Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
West Bengal Flood Situation

আগের তুলনায় কমেছে জল, তবে এখনও বানভাসি তিন জেলার বিস্তীর্ণ অংশ, নৌকা নিয়ে ত্রাণ বিলি

বহু গ্রাম এখনও কোমরসমান কিংবা হাঁটুসমান জলের তলায়। বন্যাদুর্গতদের কাছে ত্রাণ পৌঁছে দিতে নৌকা ব্যবহার করছে স্থানীয় পুলিশ-প্রশাসন। অসুস্থদের হাসপাতালে নিয়ে যেতেও সহায় হচ্ছে নৌকা।

এখনও জল ডিঙিয়েই চলতে হচ্ছে স্থানীয়দের। শনিবার হাওড়ার একটি গ্রামে।

এখনও জল ডিঙিয়েই চলতে হচ্ছে স্থানীয়দের। শনিবার হাওড়ার একটি গ্রামে। —নিজস্ব চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
আমতা, ঘাটাল ও খানাকুল শেষ আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৮:০৫
Share: Save:

আগের তুলনায় জল কমলেও দক্ষিণবঙ্গের বেশ কিছু জেলার বিস্তীর্ণ অংশ এখনও বানভাসি। হাওড়া, হুগলি এবং পশ্চিম মেদিনীপুরের বন্যা পরিস্থিতি এখনও উদ্বেগজনক। বহু গ্রাম এখনও কোমরসমান কিংবা হাঁটুসমান জলের তলায়। এই পরিস্থিতিতে বন্যাদুর্গতদের কাছে ত্রাণ পৌঁছে দিতে নৌকা ব্যবহার করছে স্থানীয় পুলিশ-প্রশাসন। অসুস্থদের হাসপাতালে নিয়ে যেতেও সহায় হচ্ছে নৌকা।

প্রায় প্রতি বছরেই বন্যার কারণে জলযন্ত্রণা ভোগ করতে হয় পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল এলাকার বাসিন্দাদের। এ বারেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। নিম্নচাপের কারণে গত সপ্তাহে টানা কয়েক দিনের বৃষ্টিতে নদীগুলিতে জলস্ফীতি এবং দামোদম উপত্যতার জলাধার ও নদীবাঁধগুলি থেকে দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন (ডিভিসি)-এর জল ছাড়া—মূলত এই দুয়ের জেরে এই বছরও বানভাসি হয় ঘাটাল ছাড়াও পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোনা, ডেবরা এবং কেশপুর এলাকা। তবে নতুন করে বৃষ্টি না হওয়ায়, আর ডিভিসি জল ছাড়ার পরিমাণ অনেকটাই কমিয়ে আনায় বন্যা পরিস্থিতির সামান্য উন্নতি হয়েছে। জলস্তর কমায় ঘাটাল রাজ্য সড়কে যান চলাচল শুরু হয়েছে। তবে এখনও যোগাযোগের মাধ্যম হিসাবে নৌকা, ডিঙি ব্যবহার করছেন সাধারণ মানুষ। নৌকা এবং স্পিডবোটের সাহায্যেই চলছে ত্রাণ বণ্টন।

জেলার বর্তমান বন্যা পরিস্থিতি সম্পর্কে পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক খুরশিদ আলি কাদরি বলেন, “জল নামতে শুরু করেছে। প্রায় ৫০০ ত্রাণশিবিরে ১০ হাজারের বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। তা ছাড়া ত্রাণসামগ্রী, খাবার পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে বন্যাকবলিত এলাকায়।” পুলিশ সুপার ধৃতিমান সরকার বলেন, “জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি পুলিশের আধিকারিক, কর্মীরাও ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দিচ্ছেন। নিরাপদ আশ্রয়ে যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের জন্য রান্না করা খাবারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। রান্না করা খাবার পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে বন্যাকবলিত এলাকার মানুষদের কাছেও।”

হুগলির খানাকুলের বানভাসি এলাকাগুলিতেও আগের তুলনায় জল কমেছে। তবে এখনও জলের তলায় মাড়োখানা, হানুয়া, রাজহাটি, বন্দর, নন্দনপুর, জগৎপুর, কাকনান, কুশালি-সহ বিস্তীর্ণ এলাকা। নন্দনপুরের কাছে রাস্তা ডুবে যাওয়ায় আরামবাগ-খানাকুল-গড়েরঘাট রুটের বাস পরিষেবাও বন্ধ রয়েছে। বন্ধ দোকানপাট, বাজারও। তবে মুন্ডেশ্বরী এবং দামোদরের জল আগের তুলনায় কমেছে। নতুন করে বৃষ্টি না হলে খানাকুল আর প্লাবিত হবে না বলেই আশা সেখানকার বাসিন্দাদের। পুলিশ-প্রশাসনের তরফে নৌকা করে ত্রাণ বিলি চললেও বণ্টন যথাযথ হচ্ছে না বলে অভিযোগ তুলেছেন কেউ কেউ। প্রান্তিক গ্রামগুলিতে ত্রাণ দেরিতে পৌঁছেছে এই কথা স্বীকার করা হলেও বণ্টনে গাফিলতির কথা স্বীকার করেনি প্রশাসন।

আগের তুলনায় জল কমেছে হাওড়ার উদয়নারায়ণপুর এবং আমতার বিস্তীর্ণ অংশেও।তবে আমতা ২ নম্বর ব্লকের জয়পুর এলাকার বিস্তীর্ণ এলাকা এখনও জলের তলায়। সেহাগড়ি থেকে ঝিকিরা পর্যন্ত এলাকায় ৫০ থেকে ৫৫টি গ্রাম জলমগ্ন। কোথাও কোথাও প্রায় একতলা বাড়ির সমান জল উঠে গিয়েছে। নলকূপগুলি ডুবে যাওয়ায় গ্রামে গ্রামে পানীয় জলের সঙ্কটও দেখা দিয়েছে। এর ফলে সমস্যায় পড়েছেন হাজার হাজার মানুষ। প্রায় দেড় থেকে দুই কিলোমিটার দূরত্বে, বুকসমান জল পেরিয়ে পানীয় জল সংগ্রহ করছেন গ্রামবাসীরা। তার পরেও জলবাহিত নানা রোগে আক্রান্ত বহু মানুষ। গুরুতর অসুস্থদের নৌকা করে বিবি ধর গ্রামীণ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, পানীয় জল আনার জন্য বা বাজার করার জন্য নৌকা পাওয়া যাচ্ছে না। ত্রাণসামগ্রী নিয়েও অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয় বিধায়ক সুকান্ত পাল বলেন, “বেশ কয়েক জায়গায় বাঁধে ফাটল দেখা দেওয়ায় নতুন করে কিছু গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। কিছু জায়গায় ত্রাণ বা জল পৌঁছনো সম্ভব না হলেও বেশির ভাগ জায়গাতেই ত্রাণের ব্যবস্থা করা গিয়েছে।”

শনিবার ডিভিসি জানিয়েছে, মাইথন জলাধার থেকে জল ছাড়ার পরিমাণ ১০ হাজার কিউসেক থেকে বাড়িয়ে ২০ হাজার কিউসেক করা হয়েছে। অন্য দিকে, পাঞ্চেত থেকে জল ছাড়ার পরিমাণ ৪০ হাজার কিউসেক থেকে কমিয়ে ৩০ হাজার কিউসেক করা হয়েছে। সকাল ১১টা থেকে এই পরিমাণ জল ছাড়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে ডিভিসি। দুই জলাধার মিলিয়ে মোট ৫০ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হচ্ছে। এই জল দুর্গাপুর জলাধার হয়ে মূলত পূর্ব বর্ধমান, হাওড়া এবং হুগলির বিভিন্ন নদী এবং খালে যাবে।

অন্য বিষয়গুলি:

Flood Situation flood waterlogging
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE