যাত্রীদের সুবিধা-অসুবিধার কথা শুনছেন পূর্ব রেলের জেনারেল ম্যানেজার আর কে গুপ্ত। মঙ্গলবার আপ ব্যান্ডেল লোকালে সুদীপ আচার্যের তোলা ছবি।
হাওড়া স্টেশনে ছ’নম্বর প্ল্যাটফর্মের বোর্ড অনেক ক্ষণ ধরেই দেখাচ্ছে, সওয়া ১১টায় ব্যান্ডেল লোকাল ছাড়বে। স্টেশনে পরপর ঢুকছে মেন লাইনের বিভিন্ন লোকাল। যাত্রীর ভিড়ে থিক থিক করছে সব প্ল্যাটফর্ম। তখনই দেখা গেল, সাদা জামা আর কালো প্যান্ট পরা এক ব্যক্তি হনহনিয়ে এগিয়ে চলেছেন। প্রায় ছুটছেন। পিছনে পিছনে তাল রাখতে হিমশিম খাচ্ছেন অনুগামীরা। আরপিএফ-ও।
কে উনি? ছুটছেন কেন? পরীক্ষার তাড়া আছে নাকি? বোঝার চেষ্টা করছিলেন যাত্রীদের অনেকেই। কিন্তু যখন তাঁরা বুঝতে পারলেন, তত ক্ষণে তিনি অ-নে-ক এগিয়ে গিয়েছেন! যাত্রীদের প্রশ্নের জবাবে পিছনে হাঁটা রেলকর্তাদের কেউ কেউ জানান, উনি জেনারেল ম্যানেজার। তবে তাঁরা যাত্রীদের এটা বলেননি যে, এ দিন উনি আসলে পরীক্ষার্থীই।
সাদা জামা, কালো প্যান্ট এর মধ্যে প্ল্যাটফর্মে দাঁড়ানো ব্যান্ডেল লোকালের পিছনের মহিলা কামরায় উঠে পড়েছেন। কিন্তু সেখানে যাত্রী ছিলেন দু’-এক জন। তাই নেমে উঠে পাশের সাধারণ কামরায় উঠলেন পূর্ব রেলের জেনারেল ম্যানেজার আর কে গুপ্ত। দেখাদেখি প্রায় দৌড়ে অন্য কর্তারাও উঠলেন ওই কামরায়। বড় কোনও টিকিটি পরীক্ষকের দল উঠেছে ভেবে টিকিট দেখাতে এগিয়ে যান অনেক যাত্রী। এক অফিসার বললেন, ‘‘টিকিট দেখাতে হবে না। উনি আমাদের জেনারেল ম্যানেজার। আপনারা বলুন, ট্রেনে কী কী অসুবিধা সুবিধা হচ্ছে। পরিষেবা ঠিকমতো পাচ্ছেন কি না।’’
শুরু হয়ে গেল মঙ্গলবারের অভিনব পরীক্ষা। পরীক্ষার্থী-প্রশ্নকর্তা উভয়েই প্রশ্ন করছেন। উত্তরও আসছে দুই তরফ থেকে। যাত্রীরা প্রশ্ন করছেন, এটা নেই, সেটা নেই কেন?
রেলকর্তাদের উত্তর: আমরা চেষ্টা করছি। হবে, সবই হবে।
রেলকর্তারা প্রশ্ন করছেন, কোথায় কোথায় আমাদের ঘাটতি আছে বলে আপনারা মনে করছেন? আপনারা ঠিক কী কী চাইছেন?
যাত্রীরা বলছেন, খামতি তো অনেক জায়গাতেই। আপাতত আর কিছু না-হোক, নির্ধারিত সময়ে ট্রেন চাই। নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছতে চাই। আসলে এগুলোও প্রশ্ন যাত্রীদের। ট্রেন দেরি করে কেন? চলন্ত ট্রেনে, প্ল্যাটফর্মে নিরাপত্তার অভাব কেন?
রেলকর্তাদের জবাবে মিলছে আশ্বাস: মেটানো হবে ট্রেন লেটের সমস্যা। সুরক্ষাও মিলবে সফরে।
নরেন্দ্র মোদীর সরকারের এক বছর উপলক্ষে দেশ জুড়ে ‘রেল উপভোক্তা পক্ষ’ শুরু হয়েছে সোমবার। তারই অঙ্গ হিসেবে যাত্রিসাধারণের প্রশ্নপত্রে পরীক্ষার মুখোমুখি রেল। ঠিক হয়েছে, এই পক্ষে সব জোনের জেনারেল ম্যানেজার থেকে শুরু করে সব স্তরের কর্তারা ট্রেনযাত্রীদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলবেন। বোঝার চেষ্টা করবেন, যাত্রীদের ক্ষোভ কেন। বুঝে নেবেন, পরিষেবার কোন কোন ঘাটতি ও সমস্যার দ্রুত সুরাহা চান তাঁরা।
সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এ দিন পূর্ব রেলের আর কে গুপ্তের মতো অন্য একটি লোকালে ওঠেন দক্ষিণ-পূর্ব রেলের জেনারেল ম্যানেজার রাধেশ্যামও। রেলের তরফে এ দিন পরীক্ষার্থীর ভূমিকায় তাঁরাই। অধিকাংশ যাত্রীই তাঁদের জানান, শিয়ালদহ, হাওড়া বা খড়্গপুর শাখায় কখনওই ঠিক সময়ে ট্রেন চলে না। সময়সারণি মেনে ট্রেন চলুক। যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য আরও আঁটোসাঁটো ব্যবস্থা করুক রেল।
সুব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় নামে এক যাত্রী পূর্ব রেলের কর্তা আর কে গুপ্তকে বললেন, ‘‘প্রথমে সময়মতো ট্রেন চলুক। আর ভাল করে সাফ করা হোক ট্রেনের কামরা ও প্ল্যাটফর্ম। তাতেই আমরা খুশি হব।’’ তাঁর সুরে সুর মেলান অন্য যাত্রীরাও।
দক্ষিণ-পূর্ব রেলের জেনারেল ম্যানেজার রাধেশ্যাম গিয়েছিলেন হাওড়া থেকে সাঁতরাগাছি পর্যন্ত। রাখী বসু, সুতপা রায় নামে দুই যাত্রী তাঁকে বলেন, ‘‘টিকিয়াপাড়া আর সাঁতরাগাছি পেরোনোর আগেই ট্রেন আটকে থাকছে দীর্ঘ ক্ষণ। দেরি হয়ে যাচ্ছে আমাদের।’’ রাজীব সেন বা অর্ণব মাইতিরাও একই অভিযোগ করেন। সকলেরই বক্তব্য, তৃতীয় লাইন করেও লাভ হচ্ছে না যাত্রীদের।
দুই রেলের জেনারেল ম্যানেজারই জানান, যাত্রীদের অভিযোগ খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পূর্ব রেলের জেনারেল ম্যানেজার ব্যান্ডেল স্টেশনে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘‘সময়মতো ট্রেন চালানোর জন্য পদস্থ রেলকর্তারা সকাল-সন্ধ্যা সব ট্রেন ‘মনিটর’ করবেন। রক্ষণাবেক্ষণের উপরেও জোর দেওয়া হচ্ছে।’’ শিয়ালদহে ট্রেনের দেরি নিয়ে বিস্তর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কিছু ট্রেনকে দমদম স্টেশন থেকেই ফিরিয়ে দেওয়া যায় কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলেও জানান তিনি। ব্যান্ডেলের গির্জার অনুকরণে তৈরি ব্যান্ডেল স্টেশনের নতুন ভবনের উদ্বোধন করেন জেনারেল ম্যানেজার।
দক্ষিণ-পূর্ব রেলের জেনারেল ম্যানেজার রাধেশ্যাম জানান, হাওড়ায় ট্রেনের ভিড় বেশি হয়ে গিয়েছে। তাই শালিমার ও সাঁতরাগাছি স্টেশনকে আরও বেশি করে কাজে লাগানো হবে। তাতে দেরি কিছুটা কমবে। ‘‘চতুর্থ লাইনের কাজও শুরু হচ্ছে,’’ আশ্বাস দেন জেনারেল ম্যানেজার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy