কালান্তক কালবৈশাখী নয়। বৈশাখী ঝড়ের সামান্য একটু ঝাপটা। তাতেই বিপর্যস্ত হয়ে গেল শিয়ালদহ বিভাগের রেল। গাছের ডাল ভেঙে ওভারহেড তার ছিঁড়ে যাওয়ায় বুধবার কার্যত সারা রাতই ট্রেন বন্ধ থাকে মেন লাইনে। আটকে পড়া যাত্রীদের দুর্ভোগ রাতেই শেষ হয়নি। সকাল গড়িয়ে বাড়ি ফিরে বৃহস্পতিবার আর কর্মস্থলে যেতে পারেননি অনেকেই।
বুধবার রাতের ঝড়-ঝামেলার দায় রেলের ঘাড়ে চাপাচ্ছেন ভুক্তভোগীরা। তাঁদের অভিযোগ মূলত দ্বিমুখী।
• আলিপুর আবহাওয়া দফতর সাতসকালেই সতর্কবার্তা দিয়ে জানিয়ে দিয়েছিল, কমবেশি ৬০ কিলোমিটার বেগে নদিয়ার আশপাশ এলাকা দিয়ে কালবৈশাখী বয়ে যেতে পারে। যাত্রীদের অভিযোগ, পূর্ব রেলের শিয়ালদহ ডিভিশন ওই বার্তা পেয়েও সতর্ক হয়নি। ঝড়-পরিস্থিতির মোকাবিলায় ব্যবস্থাই নেয়নি তারা। তাই বুধবার মেন লাইনে গাছের ডাল ভেঙে ছিঁড়ে যাওয়া তার মেরামত করতেই রেলকর্তারা নাকানিচোবানি খেয়ে যান। ফল ভুগতে হয় রাতভর আটকে পড়া হাজার হাজার যাত্রীকে।
• যাত্রীদের অভিযোগ, তাঁদের ভোগান্তির জন্য দুর্যোগ যত দায়ী, তার চেয়ে বেশি দায়ী রেল। ঝড়বৃষ্টির মরসুমে বিপর্যয়ের মোকাবিলায় আগে থেকে ‘কাটিং’ বা লাইনের পাশের গাছের ডাল ছেঁটে ফেলাটাই দস্তুর। কিন্তু রেল যথাসময়ে ডাল না-ছাঁটায় ভুগতে হচ্ছে যাত্রীদের।
ঠিক কী ঘটেছিল বুধবার?
রেল সূত্রের খবর, বুধবার রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ মেন লাইনের শিমুরালি ও চাকদহ স্টেশনের মধ্যে কালীনারায়ণপুরে এক নম্বর লাইনে ডাল ভেঙে পড়ায় বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে যায়। রেলকর্মীদের একাংশের অভিযোগ, হাওয়া অফিসের বার্তা পেয়েও রেলকর্তারা আগেভাগে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেননি। তাই লোকলস্কর জোগাড় করে মেরামতি শুরু করতে দেরি হয়ে যায়। ইতিমধ্যে এক নম্বর লাইনেই শিয়ালদহ থেকে পরপর ট্রেন ছাড়ায় বিভিন্ন স্টেশনে সেগুলো আটকে পড়ে। ট্রেনের জট পাকিয়ে যায়। সেই জট ছাড়াতে রাত কাবার। এই অবস্থায় তিন নম্বর লাইন দিয়ে গৌড় এক্সপ্রেস চালাতে গেলে ক্ষুব্ধ যাত্রীরা ইটপাটকেল ছুড়তে শুরু করেন। কিছু কামরার কাচ ভাঙে। আহত হন গৌডড়ের কিছু যাত্রী।
যাত্রীদের প্রশ্ন, তার ছিঁড়েছে তো রানাঘাটের কাছে। তা হলে কল্যাণী বা ব্যারাকপুর পর্যন্ত ট্রেন চালানো হল না কেন? বিপত্তিটা এক নম্বর লাইনে। তা হলে ঘটনার দু’ঘণ্টা পরেও ওই লাইন দিয়ে পরপর লোকাল ট্রেন চালানো হল কেন?
জবাব মিলছে না। পূর্ব রেলের কর্তাদের মুখে কুলুপ। জনসংযোগ আধিকারিকও সরাসরি উত্তর দেননি। তিনি বলেন, ‘‘গাছের ডাল পড়েছে। সাফাই চলছে। ট্রেন না-চলায় আমরা যাত্রীদের দুঃখ প্রকাশ করছি।’’
মঙ্গলবারেও ব্যারাকপুর স্টেশনের কাছে গাছের ডাল পড়ে তার ছিঁড়ে গিয়েছিল। দু’ঘণ্টা বন্ধ থাকে ট্রেন। প্রশ্ন উঠছে, কালবৈশাখী তো প্রতি বছরই হয়। রেলের দুর্যোগ মোকাবিলা দফতরকে প্রস্তুত রাখা হয় না কেন? কেনই বা রেলের নিয়ম মেনে যথাসময়ে রেললাইনের পাশের গাছের ডাল কাটা হয় না?
রেলের নিয়ম অনুযায়ী কালবৈশাখীর আগে লাইনের পাশে যে-কাজ সেরে ফেলার কথা, কয়েক বছর ধরে সেটা হচ্ছেই না। অথচ রেলের দুর্যোগ মোকাবিলা দফতরে কর্মীরা আছেন। শিয়ালদহ স্টেশনে তাঁদের জন্য ঘর বরাদ্দ রয়েছে। নিয়মিত টাকাও বরাদ্দ করা হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy