বেলপাহাড়ির সভায় সেই আদিবাসী নেতার ভিডিয়োগ্রাফ।
পুলিশি সন্ত্রাস বিরোধী জনগণের কমিটি গড়ে এক সময় আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল জঙ্গলমহলে। ক্রমে তা মোড় নিয়েছিল রক্তক্ষয়ী মাওবাদী নাশকতায়।
সেই জঙ্গলমহলের প্রাণকেন্দ্র ঝাড়গ্রাম জেলার বেলপাহাড়িতে আদিবাসী সংগঠনের একটি সভায় ফের পুলিশের বিরুদ্ধে সুর চড়ালেন এক নেতা। আদিবাসীদের গায়ে হাত পড়লে পুলিশকে বোমা মারার, পেট্রল ঢেলে জ্বালিয়ে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিলেন। ডাক দিলেন ‘দ্বিতীয় হুল’ বা সশস্ত্র সংগ্রামের।
ওই গরম-বক্তৃতার ভিডিয়ো (সত্যতা আনন্দবাজার যাচাই করেনি) হাতে পেয়েছে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ। মনে করা হচ্ছে, বক্তা আদিবাসী সংগঠন ‘ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহলে’র ঝাড়গ্রাম তল্লাটের ‘গডেৎ’ অর্থাৎ মহকুমা স্তরের আহ্বায়ক পালহান সরেন। কণ্ঠস্বর পালহানের কি না, তা নিশ্চিত করা হচ্ছে। পালহান অবশ্য মানছেন, বক্তা তিনিই।
পুলিশের দাবি, গত ৩০ জুন, হুল দিবসের সন্ধ্যায় বেলপাহাড়ি থানার বাঁশপাহাড়ি পঞ্চায়েতের চাকাডোবায় ওই সভায় অভিযোগ তোলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো সত্ত্বেও আদিবাসীরা বঞ্চিত। অধিকার আদায়েই অবিলম্বে পঞ্চম তফসিল কার্যকরের দাবিতে জঙ্গলমহলে দ্বিতীয় হুল বিদ্রোহের ডাক দেওয়া হয়। ভিডিয়োয় দেখা যাচ্ছে, আবছা অন্ধকারে পুলিশকে নিশানা করে ওই নেতা বলছেন, ‘‘আদিবাসীদের উপর অত্যাচার হলে অস্ত্র তৈরি করতে পারি, চালাতেও পারি। মাওবাদী-জনসাধারণ কমিটিকে তাড়িয়েছি। রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে তাড়াতেও সময় লাগবে না।’’ পুলিশ-প্রশাসনকে আলোচনায় বসার বার্তাও দেওয়া হয়েছে।
প্রশ্ন তোলা হয়েছে জনসাধারণের কমিটির প্রাক্তন নেতা ছত্রধর মাহাতোর এলাকায় ফেরা নিয়ে। সঙ্গে হুঁশিয়ারি, ‘‘পিছন থেকে ছুরি মারলে বুঝিয়ে দেব।’’
আরও পড়ুন: ফের আক্রান্ত চিকিৎসক, এ বার কোপ রেডিয়েশনে
রবিবার পালহান বলেন, ‘‘বাঁচার স্বার্থে ওই কথা বলা হয়েছে। পুলিশ কি গ্রামে অস্ত্র ছাড়া সমস্যা মেটাতে যাবে। তাই রুখে দাঁড়াতে যা প্রয়োজন আদিবাসী সমাজ করবে।’’ কিষেনজি-ছত্রধরের জন্য অনেক আদিবাসী প্রাণ হারিয়েছেন দাবি করে পালহান জুড়ছেন, ‘‘সরকার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ছত্রধরকে ফিরিয়ে এনেছে। তাই তীব্র প্রতিবাদ হবে।’’ পারগানা মহলের উপদেষ্টা শিবশঙ্কর সরেন বলছেন, ‘‘সশস্ত্র সংগ্রামের কথা যদি কেউ বলে থাকেন, দীর্ঘ বঞ্চনার প্রেক্ষিতেই বলেছেন।’’
সংগঠনের নেতা রবিন টুডুর স্ত্রী বিরবাহা সরেনকে গত লোকসভায় ঝাড়গ্রাম আসনে তৃণমূল প্রার্থী করার পরই পারগানা মহলে চিড় ধরে। পুলিশ সূত্রে খবর, রবিনের বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর লোকজনই সে দিন চাকাডোবায় সভা করেছেন। বিরবাহা এখন জেলা তৃণমূলের সভানেত্রী। রবিন তৃণমূলের এসটি সেলের রাজ্যের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা। রবিন বলেন, ‘‘যাঁরা এ সব বলছেন তাঁরা ধ্বংসাত্মক কোনও সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে বলছেন। আদিবাসীরা যতক্ষণ আদিবাসী থাকেন তাঁরা সন্ত্রাসকে প্রশ্রয় দেন না।’’ আর ছত্রধরের বক্তব্য, ‘‘আদালতের নির্দেশে জেলমুক্ত হয়ে ফিরেছি। সংবিধান প্রত্যেককে স্বাধীনভাবে চলাফেরার অধিকার দিয়েছে।’’
বিরবাহা দায় ঠেলছেন বিজেপির দিকে। তিনি বলেন, ‘‘পঞ্চম তফসিল কেন্দ্রের এক্তিয়ারভুক্ত। ঝাড়গ্রামের সাংসদ কেন বিষয়টি লোকসভায় তুলছেন না?’’ তৃণমূলের একাংশ পালহানের সঙ্গে বিজেপি সাংসদ কুনার হেমব্রমের ঘনিষ্ঠতারও দাবি তুলেছে। কুনার বলেন, ‘‘পালহানের একটি গাড়ি ভাড়ায় চড়ি। এতেও জুজু দেখছে তৃণমূল।’’ আর পঞ্চম তফসিল কার্যকর করার ক্ষেত্রে রাজ্যের সদর্থক ভূমিকা নেই বলে তাঁর অভিযোগ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy