সংগঠনে ‘স্বচ্ছতা’ চান কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। সেই প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা করতে আপত্তি নেই রাজ্য বিজেপির বর্তমান নেতৃত্বের। কিন্তু জেলা থেকে ইতিউতি এখনও উঠে আসছে আপত্তি। তার জেরেই আবার ধমক খেতে হল জেলা নেতাদের। বিজেপির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক সুনীল বনসল মঙ্গলবার উত্তরবঙ্গের একটি জেলার নেতাকে বলেছেন, তাঁরাই (জেলার নেতারা) সব ঠিক করে নিতে পারলে কেন্দ্রীয় নেতাদের আর প্রয়োজন পড়ত না! বনসল ওই নেতাকে আরও জানিয়ে দিয়েছেন, সারা দেশে দল যে পদ্ধতিতে চলছে, বাংলায় তার ব্যতিক্রম ঘটানোর চেষ্টা যেন না করা হয়।
রাজ্য বিজেপির সদস্য সংগ্রহ অভিযান সদ্য শেষ হয়েছে। শুরু হয়েছে সাংগঠনিক নির্বাচন পর্ব। প্রথমে বুথ স্তর, তার পরে মণ্ডল এবং সব শেষে জেলা সভাপতি বাছাই। ১০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ধাপে ধাপে কী ভাবে পুরোটা মিটিয়ে ফেলতে হবে, সেই পদ্ধতি সকলকে বোঝাতে মঙ্গলবার সাংগঠনিক কর্মশালা করেছে বিজেপি। সল্টলেক স্টেডিয়াম চত্বরের এক প্রেক্ষাগৃহে সেই কর্মশালায় উত্তরবঙ্গের একটি জেলাকে বনসলের ধমক খেতে হয়েছে।
আরও পড়ুন:
বিদেপি সূত্রের খবর, ‘বিকল্প পদ্ধতি’ নিয়ে ঘটনার সূত্রপাত। কী ভাবে বুথ সভাপতি বাছাই হবে, কী ভাবে হবে মণ্ডল কমিটি এবং জেলা কমিটি হবে, কর্মশালায় বিভিন্ন জেলার নেতৃত্বকে সে সব বিশদে বোঝাচ্ছিলেন বনসল, মঙ্গল পাণ্ডে, অমিত মালব্যরা। ১০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে যদি তিনটি স্তরের সভাপতি বাছাই সেরে ফেলতে হয়, তা হলে সরাসরি ভোটাভুটি যে করানো যাবে না, তা বিজেপির রাজ্য নেতারা বুঝে গিয়েছেন। রাজ্য নেতৃত্বের ওই বক্তব্য মানতে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও আপত্তি করেননি বলেই খবর। সংগঠনে ‘স্বচ্ছতা’ আনতে বিকল্প পথও তাঁরা বলে দিয়েছিলেন কর্মশালায়। কিন্তু উত্তরবঙ্গের একটি জেলা থেকে সেই ‘বিকল্প পদ্ধতি’ নিয়ে আপত্তি তোলা হয়। তাতেই ‘অসন্তুষ্ট’ হন বনসল।
সংগঠন কী ভাবে সাজাতে হবে, তা বোঝাতে গিয়ে বনসল বলেছিলেন, মণ্ডল সভাপতি বেছে নেওয়ার জন্য বুথ স্তরের কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে মণ্ডল-পিছু পাঁচটি করে নাম তুলে আনতে হবে। সেই পাঁচ নাম পাঠিয়ে দিতে হবে জেলায়। তার পরে জেলার নেতারা আলোচনা করে সেই পাঁচটি বা তার থেকে তিনটি নাম বেছে রাজ্য নেতৃত্বকে পাঠাবেন। রাজ্য সেই নামগুলি থেকে মণ্ডল সভাপতি বেছে নিয়ে জেলাকে জানিয়ে দেবে। বনসল আরও জানান, পাঁচটি বা তিনটি করে নাম বেছে নেওয়ার যে কমিটি, তাতে স্থানীয় স্তরের সভাপতি, প্রাক্তন সভাপতি, কোর কমিটির সদস্য এবং দলের টিকিটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিকেও (থাকলে) রাখতে হবে।
আরও পড়ুন:
গোটা পদ্ধতি বুঝিয়ে দেওয়ার পরেও উত্তরবঙ্গের একটি জেলার তরফে বলা হয়, ওই জেলায় অনেক এলাকায় একটি করেই নাম উঠে আসছে। পাঁচটি করে নাম পাওয়া যাচ্ছে না। তখনই ‘অসন্তুষ্ট’ বনসল ওই নেতাকে জানান, পাঁচটি নাম যখন পাঠাতে বলা হয়েছে, তখন তিনি যেন পাঁচটিই নাম পাঠান। সব যদি জেলার নেতারাই ঠিক করে নিতে পারতেন, তা হলে তো কেন্দ্রীয় নেতাদের দরকার পড়ত না! বিভিন্ন জেলা থেকে কর্মশালায় আগত প্রতিনিধিদের বনসল বলেন, সারা দেশে বিজেপি যে পদ্ধতি মেনে চলছে, বাংলাতেও সে ভাবেই চলতে হবে। কর্মশালায় অংশগ্রহণকারী একাধিক প্রতিনিধি জানাচ্ছেন, বনসলের ‘ধমকে’র পরে সাংগঠনিক প্রক্রিয়ায় ‘জল’ মেশানো কঠিন হবে। কিন্তু ‘জল’ মেশানো কেন? নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক জেলা সভাপতির কথায়, ‘‘স্বচ্ছতা সুনিশ্চিত হলে অনেক জেলা সভাপতিরই ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।’’