Advertisement
২০ ডিসেম্বর ২০২৪
University of Calcutta

শিক্ষা দফতরের নতুন নীতি মেনে জুলাই থেকে ভর্তি কলেজগুলিতে, জানাল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় 

‘কারিকুলাম অ্যান্ড ক্রেডিট ফ্রেমওয়ার্ক’ মেনে জুলাইয়ের শুরু থেকে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্নি কলেজগুলিতে। ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষ থেকেই চালু হয়ে যাচ্ছে এই পাঠক্রম।

University of Calcutta

—প্রতীকী ছবি।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০২৩ ০৩:২৫
Share: Save:

রাজ্যে চার বছরের স্নাতক পাঠক্রমে যে ছাড়পত্র দিয়েছিল শিক্ষা দফতর, সেই নীতি মেনেই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হবে স্নাতক স্তরের ভর্তি প্রক্রিয়া। গত কয়েক দিন ধরেই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাঁদের ১৫৩টি কলেজের অধ্যক্ষদের নিয়ে বৈঠক করেছেন। ওই সব বৈঠকে উপাচার্যেরা তাঁদের কলেজের পরিকাঠামো সম্পর্কে মতামত জানান। সেই মত শোনার পর শুক্রবার কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের বৈঠক বসেছিল। ওই বৈঠকে ঠিক হয়েছে ‘কারিকুলাম অ্যান্ড ক্রেডিট ফ্রেমওয়ার্ক’ মেনে জুলাইয়ের শুরু থেকে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্নি কলেজগুলিতে। ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষ অর্থাৎ এই বছর থেকেই চালু হয়ে যাচ্ছে এই পাঠক্রম।

শুক্রবার এই বিষয়ে বিশদে জানিয়ে একটি নির্দেশিকা প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সেই নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, স্নাতকে ‘মাল্টিপল এন্ট্রি-এক্সিট’-এর সুবিধা থাকছে। পড়ুয়ারা স্নাতকে কিছু বিষয়কে ‘মেজর’ নিয়ে ভর্তি হওয়ার পর ৩ বছরে কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরিয়ে এলে মিলবে ‘মেজর গ্র্যাজুয়েট’ ডিগ্রি। যদি ৪ বছরে এই কোর্স শেষ করে পড়ুয়ারা কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়েন, তা হলে মিলবে ‘অনার্স গ্র্যাজুয়েট’ ডিগ্রি। উচ্চশিক্ষার পরবর্তী স্তরে পড়ুয়াদের মিলবে ‘অনার্স’ ডিগ্রি বা ‘অনার্স উইথ রিসার্চ’ ডিগ্রি।

চার বছরের এই পাঠক্রমকে কোনও ছাত্র বা ছাত্রীর সাত বছরের মধ্যেই শেষ করতে হবে। মোট আটটি সেমেস্টারে ভাগ করা হবে এই পাঠক্রম। প্রতিটি সেমেস্টারের সময়সীমা ছয় মাস। বিজোড় সেমেস্টার শুরু হবে জুলাই থেকে এবং জোড় সেমেস্টার শুরু হবে জানুয়ারি মাস থেকে। এক বছর কেউ স্নাতক স্তরে পড়লে তিনি পাবেন সার্টিফিকেট, দু’বছর পড়লে ডিপ্লোমা, তিন বছর থেকে ডিগ্রি পাবেন। এর পাশাপাশি বর্তমানে যাঁরা তিন বছরের অনার্স পড়ছেন, তাঁদের ডিগ্রিকে অনার্স ডিগ্রি বলেই ধরা হবে। চার বছরের অনার্স ডিগ্রি পড়তে গিয়ে যাঁরা শেষ বছরে গবেষণা করবেন, তাঁদের অনার্সের সঙ্গে ‘উইথ রিসার্চ’ কথাটি থাকবে। কোনও ছাত্র বা ছাত্রী অনার্স নিয়ে পড়তে চাইলে তাঁর পূর্ববর্তী যোগ্যতা পরীক্ষায় মোট ৫০ শতাংশ নম্বর থাকা বাধ্যতামূলক। পাশাপাশি, যে বিষয়টি নিয়ে পড়তে চান তাতে ৪৫ শতাংশ নম্বর থাকতেই হবে। অথবা পূর্ববর্তী যোগ্যতা পরীক্ষায় বিষয় বা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ৫৫ শতাংশ নম্বর থাকা বাধ্যতামূলক। সংরক্ষিত আসনে অনার্সের জন্য ছাত্রাছাত্রীদের মোট ৪০ শতাংশ অথবা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ৪০ শতাংশ নম্বর থাকতে হবে।

এ ছাড়াও বলা হয়েছে, সমস্ত ছাত্রছাত্রীদের দ্বিতীয়, চতুর্থ বা ষষ্ঠ সেমেস্টারের শেষে একটি ক্রেডিট সামার ইন্টার্নশিপ করতে হবে। দ্বিতীয় সেমেস্টারের শেষে ইন্টার্নশিপ সম্পন্ন করা ছাত্রছাত্রীদের পাঠক্রম থেকে প্রস্থান করার অনুমতি দেওয়া হবে এবং ৪৫ ক্রেডিট-সহ সার্টিফিকেট প্রদান করা হবে। চতুর্থ সেমেস্টারের শেষে ইন্টার্নশিপ সম্পন্ন করা শিক্ষার্থীদের কোর্স থেকে প্রস্থান করার অনুমতি দেওয়া হবে এবং ৮৮ ক্রেডিট-সহ ডিপ্লোমা প্রদান করা হবে। ষষ্ঠ সেমেস্টার শেষে ইন্টার্নশিপ সম্পন্ন করা শিক্ষার্থীরা হবে কোর্স থেকে প্রস্থান করার অনুমতি দেওয়া হবে এবং ১৩২ ক্রেডিটের তিন বছরের ‘সিঙ্গল মেজর’ ডিগ্রি প্রদান করা হবে।

প্রথম ছ’টি সেমেস্টার সফল ভাবে শেষ করার পরে যে সকল ছাত্রছাত্রীদের সিজিপিএ ৭৫ শতাংশ বা তার বেশি থাকবে তাঁরা সপ্তম এবং অষ্টম সেমিস্টারে ‘অনার্স উইথ রিসার্চ ডিগ্রি’ পাঠক্রম বেছে নিতে পারবেন। যে সকল ছাত্রছাত্রীরা চার বছরের স্নাতকের ‘অনার্স উইথ রিসার্চ ডিগ্রি’ পাঠক্রম বেছে নেবেন তাঁদের একজন ফ্যাকাল্টি সদস্যের নির্দেশনায় গবেষণা করতে হবে। যার ক্ষেত্রে সপ্তম সেমিস্টারে থাকবে চার এবং অষ্টম সেমিস্টারে থাকবে আট মোট ১২ ক্রেডিট। গবেষণা ছাড়াই চার বছরের অনার্স ডিগ্রি অর্জনকারী ছাত্রছাত্রীদের সপ্তম সেমিস্টারে অতিরিক্ত একটি এবং অষ্টম সেমিস্টারে দু’টি অতিরিক্ত বিষয় পড়তে হবে।

জাতীয় শিক্ষানীতি মেনে দেশের বেশ কিছু রাজ্যে ইতিমধ্যে চার বছরের স্নাতক পাঠক্রম চালু হয়েছে। রাজ্যের সেন্ট জেভিয়ার্স বিশ্ববিদ্যালয় এবং সিস্টার নিবেদিতা বিশ্ববিদ্যালয়ও জাতীয় শিক্ষানীতি মেনে চার বছরের স্নাতক পাঠক্রম চালু করেছে। কারিকুলাম অ্যান্ড ক্রেডিট ফ্রেমওয়ার্ক মেনে নিয়ে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় স্নাতক স্তরে এক, দুই, তিন ও চার বছরে বেরিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা (এগজ়িট সিস্টেম) চালু করতে চলেছে। কিন্তু যাদবপুর, প্রেসিডেন্সি এবং রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একক বিশ্ববিদ্যালয়, অর্থাৎ যাদের অধীনে কলেজ নেই, তারা শুধু চার বছরের পাঠক্রমকেই গুরুত্ব দিচ্ছে। এদের মধ্যে কেউ কেউ তিন বছরের মাথায় বেরিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা রাখার কথা ভাবছে। কিন্তু, প্রথম ও দ্বিতীয় বছরে বেরিয়ে যাওয়ার সুযোগ রাখছে না। যদিও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে খবর, অধ্যক্ষদের বৈঠকে অনার্স এবং জেনারেল কোর্সের আসনের বৈষম্য তৈরির আশঙ্কা করেছিলেন অনেকে। সেই সকল বিষয় মাথায় রেখেই সিন্ডিকেটের বৈঠকে এই শিক্ষানীতি নিয়ে পর্যালোচনা করা হয়েছে এবং তার পরেই এই নির্দেশিকা প্রকাশ করা হয়েছে।

চলতি শিক্ষাবর্ষ থেকেই রাজ্যে চার বছরের স্নাতক পাঠক্রমে ছাড়পত্র দিয়েছিল শিক্ষা দফতর। গত ৩১ মে শিক্ষা দফতরের তরফে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে জানানো হয়েছিল এই বিষয়ে। এই প্রসঙ্গে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু জানিয়েছিলেন, পড়ুয়াদের সুবিধার কথা ভেবেই স্নাতক স্তরে চার বছরের পাঠক্রম চালু করছে রাজ্য। শিক্ষামন্ত্রী স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিলেন যে, রাজ্য জাতীয় শিক্ষানীতি অনুসরণ করছে না। রাজ্য যে পৃথক শিক্ষানীতি গ্রহণ করবে বলে জানিয়েছিল, তার ভিত্তিতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছিলেন তিনি।

অন্য বিষয়গুলি:

University of Calcutta New Education Policy NEP UGC Education Department Bratya Basu
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy