যোগ দেন সুব্রত। সেখানে তাঁর বার্তা, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সামনে রেখে সংবিধান রক্ষা করার লড়াই চলছে। দিল্লির মসনদ থেকে যতদিন না সংবিধান বিরোধী শক্তি খতম হয়, ততদিন লড়াই চলবে।’’
তবে শুভেন্দু যে শহিদ-স্মরণে গিয়েছিলেন তার আয়োজন ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটি করেনি বলে দাবি এই কমিটির সভাপতি শেখ সুফিয়ানের। তিনি বলেন, ‘‘শুভেন্দুবাবু তো বিজেপি-র লোক। ওটা বিজেপি-ই করেছে।’’ যদিও বিজেপি-র জেলা (তমলুক) সম্পাদক প্রলয় পালের দাবি, ‘‘শহিদ পরিবারের আয়োজনে ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির ব্যানারেই ওখানে শহিদ স্মরণে গিয়েছিলেন শুভেন্দু।’’
লালগড়ের সভায় এ দিন তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক ছত্রধর মাহাতোর আহ্বান, ‘‘ভূমিপুত্রদের কাছে আবেদন, ওই ব্যাটাকে উচিত শিক্ষা দিন। জঙ্গলমহলের যেখানেই যাক, সেখানেই বিক্ষোভ দেখান।’’ শুভেন্দু পাল্টা বলেছেন, ‘‘বিগত দিনে জনসাধারণের কমিটির নামে গোটা এলাকাকে যারা বিশৃঙ্খল করেছে, তারা গণতন্ত্রের কথা বলবে?
তারা বলবে শুভেন্দু অধিকারীকে লালগড়ে আটকে দেব? ক্ষমতা থাকলে আটকে দেখাক তো!’’ সন্ধ্যায় তমলুকের সভামঞ্চেও শুভেন্দু বলেন, ‘‘যাঁরা ২০২০ সাল পর্যন্ত শহিদ বেদিতে মালা দিতে আসেননি, আজ সেই লোকদের পাঠিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী বা তাঁর ভাইপো তৃণমূল কোম্পানি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy