পড়ুয়ারা পাশ করিয়ে দেওয়ার দাবিতে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। নিজস্ব চিত্র
আচমকা সামনে দাঁড়িয়ে ইংরেজিতে ‘আমব্রেলা’ বানান জানতে চাইলে এবং তা বলতে না-পারলে কি শুধু ছাত্রছাত্রীদের দায়ী করা যায়? এই প্রশ্ন তুলছেন স্কুলশিক্ষক ও অভিভাবকদের একাংশ। পাশাপাশি এই প্রশ্নও উঠছে যে, আমব্রেলা বানান না-জানলেও ইংরেজিতে পাশ করিয়ে দেওয়ার দাবিতে বিক্ষোভ দেখানো যায় কি না?
সম্প্রতি একটি ভিডিয়ো ফুটেজ (যার সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার) ভাইরাল হয়। সেখানে দেখা যায়, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় ইংরেজিতে অকৃতকার্য কিছু পড়ুয়া পাশ করিয়ে দেওয়ার দাবিতে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। তাঁদের দাবি, ইংরেজি পরীক্ষা তাঁরা ভালই দিয়েছেন। তখন এক সাংবাদিক ওই আমব্রেলা বানান জিজ্ঞেস করায় এক পড়ুয়া বলেন, ‘AMRELA’।
এই ভিডিয়ো ফুটেজ ভাইরাল হয়ে যাওয়ার পরে অনেকেই প্রশ্ন তোলেন, যাঁরা আমব্রেলা বানান জানেন না, তাঁরা কী ভাবে ইংরেজিতে পাশ করিয়ে দেওয়ার জন্য বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন? এই নিয়ে নেট-দেওয়াল নানা কটাক্ষ ও ব্যঙ্গে ভরে যায়।
শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একাংশের প্রশ্ন, আমব্রেলা বানান না-জানার জন্য কি পুরোপুরি পরীক্ষার্থীদের দায়ী করা উচিত? যাঁরা এ বার উচ্চ মাধ্যমিকে ইংরেজিতে পাশ করেছেন, তাঁদের সকলে আমব্রেলা বানান জানেন কি না, সেই প্রশ্নও তুলেছেন কেউ কেউ।
কয়েক জন শিক্ষকের বক্তব্য, এখন উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় শুধু মাল্টিপ্ল চয়েস কোয়েশ্চেন বা এমসিকিউ এবং শর্ট আনসার কোয়েশ্চেন বা এসএকিউ-এর উত্তর দিয়েই পাশ করা যায়। ইংরেজির ১০০ নম্বরের মধ্যে লিখিত পরীক্ষার জন্য থাকে ৮০, প্রজেক্ট থাকে ২০ নম্বরের। প্রজেক্টে পাশ করতে গেলে ছ’নম্বর পেতে হয়। লিখিত পরীক্ষায় ৮০-র মধ্যে তুলতে হয় ২৪ নম্বর। ইংরেজির নম্বর বিভাজনে এমসিকিউ-এ থাকে ১৫, এসএকিউ-এ ১০ নম্বর। গ্রামারে ১০ নম্বর। বাকি ৪৫ নম্বর থাকে বড় প্রশ্ন এবং ‘আনসিন প্যাসেজ’ থেকে কিছু ছোট প্রশ্নের উত্তর লেখার জন্য।
মিত্র ইনস্টিটিউট ভবানীপুর শাখার প্রধান শিক্ষক রাজা দে বলেন, ‘‘এখন প্রশ্নের ধরন যা, তাতে শুধু এমসিকিউ এবং এসএকিউ-এর উত্তর লিখে এবং আনসিন প্যাসেজের থেকে আসা প্রশ্ন কোনটা ঠিক, কোনটা ভুল (ট্রু-ফলস) লিখেই ছাত্রছাত্রীরা লিখিত পরীক্ষায় পাশ করতে পারে।’’ গত কয়েক বছরে এমসিকিউ, এসএকিউ এবং ট্রু-ফলসের উত্তর লিখেই উচ্চ মাধ্যমিকে বহু পড়ুয়া ইংরেজিতে পাশ করে গিয়েছেন বলে জানান রাজাবাবু।
সাখাওয়াত মেমরিয়াল গার্লস হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষিকা পাপিয়া নাগ মনে করেন, এখন পরীক্ষার যা পদ্ধতি, তাতে এক জন পরীক্ষার্থী কতটা জেনে মাধ্যমিক পাশ করছে, সেই প্রশ্ন থেকেই যায়। সেই সব ছাত্রছাত্রীই পরে বসে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায়। ‘‘প্রশ্নের যা ধরন, তাতে এক শ্রেণির পড়ুয়া কার্যত কিছু না-শিখেই উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে যাচ্ছে। এ বার তো এরা করোনা পরিস্থিতির মধ্যে পরীক্ষা দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট পড়ুয়ার আমব্রেলা বানান না-জানাটা তার নয়, আমাদের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের পক্ষে, সমাজের পক্ষে লজ্জার,’’ বলছেন পাপিয়াদেবী।
পাঠ্যক্রম কমিটির চেয়ারম্যান অভীক মজুমদার বলেন, ‘‘এটি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। তবে দু’বছর অতিমারির জন্য একটা সমস্যা হয়েছিল, এটা মানতেই হবে।’’
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy