এই ধরনের খবরের ক্ষেত্রে আসল ছবি প্রকাশে আইনি নিষেধাজ্ঞা থাকে। —প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।
আরজি কর-কাণ্ডের আবহে দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগরে নাবালিকাকে ধর্ষণ-খুনের ঘটনায় দু’মাসের মধ্যেই বিচার প্রক্রিয়া শেষ করে দোষীকে ফাঁসির সাজা কয়েক দিন আগেই শুনিয়েছিল বারুইপুর আদালত। আরজি করের মামলা (সিবিআই তদন্ত করছে) যেখানে এখনও বিচারাধীন, সেখানে রাজ্য পুলিশের দ্রুত তদন্তের ফলে জয়নগরকাণ্ডের বিচার মাত্র দু’মাসে হওয়ায় ‘সন্তুষ্ট’ হয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্য পুলিশও নিজেদের ‘সাফল্য’ জনসমক্ষে তুলে ধরেছিল। একই চিত্র দেখা গেল মুর্শিদাবাদের ফরাক্কাকাণ্ডেও। কারণ, সেখানে শিশুকে গণধর্ষণ-খুনের ঘটনার বিচার এল মাত্র দু’মাসের মধ্যে। বৃহস্পতিবার দুই অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করেছে জঙ্গিপুর ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট। শুক্রবার সাজা ঘোষণা। ঘটনাচক্রে, ফরাক্কার ঘটনাও ঘটেছিল আরজি কর আন্দোলনের আবহে, গত অক্টোবর মাসেই।
জয়নগরকাণ্ডে দোষীর ফাঁসির সাজা হওয়ার অনতিবিলম্বে এক্স হ্যান্ডলে বিষয়টি পোস্ট করে জানিয়েছিল রাজ্য পুলিশ। পোস্টটির শুরুতেই লেখা ছিল— ‘ব্রেকিং নিউজ়’। ফরাক্কাকাণ্ডের ক্ষেত্রে তার অন্যথা হল না। এ ক্ষেত্রেও ‘ব্রেকিং নিউজ়’ লিখেই ফরাক্কার ঘটনায় দু’জনের দোষী সাব্যস্ত হওয়ার বিষয়টি এক্স হ্যান্ডলে জানিয়েছে পুলিশ। তারা লিখেছে, ‘‘দুই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে যাবতীয় তথ্যপ্রমাণ একত্রিত করে মাত্র ২১ দিনের মধ্যে আদালতে জমা পড়ে চার্জশিট। হ্যাঁ, মাত্র ২১ দিনের মধ্যেই। অক্লান্ত পরিশ্রমের ফল মিলেছে। ঘটনার ঠিক ৬০ দিনের মাথায় বিচারক দুই অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করেছেন। মাত্র দুই মাসের মধ্যে তদন্ত এবং বিচার সম্পূর্ণ। সাজা ঘোষণা কাল।’’ শেষে লেখা ‘জাস্টিস ফর ফরাক্কা’! দু’মাসের মধ্যে বিচার শেষ হওয়ার প্রসঙ্গ বার বার টেনে রাজ্য পুলিশ আসলে সিবিআই তদন্তকেই ‘খোঁচা’ দিচ্ছে বলে মনে করছেন অনেকে।
গত বিজয়া দশমীর সকালে দাদুর বাড়িতে ঘুরতে এসে খুন হয়েছিল ওই শিশু। এক প্রতিবেশীর বাড়ি থেকে তার বস্তাবন্দি দেহ উদ্ধার হয়েছিল। বাচ্চাটিকে বাড়িতে ডেকে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে বলে সেই সময় অভিযোগ তুলেছিল পরিবার। তদন্তে নেমে স্থানীয় মাছ ব্যবসায়ী দীনবন্ধু হালদার এবং তাঁর বন্ধু শুভজিৎ হালদারকে গ্রেফতার করে পুলিশ। জেরায় ধৃতেরা জানিয়েছিলেন, ফুল দেওয়ার নাম করে নাবালিকাকে নিজের ঘরে নিয়ে গিয়েছিলেন দীনবন্ধু। সেখানে তিনি এবং শুভজিৎ মিলে নাবালিকার উপর যৌন নির্যাতন চালান। পরে তাকে শ্বাসরোধ করে খুন করেন।
পুলিশ সূত্রে খবর, ময়নাতদন্তের রিপোর্টে ধর্ষণের ইঙ্গিত মিলেছিল। পাশাপাশি, নির্যাতিতার শরীরের একাধিক জায়গায় আঘাতের চিহ্নও পাওয়া গিয়েছিল। ময়নাতদন্তে দেখা গিয়েছে, মেঝেতে মাথা থেঁতলে খুন করা হয়েছিল নির্যাতিতাকে। তার গলার হাড়ও ভেঙে গিয়েছিল। তদন্তকারীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, নাবালিকাকে খুনে ব্যবহৃত কাপড়ের টুকরো, তার পরনের রক্তমাখা পোশাক ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছিল। ঘটনাস্থল থেকে সংগ্রহ করা হয়েছিল হাতের ছাপ। দীনবন্ধুর বাড়ির কলপাড়ে দু’টি সিগারেটের অবশিষ্টাংশ উদ্ধার করেছিলেন তদন্তকারীরা। ফরেনসিক পরীক্ষায় দেখা গিয়েছিল, ওই সিগারেট দু’টিতে গাঁজা ভরে খেয়েছিলেন দুই অভিযুক্ত। ওই সিগারেটের নমুনার সঙ্গে নাবালিকার পোশাকে লেগে থাকা বীর্যের নমুনা মিলে গিয়েছিল। গণধর্ষণের ক্ষেত্রে যা গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হিসাবে আদালতে গ্রহণযোগ্য হয়।
জয়নগরের মতো ফরাক্কার ঘটনাতেও সরকার পক্ষের বিশেষ আইনজীবী ছিলেন বিভাস চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘৬০ দিনের বিচার প্রক্রিয়া শেষ হওয়া নিঃসন্দেহে অন্য নজির। গর্ভবতী এক মহিলা অভিযুক্তের বাড়ির আলনার তলা থেকে নির্যাতিতার দেহ উদ্ধার করেছিলেন। উনি অত্যন্ত সাহসের সঙ্গে এই মামলার সাক্ষ্য দিয়েছেন। প্রথম বারের মতো ড্রোন ম্যাপিং ব্যবহার করা হয় এই মামলায়। ফরেনসিক পরীক্ষার মাধ্যমে নাবালিকার ডিএনএ ম্যাচ করানো হয়। কাপড়ের খণ্ডে এক অভিযুক্তের বীর্য ও নাবালিকার রক্ত পাওয়া যায়। ধৃতদের বিরুদ্ধে সমস্ত অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে আমরা দোষীদের মৃত্যুদণ্ডের ব্যাপারে আশাবাদী।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy