দীপক পাণ্ডে। —নিজস্ব চিত্র।
তাঁর ওই শারীরিক অবস্থায় স্টিফেন হকিং যদি পদার্থবিজ্ঞান নিয়ে এত কিছু করে যেতে পারেন, আমি পদার্থবিদ্যা পড়তে পারব না কেন? আমার তো শুধু হাত দু’টিই নেই কনুই থেকে। লিখি পা দিয়ে। কেন পারব না?
দীপক পাণ্ডের এই প্রশ্নের আড়ালে আছে তাঁর আর্ত আবেদন। তার থেকেও বেশি আছে আত্মবিশ্বাস— ‘‘আমি পারব। সুযোগ দিয়ে দেখুন।’’
কিন্তু নিউ আলিপুর কলেজের প্রথম বর্ষের পদার্থবিদ্যা অনার্সের ওই ছাত্র লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পারবেন কি না, তা নিয়ে বড়সড় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। কেননা বিষয়টি প্র্যাক্টিক্যাল-নির্ভর। কিন্তু অন্যের সাহায্য ছাড়া দীপকের পক্ষে পদার্থবিদ্যার প্র্যাক্টিক্যাল ক্লাস করা সম্ভব নয়।
এই পরিস্থিতিতে কলেজের অধ্যক্ষ জয়দীপ ষড়ঙ্গী ১৪ জুলাই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয় যাতে দীপককে প্র্যাক্টিক্যাল ক্লাস করার অনুমতি দেয়, চিঠিতে সেই আবেদনই জানানো হয়েছে। অধ্যক্ষ শুক্রবার জানান, দীপক আলিপুর টাঁকশাল বিদ্যাপীঠ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছেন। রেজিস্ট্রেশনের জন্য ৩০ জুলাই ছিল প্রথম বর্ষের পড়ুয়াদের তথ্য জমা দেওয়ার শেষ দিন। অন্য পড়ুয়াদের সঙ্গে দীপকের তথ্যও বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠিয়ে দিয়েছে কলেজ। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, অন্যের সহায়তায় দীপককে প্র্যাক্টিক্যাল করতে দেওয়া যাবে কি না, তা নিয়ে কর্তৃপক্ষ এখনও দ্বিধায়। কোনও সিদ্ধান্ত তাঁরা নিয়ে উঠতে পারেননি। কারণ, ‘এক্সপেরিমেন্ট’-এর পাশাপাশি ‘প্রোগ্রাম’ অন্যের সহায়তা নিয়ে লেখা সম্ভব কি না, সেই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেকেই সন্দিহান।
নিউ আলিপুর কলেজের পদার্থবিদ্যার প্রধান ভাস্কর ভট্টাচার্যের প্রশ্ন, ‘‘কত শতাংশ শারীরিক প্রতিবন্ধকতা থাকলে পদার্থবিদ্যা অনার্স পড়া যায়, সেই বিষয়ে কোনও নির্দিষ্ট নির্দেশ আমাদের কাছে নেই। তাই দীপককে নিরুৎসাহ করব কী করে?’’ তিনি জানান, বিশ্ববিদ্যালয় সম্মতি দিলে দীপকের প্র্যাক্টিক্যাল করার সব ব্যবস্থা তাঁরাই করবেন।
দীপক নিয়মিত ক্লাস করছেন। জানালেন, ছোটবেলায় তাঁরা থাকতেন ঝাড়খণ্ডের পলামুতে। চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ার সময় বন্ধুদের সঙ্গে খেলতে গিয়ে হাইটেনশন তার ছুঁয়ে ফেলেছিলেন দীপক। তার জেরে হাত দু’টি বাদ যায়। দীপকের বাবা সত্যেন্দ্রনারায়ণ গাড়ি চালান। মা রামলালি গৃহবধূ। দু’জনেরই পড়াশোনা দশম শ্রেণি পর্যন্ত। সকলেই চান, দীপক আরও অনেক বেশি পড়াশোনা করুন। পদার্থবিদ্যা নিয়ে পড়ে শিক্ষকতা করাই স্বপ্ন দীপকের।
শারীরিক প্রতিবন্ধী কোটায় দীপক অনলাইনে ভর্তি হন নিউ আলিপুর কলেজে। জুলাইয়ের প্রথম দিকে তিনি ক্লাস করতে আসার পরে শিক্ষকেরা বুঝতে পারেন, প্র্যাক্টিক্যাল ক্লাসে তাঁর অসুবিধা হবে। তাই কলেজের পক্ষ থেকে এই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বক্তব্য জানতে চিঠি পাঠানো হয়। ‘‘আমরা চাইছি, দীপক পদার্থবিদ্যা নিয়েই আমাদের কলেজে পড়ুক। আশা করছি, বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে সদর্থক কিছু জানাবেন। শিক্ষা ক্ষেত্রে মানবিক মুখ আমরা উজ্জ্বল করতে পারব,’’ অধ্যক্ষ আশাবাদী।
কী বলছে বিশ্ববিদ্যালয়?
বারবার ফোন এবং মেসেজ করেও বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্ডার গ্র্যাজুয়েট কাউন্সিলের সচিব গুরুপদ সরেনের উত্তর পাওয়া যায়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy