Advertisement
২০ নভেম্বর ২০২৪

ব্রেক বিভ্রাটেই বাফার-বিহীন প্ল্যাটফর্মে ধাক্কা

নিয়ম অনুযায়ী দুর্ঘটনাগ্রস্ত সোনারপুর লোকালকে নারকেলডাঙা কারশেডে নিয়ে গিয়ে পরীক্ষা করা হয়েছিল। রেলের এক অফিসার বলেন, ‘‘বুধবার রাতেই সেই পরীক্ষার ফল জানা যায়। তাতে বলা হয়েছে, ব্রেক ঠিক ছিল না।’’

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ জুলাই ২০১৭ ০৪:১৮
Share: Save:

দুর্ঘটনার পরে নিয়ম মেনে তাঁকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। কিন্তু বুধবার শিয়ালদহ স্টেশনে বাফার-বিহীন প্ল্যাটফর্মে সোনারপুর লোকালের ধাক্কা মারার ঘটনায় ট্রেনচালকের বিশেষ কোনও গাফিলতির প্রমাণ মেলেনি। ট্রেনের যান্ত্রিক ত্রুটিতেই ওই দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিক তদন্তের পরে মনে করছেন রেলকর্তারা।

কী সেই যান্ত্রিক ত্রুটি?

এক কথায় সেটা হচ্ছে ব্রেক-বিভ্রাট। রেলকর্তাদের একাংশের বক্তব্য, প্রান্তিক স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে ট্রেনের গতিবেগের ঝক্কি ও ঝাঁকুনি সামলানোর জন্য যে-স্প্রিংওয়ালা বাফার থাকে, শিয়ালদহের ওই প্ল্যাটফর্মে তা ছিল না। তবে সেটা পরের ব্যাপার। যন্ত্র-বিভ্রাট ঘটে গিয়েছিল তার অনেক আগেই। সেটা হল ব্রেক কাজ না-করা। ট্রেন দাঁড় করানোর জন্য ইএমইউ রেকে ‘ইলেক্ট্রো-নিউম্যাটিক ব্রেক’ ব্যবহার করা হয়। বুধবার সকালে শিয়ালদহে ১৩ নম্বর প্ল্যাটফর্মে ঢোকার পরে সোনারপুর লোকালের সেই ব্রেক কাজ করেনি। তাই নির্দিষ্ট জায়গায় না-থেমে ট্রেনটি সোজা গিয়ে ধাক্কা মারে বাফার-বিহীন প্ল্যাটফর্মে। ব্রেকের ত্রুটি ঢেকে দিতে পারত জোড়া বাফারের স্প্রিং। কিন্তু বাফারই না-থাকায় সেটা সম্ভব হয়নি। দুর্ঘটনার পরেই ওই ট্রেনের চালককে এক দফা জিজ্ঞাসাবাদ করেন রেলকর্তারা। ব্রেক যে কাজ করেনি, চালক তখনই তা জানিয়েছিলেন।

নিয়ম অনুযায়ী দুর্ঘটনাগ্রস্ত সোনারপুর লোকালকে নারকেলডাঙা কারশেডে নিয়ে গিয়ে পরীক্ষা করা হয়েছিল। রেলের এক অফিসার বলেন, ‘‘বুধবার রাতেই সেই পরীক্ষার ফল জানা যায়। তাতে বলা হয়েছে, ব্রেক ঠিক ছিল না।’’

রেল সূত্রে বলা হয়েছে, ট্রেনের গতি রেকর্ড করার জন্য একটি মাইক্রোচিপ বসানো থাকে। সেটিকে সফটঅয়্যারের মাধ্যমে বিশ্লেষণ করলেই গোটা যাত্রাপথে ট্রেনের গতি কোথায় কেমন ছিল, তা বোঝা যায়। সেই পরীক্ষাতেও কিন্তু চালকের কোনও ত্রুটি ধরা পড়েনি। দুর্ঘটনার পরেই ওই লোকালের চালককে বি আর সিংহ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেখানে ডাক্তারি পরীক্ষায় তাঁর কোনও রকম অসুস্থতা ধরা পড়েনি। তিনি নেশাগ্রস্ত ছিলেন, এমন কোনও প্রমাণও মেলেনি।

রেলকর্তাদের একাংশ বলছেন, ইলেক্ট্রো ব্রেক ছাড়াও ট্রেনে আরও একটা ইমার্জেন্সি ব্রেক থাকে। কিন্তু বুধবার চালক সেই ব্রেক চাপার আগেই ট্রেনের চাকা অনেকটা গড়িয়ে গিয়েছিল বলে জানান তদন্তকারীরা। ব্রেকের যখন এই অবস্থা, ঠিকমতো তা পরীক্ষা না-করে কেন ট্রেনটি চালানোর অনুমতি দেওয়া হয়েছিল, সেটাও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

শিয়ালদহ ডিভিশনে ট্রেনের রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে রেলের অন্দরেই প্রশ্ন রয়েছে। রেল বোর্ডের চেয়ারম্যান সম্প্রতি কলকাতায় এসে নজরদারি ও তত্ত্বাবধানে জোর দিতে বলেছিলেন। তা সত্ত্বেও রক্ষণাবেক্ষণে ঘাটতি কেন, দুর্ঘটনাগ্রস্ত ট্রেনের ব্রেক-বিভ্রাট স্পষ্ট হয়ে যাওয়ার পরে সেই প্রশ্ন আরও জোরালো হল বলে মনে করছেন রেলকর্মীদের একটি বড় অংশ। এর পরেও রক্ষণাবেক্ষণ ও যাত্রী-সুরক্ষা নিয়ে রেলকর্তাদের টনক নড়বে কি না, সেই প্রশ্ন তুলেছেন নিত্যযাত্রীরা।

রক্ষণাবেক্ষণ ও নজরদারিতে বিচ্যুতির সূত্রেই প্রশ্ন উঠেছে, যেখানে দুর্ঘটনা ঘটেছে, শিয়ালদহের সেই ১৩ নম্বর প্ল্যাটফর্মে নিয়মমাফিক বাফার ছিল না কেন? রেলের একটি সূত্রে জানানো হয়, মেরামতির জন্য ওই বাফার খোলা হয়েছিল, কিন্তু বিকল্প বাফার লাগানো হয়নি। রেলের কিছু কর্মী-অফিসারের বক্তব্য, বাফার থাকলে সে-ই ব্রেক-বিভ্রাটের ধাক্কা বুক পেতে নিতে পারত।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy