শহরের একটি বিপণির ট্রায়াল রুম। নিজস্ব চিত্র
বেড়াতে ভালবাসেন সবাই। কোথায় বেড়াতে যাওয়া হবে, কোথায় থাকা হবে— এ নিয়ে পর্যটকদের অনেকেই কার্যত গবেষণা করে থাকেন। কিন্তু তথ্য-প্রযুক্তির যুগ যেন বোঝাতে চাইছে শুধুই বেড়ানোর জায়গা সম্বন্ধে খোঁজ নেওয়াই এখন আর যথেষ্ট নয়। বেড়ানোর জায়গায় বিশেষত হোটেল, লজ কিংবা হোম-স্টে র ঘরে এক জন পর্যটকের গোপনীয়তা বজায় থাকছে কি না, তা নিয়েও তাঁর শিক্ষিত হওয়া প্রয়োজন। ঠিক যে ভাবে শপিং মলের ট্রায়াল রুমে ক্যামেরা রয়েছে কি না, তা নিয়ে এখন খোঁজ নিতে শুরু করেছেন ক্রেতারা।
তারাপীঠে বেড়াতে গিয়ে সেখানে বুধবার একটি আবাসনের ফ্ল্যাটে ভাড়ার বিনিময়ে রাত্রিবাসের পরিকল্পনা করেছিলেন দুই দম্পতি। কলকাতারই বাসিন্দা এক রেলকর্মী ওই ফ্ল্যাটের মালিক। পর্যটকেরাও তার পরিচিত। কিন্তু সেই দম্পতি ‘আবিষ্কার’ করেন যে ফ্ল্যাটে বিভিন্ন জায়গায় বসানো রয়েছে গোপন ক্যামেরা। অলোক দত্ত নামে ওই ফ্ল্যাটের মালিককে গ্রেফতারের পরে পুলিশ জেনেছে যে ওই ব্যক্তি পর্যটকদের তারাপীঠে নিজের ফ্ল্যাটে থাকতে দিত। তার পরে পর্যটকদের ব্যক্তিগত মুহূর্তের ভিডিয়ো পর্ন সাইটে টাকার বিনিময়ে আপলোড করে দিত।
মনোরোগ চিকিৎসক জয়রঞ্জন রাম এই ঘটনাকে ‘ভয়ারিজ়ম’ বলে ব্যাখ্যা করেছেন। তাঁর মতে, ‘‘অন্য কারও ঘনিষ্ঠ মুহূর্ত কিংবা যৌনকর্মে লিপ্ত থাকার দৃশ্য গোপনে প্রত্যক্ষ করে আনন্দ উপভোগ করার এ এক মানসিক বিকার। এটা অপরাধও বটে। নিজে যৌনকর্মে অক্ষম হওয়ার হতাশা থেকে অনেকে এমন ব্যাধিতে আক্রান্ত হন।’’ তারাপীঠের ওই ঘটনায় পুলিশ জেনেছে, অভিযুক্ত অলোক দত্ত শুধুমাত্র পর্যটকদেরই নয়, তার ফ্ল্যাটে আত্মীয়দেরও ব্যক্তিগত মুহূর্তের ছবি গোপন ক্যামেরায় দেখত। ওই সব ছবি পর্ন সাইটে আপলোডের পরিকল্পনা কী ভাবে অভিযুক্তের মাথায় এল, তা নিয়েও তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
কী ভাবে সতর্ক হবেন
ঘর অন্ধকার করুন। গোপন ক্যামেরা
থাকলে আলো জ্বলতে দেখা যাবে।
স্মার্ট ফোনের ফ্ল্যাশ
লাইট জ্বেলে ঘরের দেওয়ালে ছিদ্র আছে কি
না পরীক্ষা করুন।
ঘরের স্মোক ডিটেক্টর, এসি, টেলিভিশন, আলো, ফুলদানি, কফি মেকার পরীক্ষা করে নিন।
ঘর অন্ধকার করে মোবাইল ফোনের ক্যামেরা চালু করুন। সন্দেহজনক বস্তুর হদিস মিলতে পারে।
ঘরের আয়নায় আঙুলের প্রতিচ্ছবি দেখুন। যদি দু’টি আঙুলের মাঝে ফাঁক না চোখে পড়ে তবে আয়না পরীক্ষা করুন।
ইদানীং হোটেলের পাশাপাশি হোম-স্টের চল হয়েছে। কোনও ব্যক্তিগত মালিকানার বাড়িই হোম-স্টে হিসেবে ব্যবহার হয়। সব সময়ে পর্যটকের সঙ্গে হোম-স্টের মালিকের পূর্ব-পরিচিতি থাকে না। এমন ঘটনা ঘটলে তার মধ্যে দিয়ে এক পক্ষের প্রতি অন্য পক্ষের আস্থা কিংবা বিশ্বাস হারানোর সম্ভাবনা থাকে বলেই মনে করছেন মনোরোগ চিকিৎসকেরা। তাঁদের মতে, এমন ঘটনা সাধারণের মধ্যে ভয়ের সৃষ্টি করে। সেখান থেকেই অবিশ্বাস তৈরি হয়। সুস্থ সমাজে এমনটা কাঙ্ক্ষিত নয়। তাঁরা জানান, পর্যটকেরা বেড়াতে গিয়ে হোটেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ সব নিয়ে কড়া মনোভাব দেখিয়ে যেন কথা বলেন।
চার বছর আগে এমন ভাবেই গোপন ক্যামেরার খপ্পর থেকে কোনও ভাবে বেঁচেছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি। একটি জামা-কাপড়ের বিপণির ট্রায়াল রুমে ঢুকে স্মৃতি হাতেনাতে গোপন ক্যামেরা চিহ্নিত করেছিলেন। সেই ঘটনা হইচই ফেলেছিল সব মহলেই। সাইবার বিশেষজ্ঞ তথা আইনজীবী বিভাস চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘এমন ঘটনা আকছার ঘটছে। ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের দৃশ্য গোপন ক্যামেরায় বন্দি করে তা পর্ন সাইটে আপলোড করার একাধিক মামলা সম্প্রতি নজরে এসেছে। তাই পর্যটকদেরও উচিত এমন ঘটনা সম্পর্কে সতর্ক থাকা।’’ বিভাসবাবু জানান, গোপনীয়তার আইনে এই ধরনের মামলায় কঠোর সাজার ব্যবস্থা রয়েছে।
কিন্তু তথ্য-প্রযুক্তি নির্ভর এই ধরনের অপরাধের সঙ্গে এক জন সাধারণ মানুষের মোকাবিলা করা কতটা সম্ভব?
সাইবার বিশেষজ্ঞেরা অবশ্য সেই সমস্যার কথা স্বীকার করেছেন। তবে তাঁরা জানাচ্ছেন, এ ক্ষেত্রে একটু চোখ-কান খোলা রেখে চলতে হবে। সেই সঙ্গে কিছু কিছু সাবধানতা অবলম্বন করার প্রয়োজন রয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy