তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং কেন্দ্রের সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা নিজস্ব চিত্র
চলছিল নারদ মামলার শুনানি। হঠাৎ তারই মধ্যে বাঙালি-অবাঙালি তরজায় জড়িয়ে পড়লেন ২ পক্ষের আইনজীবীরা। অবশেষে পরিস্থিতি সামাল দিতে হস্তক্ষেপ করতে হয় খোদ প্রধান বিচারপতিকে। বুধবার কলকাতা হাই কোর্টে নারদ মামলার শুনানির সময় এমনই ঘটনার সাক্ষী থাকল বিচার কক্ষ।
গত ১৭ মে নারদ-কাণ্ডে রাজ্যের ৪ নেতা-মন্ত্রীকে গ্রেফতার করে সিবিআই। ওই দিন বিকেলে ধৃতরা বিশেষ আদালতে জামিন পেলেও, রাতে হাই কোর্টের নির্দেশে তা স্থগিত হয়ে যায়। এই মামলায় ২টি বিষয়ের উপর জোর দেয় সিবিআই। এক, ধৃতদের জামিন মঞ্জুর না করা। দুই, এই মামলা অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়া। প্রথমটিতে হাই কোর্টে ধাক্কা খেয়েছে সিবিআই। গত সপ্তাহে অন্তর্বর্তী জামিন পেয়েছেন অভিযুক্তরা। তবে দ্বিতীয় বিষয়টি এখনও আদালতের বিচারাধীন রয়েছে। বুধবার কলকাতা হাই কোর্টে ওই বিষয়ের উপরেই শুনানি হয়। সিবিআইয়ের আইনজীবী তথা কেন্দ্রের সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা এই মামলার সঙ্গে প্রভাবশালী সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করতে একাধিক যুক্তি সাজান। নিজাম প্যালেসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ধর্না, কর্মী-সমর্থকদের বিক্ষোভ এবং নিম্ন আদালতে মন্ত্রীদের উপস্থিতি বিচার প্রক্রিয়ার উপর প্রভাব ফেলেছে বলে তিনি দাবি করেন। মঙ্গলবারের মতো বুধবারও সিবিআইয়ের আইনজীবী ব্যাখ্যা দেন, প্রভাবশালীরা গ্রেফতার হলে পশ্চিমবঙ্গে যা হয় অন্য কোনও রাজ্যে তা হয় না। ২০১৯ সালে তৎকালীন পুলিশ সুপার রাজীব কুমারের বাসভবনে সিবিআই হানার প্রতিবাদে মুখ্যমন্ত্রীর ধর্নার প্রসঙ্গও ওঠে।
সিবিআইয়ের আইনজীবীর এই সওয়াল শুনে পাল্টা আক্রমণ করেন অভিযুক্তদের আইনজীবী তথা তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি উত্তেজিত হয়ে সরাসরি মেহতাকে ‘বাংলা বিরোধী’ বলে মন্তব্য করেন। কল্যাণ বলেন, ‘‘মেহতা তাঁর বাঙালি বিরোধী মনোভাব দেখিয়েছেন। বিজেপি নেতারাও এটা করেন। ২০১২ সালে অমিত শাহকে যখন গ্রেফতার করা হয়েছিল, তখন গুজরাতে কী হয়েছিল।’’ তাঁর আরও সংযোজন, ‘‘বাংলার সব কিছু শুধু খারাপ!’’ কল্যাণের ওই মন্তব্যের পাল্টা বিরোধিতা করেন মেহতা। তিনি লঘু চালে প্রথমে বলেন, ‘‘বন্দ্যোপাধ্যায় মহাশয় আপনি খাবার খেয়েছেন?’’ এর পরই কেন্দ্রের সলিসিটর জেনারেল বলেন, ‘‘কল্যাণ আমাকে বাংলা বিরোধী বলেছেন। এটা ইচ্ছাকৃত মন্তব্য। বাংলা দেশের সাংস্কৃতিক রাজধানী। আমি এবং অন্যরাও বাংলা ও বাঙালির প্রশংসা করি। বাংলা বিবেকানন্দ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতো অনেক চিন্তাবিদ ও বুদ্ধিজীবীদের দিয়েছে। আমি শুধু তথ্যের উপর ভিত্তি করে সেদিনের আইন-শৃঙ্খলা নিয়ে কথা বলছি। আমি আদালতের সম্মান নষ্ট করতে চাই না।’’
এর পর কল্যাণ পাল্টা জবাব দিতে গেলে হস্তক্ষেপ করেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দল। তিনি বলেন, ‘‘কোনও ব্যক্তিগত আক্রমণ করবেন না। এই প্ল্যাটফর্মটিকে রাজনৈতিক ভাবে ব্যবহার করা উচিত নয়। এই সব আলোচনা এখানে করবেন না। অন্য কোথাও করুন।’’ প্রধান বিচারপতি বিন্দলের ওই তিরস্কারের পরে বাঙালি-অবাঙালি কোন্দলে ছেদ পড়ে তুষার ও কল্যাণের মধ্যে। শেষে প্রধান বিচারপতির উদ্দেশে কল্যাণ জানান, ‘‘আমরা মামলার বাইরে অনেক কিছু আলোচনা করি।’’
বুধবারও নারদ মামলার রায় দান করেনি হাই কোর্টের ৫ বিচারপতির বৃহত্তর বেঞ্চ। নিম্ন আদালতে রায়ে প্রভাব তৈরি করেছেন প্রভাবশালীরা, এমন প্রমাণও করতে পারেননি মেহতা। কিছুটা পিছু হঠে তিনি বেঞ্চকে বলেন, ‘‘বিচারব্যবস্থাকে বিকৃত করার প্রচেষ্টা হয়েছে, এটা বলতে চাইছি। অভিযুক্ত ৪ জন জামিন পাবেন কি পাবেন না, তা নিয়ে আমি চিন্তিত নই। সাংবিধানিক আদালত কি ওই দিনের গুন্ডামির বিচার করবে না? যদি না হয় তবে সাধারণ মানুষ এবং সমাজকে কী উত্তর দেবে?’’ বৃহস্পতিবার এই মামলার পুনরায় শুনানি রয়েছে। ওই দিন বেলা সাড়ে ১১টা থেকে চলবে ফের শুনানি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy