Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

লাগাতার হুমকি, ফিরেও একঘরে পাচার-কন্যেরা

বছর চব্বিশের সাবিনাকে গত ফেব্রুয়ারিতে পুণে থেকে উদ্ধার করে আনে পুলিশ। কিন্তু ফেরার পরে তাঁকে বাড়িতে ঢুকতে দেননি স্বামী। ছেলেমেয়েরাও আর মায়ের কাছে আসে না।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

দীক্ষা ভুঁইয়া
শেষ আপডেট: ৩১ জুলাই ২০১৯ ০৪:০৬
Share: Save:

অপরাধীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। অথচ পাচার হওয়া বা বিকিয়ে যাওয়া মেয়েরা উদ্ধারকারীদের হাত ধরে ফিরে এলেও সমাজ তাঁদের এখনও একঘরে করে রাখছে। এমনকি তাঁদের কলের জলও নিতে দেওয়া হচ্ছে না!

এমনই অভিযোগ এনেছেন জয়নগর থানা এলাকার বাসিন্দা সাবিনা বিবি (নাম পরিবর্তিত)। বছর চব্বিশের সাবিনাকে গত ফেব্রুয়ারিতে পুণে থেকে উদ্ধার করে আনে পুলিশ। কিন্তু ফেরার পরে তাঁকে বাড়িতে ঢুকতে দেননি স্বামী। ছেলেমেয়েরাও আর মায়ের কাছে আসে না। অগত্যা বাপের বাড়িতেই আশ্রয় নেন সাবিনা। কিন্তু সেখানেও শুরু হয় পড়শিদের অত্যাচার। শুধু অত্যাচারই নয়, পড়শিরা তাঁকে কল থেকেও জল নিতে দেন না বলেও অভিযোগ।

আবার একঘরে করে রাখার পাশাপাশি নির্যাতিতার সম্পত্তি পুড়িয়ে দেওয়ারও অভিযোগ আসছে। সাবিনার সঙ্গেই পুণে থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল নাজমা মণ্ডল (নাম বদল)-কে। জয়নগর থানা এলাকার বাসিন্দা বছর বাইশের নাজমা ফিরে আসার পরে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সাহায্যে বাবার জমিতে ধান চাষ করেন। পরে জমিতেই খড় গাদা করে রেখেছিলেন তিনি। পাচারকারীরা সেই খড়ের গাদায় আগুন লাগিয়ে দেয় বলে অভিযোগ।

সাবিনা, নাজমার মতো পুণে থেকে ফেব্রুয়ারিতে একসঙ্গে উদ্ধার করে আনা পাঁচ তরুণী-কিশোরীর মধ্যে চার জনই গত কয়েক মাস ধরে পদে পদে নতুন নতুন সমস্যার মুখে পড়ছেন। তাঁদের প্রত্যেকেরই প্রশ্ন, ‘‘যারা পাচার করছিল, তারা দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে। অথচ কোনও অপরাধ না-করেও আমাদের অপরাধীর মতো জীবন কাটাতে হচ্ছে কেন?’’ পাচারকারীদের ভয়ে কাঁটা হয়ে থাকতে হচ্ছে ক্যানিংয়ের আয়েশাকেও (ছদ্মনাম)। তাঁকেও উদ্ধার করা হয়েছিল সাবিনা-নাজমাদের সঙ্গে। অভিযুক্ত পাচারকারী তাঁর প্রতিবেশী। তার কোনও শাস্তি হয়নি। উল্টে সে প্রায় রোজই আয়েশা এবং তাঁর

পরিবারকে হুমকি দিয়ে চলেছে। বাধ্য হয়ে অনেকেই স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবীগুলির দ্বারস্থ হয়েছেন। কিন্তু পঞ্চায়েত থেকে কোনও সহযোগিতা মেলে না বলে অভিযোগ। এত প্রচার সত্ত্বেও পঞ্চায়েত এগিয়ে আসছে না কেন?

‘‘সচেতনতা বাড়ছে। কিন্তু ওই সব মেয়ের পুনর্বাসনে পঞ্চায়েতগুলিকে এখনও সে-ভাবে যুক্ত করা যায়নি। এই ধরনের অপরাধীরা প্রত্যন্ত গ্রামগুলিতে কাজ করার জন্য পঞ্চায়েত বা স্থানীয় দলকে হাতের মুঠোয় রাখে,’’ বললেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার প্রতিনিধি নীহাররঞ্জন রাপতান। আর দিল্লির এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার ঋষিকান্তের কথায়, ‘‘স্বয়ংসিদ্ধার মাধ্যমে অনেকটাই সচেতনতা বাড়ানো গিয়েছিল। কিন্তু পঞ্চায়েতকে সে-ভাবে সচেতন করা যায়নি।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Crime Women Trafficking Police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy