মুর্শিদাবাদকাণ্ডের প্রতিবাদে পথে নেমে পশ্চিমবঙ্গের প্রশাসনকে ‘চুপসে’ দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিলেন ভারত সরকারের প্রতিমন্ত্রী। বনগাঁর সাংসদ তথা মতুয়া সঙ্ঘাধিপতি শান্তনু ঠাকুর রবিবার থানা ঘেরাও করলেন নিজের নির্বাচনী এলাকায়। সঙ্গে ছিলেন রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদিকা লকেট চট্টোপাধ্যায় এবং প্রাক্তন সাংসদ অর্জুন সিংহ। বিক্ষোভ মঞ্চ থেকে থানার দিকে আঙ্গুলি নির্দেশ করে শান্তনুর মন্তব্য, ‘‘এদের দেখাব, আমরা কতটা শক্তি ধরি। চাইলে সাত দিন থানা থেকে বাইরে বেরতে দেব না।’’
শমসেরগঞ্জ এবং ধুলিয়ানের ঘটনার প্রতিবাদে সারা রাজ্যের বিক্ষোভ কর্মসূচি এবং থানা ঘেরাওয়ের পরিকল্পনা নিয়েছে বিজেপি। শনিবার বিক্ষোভ হয়েছে রাজ্য বিজেপির সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুকান্ত মজুমদারের এলাকা বালুরঘাটে। নেতৃত্ব দিয়েছেন সুকান্ত নিজেই। রবিবার থানা ঘেরাও হল এ রাজ্যের আর এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনুর এলাকায়। নেতৃত্ব দিলেন শান্তনুই। তবে গাইঘাটা থানার সামনের এই জমায়েতে শান্তনুর সঙ্গে লকেট, অর্জুন ছাড়াও ছিলেন স্থানীয় বিধায়ক সুব্রত ঠাকুর, বিজেপির বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি দেবদাস মণ্ডল।
বেলা ৩টে থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বিজেপির এই বিক্ষোভ কর্মসূচি চলে। গাইঘাটা থানার মূল প্রবেশপথের সামনেই জমায়েত করেছিল বিজেপি। নিজের ভাষণে বার বার পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গিয়েছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে। তাঁর লোকসভা কেন্দ্রের সর্বত্র এই প্রতিবাদ সভা চলবে এবং পুলিশ তাতে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে ফল ভাল হবে না বলে শান্তনু হুঁশিয়ারি দেন। মঞ্চে দাঁড়িয়ে থানার দিকে আঙুল দেখিয়ে শান্তনু বলেন, ‘‘রাজনৈতিক বিরোধিতা থাকতে পারে, কিন্তু ব্যক্তিগত বিরোধিতা আমার কারও সঙ্গে নেই। এঁরা ব্যক্তিগত বিরোধিতা তৈরি করেছেন। এঁদের দেখাব, আমরা কতটা শক্তি ধরি।’’

বিক্ষোভ মঞ্চে শান্তনু ঠাকুরের সঙ্গে লকেট চট্টোপাধ্যায় এবং জেলা সভাপতি দেবদাস মণ্ডল। —নিজস্ব চিত্র।
শুধু গাইঘাটা থানাকে বা পুলিশকে নয়, পশ্চিমবঙ্গের গোটা প্রশাসনকেই রবিবার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন শান্তনু। তিনি বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গ তো আমার মাতৃভূমি। পশ্চিমবঙ্গের শাসন ক্ষমতায় যাঁরা আছেন, তাঁরা নিজেদের ভাবেন কী? আমরা সারা ভারতবর্ষের দায়িত্ব নিয়ে রয়েছি। পশ্চিমবঙ্গের এই প্রশাসনকে আমরা সেকেন্ডের মধ্যে চুপসে দিতে পারি, যদি আইনগত ব্যবস্থা নিই। মাথায় রাখবেন এটা।’’
শান্তনুর এই হুঁশিয়ারির জবাবে ‘ষড়যন্ত্র’ তত্ত্ব এনেছে তৃণমূল। দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেছেন, ‘‘এই কাজটাই তো ওঁরা করছেন। কেন্দ্রীয় সরকারে থাকার সুবাদে ওঁরা এজেন্সির অপব্যবহার করে যেটা করছেন, সেটাই ওঁর মুখ থেকে বেরিয়ে গিয়েছে। শুভেন্দু অধিকারী নিজে বিবৃতি দিয়ে বলেছেন, বাংলাদেশ থেকে ঢুকে হামলা হয়েছে। এখন সেই কথা থেকে সরে এলে হবে? আমরা এই ষড়যন্ত্রের তদন্ত চেয়েছি।’’
মূলত গাইঘাটা বিধানসভার কর্মীদের নিয়েই রবিবার জমায়েতের ডাক দিয়েছিলেন শান্তনু। তবে তাঁর লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত অন্যান্য বিধানসভাতেও বিক্ষোভ কর্মসূচি হবে বলে শান্তনু গাইঘাটার মঞ্চ থেকেই রবিবার ঘোষণা করেছেন।