জ্যোতি দিগের, বেলুট উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী। বাঁকুড়ার পত্রসায়রে। নিজস্ব চিত্র।
করোনা-সংক্রমণের জন্য যখন স্কুল বন্ধের কথা প্রথম ঘোষণা হল, অস্বীকার করব না, আনন্দই হয়েছিল। ভেবেছিলাম, কয়েকটা দিন ছুটি পাওয়া গেল। কিন্তু স্কুল যে এত দিনের জন্য বন্ধ থাকতে চলেছে, সে জন্য কী-কী সমস্যায় পড়তে হবে— তখন মাথায় আসেনি।
স্কুল থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে খড়ের চাল দেওয়া মাটির বাড়িতে বাবা, মা ও ভাইয়ের সঙ্গে থাকি। বাবা প্রশান্ত দিগের, মা মাধবী দিগের খেতমজুর। তাতেই সংসার ও আমাদের ভাইবোনের পড়াশোনা চলে। লকডাউন শুরুর পরে, গোড়ায় শোনা গেল, আমাদের পড়াশোনা যাতে বন্ধ না হয়ে যায়, সে জন্য টিভিতে ক্লাস নেওয়া হবে। কিন্তু বাড়িতে টিভি নেই। আমাদের বেলুট বাগদিপাড়ায় জনা দু’য়েকের বাড়িতে তা রয়েছে। তাই চিন্তায় পড়েছিলাম।
মাস পেরোলেও স্কুল খুলছিল না। দেশ জুড়ে করোনা-সংক্রমণ বাড়ছে বলে শুনছিলাম। পড়াশোনা কী ভাবে করব, চিন্তা বাড়ছিল। এর মধ্যে জানলাম, মোবাইলে অনলাইন ক্লাস হবে। কিন্তু আমাদের তো বটেই, গোটা পাড়ায় কারও স্মার্ট ফোন নেই। বাবা-মায়ের ক্ষমতা নেই স্মার্ট ফোন কেনার। ফলে, অনলাইন ক্লাসে যোগ দেওয়া হল না আমার, অষ্টম শ্রেণির ছাত্র ভাইয়ের। অন্য পাড়ার বন্ধুদের কাছে শুনতাম, স্কুলের স্যরেরা অনলাইনে পড়াচ্ছেন। মন খারাপ হত।
স্যরেরা জানিয়েছিলেন, কোনও বন্ধুর বাড়িতে গিয়ে তার ফোনে এক সঙ্গে ক্লাস করা যেতে পারে। কিন্তু প্রতিদিন কারও বাড়ি গিয়ে দীর্ঘক্ষণ বসে ক্লাস করতে কুণ্ঠা বোধ হত। শেষে এলাকায় যে সব শিক্ষক আছেন, তাঁদের কাছে গেলাম। অন্য সব বিষয় নিজে একটু বেশি সময় দিয়ে পড়ে নিতে পারলেও, সমস্যা হচ্ছিল অঙ্ক ও ইংরেজি নিয়ে। ওই শিক্ষকদের কাছে সাহায্য পেলাম। বছরখানেক সে ভাবে পড়া চালিয়েছি। গত ফেব্রুয়ারি থেকে কিছু দিনের জন্য নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির ক্লাস চালু হল। ভীষণ খুশি হয়েছিলাম। কিন্তু সংক্রমণ বাড়তে থাকায় ফের ক্লাস বন্ধ হয়ে গেল।
গত দেড় বছরে করোনার ভয় তো ছিলই। কিন্তু তার চেয়েও বেশি ভয় কাজ করেছে পড়াশোনা বন্ধ হওয়া নিয়ে। কোনও পড়শি বলছিলেন, স্কুল আর খুলবে না। মাঠে কাজ করতে যাওয়ার পরামর্শও দিচ্ছিলেন কেউ-কেউ। তবে বাবা-মা মানা করে দেন। আমাদের মতো ছাত্রছাত্রী, যাদের বাড়িতে পড়া দেখিয়ে দেওয়ার কেউ নেই, টিউশনে পড়ার পয়সা নেই, তাদের কাছে স্কুল বড় ভরসা। আবার স্কুল খুলছে শুনে নিশ্চিন্ত হচ্ছি। পড়াশোনা অন্তত বন্ধ হবে না। এখন প্রার্থনা, করোনা সংক্রমণ যেন আর না বাড়ে। আবার যেন স্কুল বন্ধ না হয়!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy