পড়ে আছে আদি দাসের (ইনসেটে) রক্তমাখা চটি। ছবি: রণজিৎ নন্দী
এক জন কোনও ছাড়পত্র ছাড়াই দীপাবলি উপলক্ষে বাজি তৈরি করেন। নাম বিজয় সর্দার। আর এক জনের মূল পেশা মাছ বিক্রি হলেও কালীপুজোয় পাড়ায় বাজির দোকান দেন। তাঁর নাম বরুণ রায়।
আপাতত দু’জনেই গারদে। বেহালার শীলপাড়ায় তুবড়ি ফেটে আদি দাস নামে একটি শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় সেই তুবড়ির প্রস্তুতকারক বিজয় আর তার বিক্রেতা বরুণকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে বেআইনি ভাবে বিস্ফোরক মজুত, বাজি তৈরি এবং তা বিক্রির মামলা করা হয়েছে বলে জানায় পুলিশ।
রবিবার, কালীপুজোর রাতে তুবড়ি ফেটে শীলপাড়ার আদি (৫) ছাড়াও কসবায় দীপনারায়ণ কোলে (৪০) নামে এক যুবক মারা যান। পুলিশি সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাতেই বিষয়টি নিয়ে কলকাতার পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মার সঙ্গে কথা বলেন এবং কোথা থেকে ওই সব বাজি এসেছিল, সেই বিষয়ে সবিস্তার খোঁজখবর নেওয়ার নির্দেশ দেন। লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগের বম্ব স্কোয়াডকে তদন্তভার দেওয়া হতে পারে। বেহালার প্রাথমিক পুলিশি তদন্তে স্পষ্ট, সেখানে ব্যবহৃত বাজি বৈধ কারখানা থেকে আসেনি।
আদি ও দীপনারায়ণ, দু’জনেরই মৃত্যুর ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত এবং ক্ষতিপূরণের দাবি তুলেছে একটি পরিবেশপ্রেমী সংস্থা। তাদের তরফে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের প্রাক্তন মুখ্য আইনি আধিকারিক বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় জানান, সোমবার এই বিষয়ে কলকাতার পুলিশ কমিশনার, দমকল-সচিব, পর্ষদকে চিঠি দিয়েছেন তাঁরা। বেআইনি বাজি কারখানার বিরুদ্ধে সরব হয়েছে ওই সংগঠন।
পর্ষদের তথ্য বলছে, গোটা রাজ্যে লাইসেন্সধারী বাজি কারখানা আছে মাত্র ২৫টি। তার মধ্যে ১০টি রয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনায়— মহেশতলায় একটি, রায়দিঘিতে একটি এবং চম্পাহাটিতে আটটি। বাজির আঁতুড়ঘর বলে পরিচিত দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ওই ১০টি কারখানা ছাড়াও যে-সব বাজি কারখানা রয়েছে, সেগুলি চলছে বৈধ ছাড়পত্র ছাড়াই। বিশ্বজিৎবাবু বলেন, ‘‘আমরা বারবার বলেছি, বেআইনি বাজি কারখানা বন্ধ করতে হবে। ওই সব কারখানা আগেই বন্ধ করে দিলে হয়তো দু’জনের প্রাণ যেত না।’’ তাঁর বক্তব্য, বেআইনি কারখানায় বাজি তৈরির ক্ষেত্রে নিয়মবিধি মানা হয় না। তার ফলে বিপদের আশঙ্কা বাড়ে।
তুবড়ি কেন ফাটল, তা নিয়ে বাজি প্রস্তুতকারকদেরও কেউ কেউ ব্যাখ্যা দিয়েছেন। বাজি প্রস্তুতকারক কানাইলাল সাউ জানাচ্ছেন, অনেক সময় খোলে সামান্য চিড় থাকতে পারে। তা ছাড়া অপটু হাতে খোলে মশলা পুরলে ভিতরে হাওয়া ঢুকে যায়। তাতে তুবড়ি পোড়ানোর সময় বিপদ ঘটতে পারে। মশলার অনুপাতে ভুল হলেও বিপদের আশঙ্কা থাকে। কোনও কোনও বাজি প্রস্তুতকারক জানান, তুবড়ির মশলা ভিজে গেলে ফেটে যেতে পারে। বিশেষ করে তুবড়ির তলায় থাকা মাটি দ্রুত ভিজে ভাব টেনে মশলায় জোলো ভাব ধরিয়ে দেয়। গত কয়েক দিনের বৃষ্টির জেরে সেই বিপত্তি ঘটে থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তাঁরা।
পুলিশ জেনেছে, ঠাকুরমার সঙ্গে বাজি পোড়াতে গিয়েছিল আদি। বড়রাই তুবড়িতে আগুন দিচ্ছিলেন। একটি তুবড়ি ফেটে ভাঙা খোলের অংশ ছিটকে এসে গেঁথে যায় আদির গলায়। কাছেই একটি দোতলা বাড়ির বারান্দায় লাগানো সিসি ক্যামেরার ফুটেজে ধরা পড়েছে সেই ছবি। তা পুলিশকে দিয়েছেন বাড়ির মালিক।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, আদির বাবা কাজল দাসের জামাকাপড়ের ছোট দোকান আছে ডায়মন্ড হারবার রোডে। কাছেই ভাড়ার ঘরে থাকেন। দুর্ঘটনার পরে গাড়ি না-পেয়ে ছেলেকে কোলে নিয়ে ছুটতে থাকেন তিনি। তা দেখে স্থানীয় এক যুবক নিজের মোটরবাইকে তুলে নেন তাঁদের। স্থানীয় বিদ্যাসাগর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কিছু পরেই মারা যায় আদি।
কসবার দুর্ঘটনার প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, দীপনারায়ণবাবু নিজেই তুবড়ি জ্বালাচ্ছিলেন। সেই সময়েই বিপদ ঘটে। ওই তুবড়ি কোথা থেকে এসেছিল, খোঁজ নিচ্ছে পুলিশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy