তখন: স্বামী অমর্ত্য সেনের সঙ্গে নবনীতা দেবসেন। ফাইল চিত্র
কলমটা হাতে তুলে নিলাম শেষ পর্যন্ত।
গত কয়েক দিন ধরে প্রদীপের যে শিখা ঝড়বাতাসের সঙ্গে লড়াই করে যাচ্ছিল, সে কি সত্যিই নিভেছে? না নেভেনি তো! ওই তো বসে আমাদের দিকে তাকিয়ে হাসছে, বলছে, সে কী! তুই লিখবি না কিছু? তুইও পারলি না?
সরস্বতী পুজোর দিন সকালে পিঠে এলোচুল ছড়িয়ে কোলে ‘সঞ্চয়িতা’ নিয়ে পড়েছিলেন ‘পুরস্কার’। এটাই ওঁর পুজোর মন্ত্র। আমি বলেছিলাম, আপনিই আমাদের মগ্ন সরস্বতী! খুব হাসছিলেন। ‘‘তোর মাটিতে বসতে কষ্ট হয়, এই দেখ আমি কেমন পারি! নিয়মিত যোগাসন করি তো!’’
শরীরের অযত্ন করি না। কিন্তু শরীর তার জায়গায় থাকবে, বুঝলি! তার চেয়ে একটুও বেশি এগোতে দেওয়া যাবে না।
এত স্নেহ, এত মায়া, একটা কবিতা পড়ে শোনালে উচ্ছ্বাস, একটা নতুন বই উপহার দিয়ে সারা বাড়ি আহ্লাদে মাথায় করে তোলা— নবনীতাদিকে আনন্দ দেওয়ার একটাই রাস্তা— গিয়ে জানিয়ে আসা, কী লিখছি, কী নিয়ে ভাবছি— সারা জীবন তো ঘুরে বেড়ালি, কলকাতা, দিল্লি, জঙ্গল-পাহাড়— এ বার একটু চুপ করে বোস। আর শোন, মন দিয়ে, পুরো মনটা দিয়ে লিখবি, অন্য কোনও কথা ভাববি না!
কেবল আমার জন্য নয়, বাংলা লেখিকাদের জন্য যে প্ল্যাটফর্ম যত্নে, আদরে, নিজের বাড়িতে সকলকে আপ্যায়ন করে দু’দশক ধরে গড়ে তুলেছিলেন তিলে তিলে, সেই ‘সই’-এর সব সদস্য, পুরনো, নতুনদের এই কথাই বলতেন। এটা আমাদের আত্মপ্রকাশের নিশ্চিন্ত জায়গা। বই পড়, কথা বল, লেখ, ভাবনা বিনিময় কর।
অসামান্য প্রতিভা, দুরন্ত মেধা, প্রতি অক্ষরে ফুটে ওঠা শিল্পের নির্জন আত্মপ্রত্যয়! তুমি নিজেকে জড়িয়ে নিয়েছিলে সাহিত্যের সকল অভিব্যক্তিতে, এ যেমন বিস্ময়; তরুণ লেখকদের জন্য তোমার সতত স্নেহ, ভাল লেখার প্রতি নিঃস্বার্থ আবেগ— এও তেমন বিস্ময়কর সত্য। ৩০ নভেম্বর ‘সই’-এর একুশে পা অনুষ্ঠান। তার প্রস্তুতি চলছে। Writing in the Time of Siege— তুমি বলেছিলে এ বারের বিষয়। আমি বলেছিলাম, বাংলায়, ‘অবরুদ্ধ সময়ের লেখা।’
শরীর আপনার ভাল নেই! এ বার না করলে হয় না অনুষ্ঠান?
না রে, আমার হয়তো যাওয়া হবে না। বড় করে না পার, ছোট করে শ্রদ্ধার সঙ্গে অনুষ্ঠান কোরো।
অবরুদ্ধ সময় আমাদের ঘিরে রইল, সাথী, তুমি সঙ্গে থাকবে না?
না, আমি তোমার প্রবল থাকাতেই বিশ্বাস করি। জানি, তুমি আমাদের ছেড়ে যেতে পার না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy