Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪
Citizenship (Amendment) Act

রাজ্য জুড়ে অশান্তি, ট্রেনে-বাসে যথেচ্ছ আগুন-ভাঙচুর-অবরোধ

শনিবার বিকেল থেকে নতুন করে অবরোধ শুরু হয় দক্ষিণ-পূর্ব রেলের সাঁতরাগাছিতে। তবে, সবচেয়ে খারাপ চেহারা নেয় মুর্শিদাবাদ জেলা।

কৃষ্ণপুরে জ্বলছে ট্রেন।

কৃষ্ণপুরে জ্বলছে ট্রেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০১৯ ১৯:৫৭
Share: Save:

গোটা দিন জুড়ে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ চলছিল। রেল অবরোধের সঙ্গে রাস্তা রোকো, ইট-পাটকেল ছোড়ার পাশাপাশি কয়েক জায়গায় বাসে আগুন লাগানোর ঘটনাও ঘটেছে।

শনিবার বিকেল থেকে নতুন করে অবরোধ শুরু হয় দক্ষিণ-পূর্ব রেলের সাঁতরাগাছিতে। তবে, সবচেয়ে খারাপ চেহারা নেয় মুর্শিদাবাদ জেলা। পূর্ব রেলের লালগোলা এবং কৃষ্ণপুর স্টেশনে জ্বালিয়ে দেওয়া হয় একাধিক ট্রেন। আগুন লাগানো হয় লালগোলা স্টেশনে। একই সঙ্গে সুতিতে বাস পুড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি সামশেরগঞ্জ থানায় হামলা চালানো হয়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আইনভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপের হুঁশিয়ারি দিলেও গোটা পরিস্থিতিকে প্রশাসনের ব্যর্থতা হিসেবেই দেখছে রাজ্যের বিরোধী শিবির।

এ দিন বিকেলে লালগোলার আগের স্টেশন কৃষ্ণপুরে থামিয়ে দেওয়া হয় একটি ট্রেনকে। যাত্রীদের নামিয়ে দিয়ে সেই ট্রেনে আগুন লাগিয়ে দেন বিক্ষোভকারীরা। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একটি ফাঁকা ট্রেনও জ্বলতে দেখা যায়। লালগোলা স্টেশনে আগুন লাগানো হয় রেলের সম্পত্তিতে। পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক নিখিল চক্রবর্তী জানিয়েছেন, সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত কৃষ্ণপুরে দাঁড়িয়ে থাকা ৫টি রেকে আগুন লাগানো হয়েছে। এ ছাড়াও লালগোলা এবং কৃষ্ণপুর স্টেশনেও আগুন লাগানো হয় বলে জানিয়েছেন তিনি।

সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে দফায় দফায় বিক্ষোভ, রেল-সড়ক অবরোধ চলছিল এ দিন সকাল থেকে। ওই আইনের প্রতিবাদে শুক্রবার থেকেই রাজ্যে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। গত কাল দুপুর থেকে অশান্ত হয়ে উঠেছিল হাওড়ার উলুবেড়িয়া, মুর্শিদাবাদের বেলডাঙা-সহ রাজ্যের বেশ কিছু অঞ্চল। বিক্ষোভের আঁচ পড়ে খাস কলকাতাতেও। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন বার্তা দিয়েছেন, কেউ যেন আইন নিজের হাতে না তুলে নেন। সে ক্ষেত্রে প্রশাসন কড়া ব্যবস্থা নেবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। ‘অরাজকতা’ বন্ধ করার কথা বলছেন রাজ্যের মন্ত্রীরাও। রাজ্যপালকেও বলতে শোনা গিয়েছে, আইন মেনে চলার বার্তা দিতে।

বিরোধীরা যদিও গোটা ঘটনায় প্রশাসনের ব্যর্থতাকে তুলে ধরছে। রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষের দাবি, ভোটব্যাঙ্ক ধরে রাখতেই তৃণমূল সরকার বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না। বিজেপি নেতা রাহুল সিংহ জানিয়েছেন, তাঁরা রাজ্যে ৩৫৬ ধারা প্রয়োগের বিরুদ্ধে। কিন্তু পরিস্থিতি যে দিকে যাচ্ছে তাতে, কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে ৩৫৬ ধারা প্রয়োগ করা ছাড়া কোনও উপায় থাকবে না বলেই দাবি করেছেন তিনি।

এ দিন সকাল থেকে হাওড়ার ডোমজুড়ের সলপ মোড়ে ৬ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ চলে। কোনা এক্সপ্রেসওয়েতে টায়ার জ্বালিয়ে দেখানো হয় প্রতিবাদ। বেশ কয়েকটি সরকারি বাসে ভাঙচুর চালানোর অভিযোগ উঠেছে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে। বিক্ষোভকারীদের হঠাতে গেলে পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর ছোড়া হয় বলে অভিযোগ। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পাল্টা লাঠিচার্জও করতে হয় পুলিশকে। অন্য দিকে, মুর্শিদাবাদের সুতিতে তিনটি বাসে আগুন ধরিয়ে দেন বিক্ষোভকারীরা।

একই সঙ্গে দক্ষিণ-পূর্ব এবং পূর্ব রেলের বিভিন্ন স্টেশনে ট্রেন অবরোধ করা হয়। শিয়ালদহ ডিভিশনের বারাসত-হাসনাবাদ শাখায় বিক্ষোভের জেরে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায় সকাল সাড়ে ৬টা থেকে। হাসনাবাদ শাখার সোঁদালিয়া-লেবুতলা স্টেশনের মাঝে অবরোধ করা হয়। শিয়ালহদ দক্ষিণ শাখার লক্ষ্মীকান্তপুর-নামখানা লাইনে রেলের ওভারহেড তারে কলাপাতা ফেলে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে। সকাল ৮টা থেকেই ওই শাখায় ট্রেন চলাচল বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। মালদহ ডিভিশনের আজিমগঞ্জ শাখাতেও বিক্ষোভের জেরে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বিভিন্ন স্টেশনে আটকে পড়ে বহু ট্রেন। যাত্রীদের হয়রানির শিকার হতে হয়। বাতিল করা হয় একাধিক দূরপাল্লার ট্রেন। কিছু ট্রেন অল্প দূরত্বে চালানো হয়। আজিমগঞ্জ শাখার বাসুদেবপুরে হল্ট স্টেশনে আগুন ধরিয়ে দেন বিক্ষোভকারীরা। খড়্গপুর শাখার সাঁকরাইল স্টেশনে বিক্ষোভকারীরা ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেন।

শুক্রবার উলুবেড়িয়া স্টেশনে ব্যাপক ভাঙচুর চালান বিক্ষোভকারীরা। লণ্ডভণ্ড করে দেওয়া হয়ে গোটা স্টেশন চত্বর। টিকিট কাউন্টার বন্ধ থাকায় এ দিন চরম অসুবিধায় পড়েন সাধারণ ও নিত্যযাত্রীরা। অস্থায়ী টিকিট কাউন্টার খুলে সাময়িক ভাবে টিকিট দেওয়ার কাজ চালানো হয় বলে দক্ষিণ-পূর্ব রেল সূত্রে খবর। বীরভূমের মুরারইতে রেল অবরোধের জেরে ডাউন শতাব্দী এক্সপ্রেস বাঁশলই স্টেশনে আটকে পড়ে। এরই সঙ্গে মুর্শিদাবাদের রঘুনাথগঞ্জে তিন ঘণ্টা ধরে অবরোধ চালানো হয়। সাগরগিঘির পোড়াডাঙা স্টেশনে ৪ ঘণ্টা ধরে অবরোধ চলে। পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতার দু’টি জায়গায় দেড় ঘণ্টা ধরে অবরোধ করেন বিক্ষোভকারীরা। উত্তর ২৪ পরগনার আমডাঙায় ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করা হয়।

অন্য বিষয়গুলি:

Citizenship (Amendment) Act West Bengal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy