পথ আটকে প্যান্ডেল। (বাঁ দিক থেকে) বেলেঘাটার সিআইটি মোড়, আমহার্স্ট স্ট্রিটের লোহাপট্টি এবং ভবানীপুরের রাস্তায় পুজোর প্রস্তুতি। বৃহস্পতিবার শৌভিক দে, স্বাতী চক্রবর্তী এবং দেবস্মিতা ভট্টাচার্যের তোলা ছবি।
বেসরকারি হাসপাতালের আউটডোরে দেখাতে যাবেন বলে টালিগঞ্জের বাড়ি থেকে বেলা ১১টায় বেরিয়ে পড়েছিলেন সমিত বল। রাসবিহারী অ্যাভিনিউয়ে পৌঁছতেই থমকে গেল ট্যাক্সি। গড়িয়াহাটের মোড় পেরিয়ে রাসবিহারী কানেক্টর দিয়ে হাসপাতালে পৌঁছলেন বেলা সাড়ে ১২টা। তত ক্ষণে রোগী দেখা শেষ করে ডাক্তার চলে গিয়েছেন।
যাদবপুর থেকে মল্লিকবাজারে যাবেন বলে বেলা ১০টায় বেরিয়েছিলেন রুমকি দাস। ৬ কিলোমিটার রাস্তা যেতে তাঁর লেগেছে প্রায় দু’ঘণ্টা।
বৃহস্পতিবার। সবে দ্বিতীয়া। কিন্তু যানজটের নিরিখে অষ্টমীর সন্ধ্যাকেও লজ্জায় ফেলে দিতে পারে এ দিনের সকাল। কেন? পুলিশের একাংশ বলছে, কেনাকাটার ভিড় আর রাস্তা আটকে পুজোর দাপটে এমনিতেই শহরে যানজট শুরু হয়েছে। তার উপরে এ দিন পার্ক সার্কাস এলাকার একটি ইংরেজিমাধ্যম স্কুলে শিক্ষকদের সঙ্গে অভিভাবকদের বৈঠক ছিল। এলাকার অন্য একটি স্কুলে পরীক্ষার ফলপ্রকাশের দিন ছিল। তার ফলে ওই দু’টি স্কুলেই প্রচুর অভিভাবক এসেছিলেন। তাঁদের গাড়িগুলো রাস্তার পাশে দাঁড় করানোয় ওই এলাকায় যানজট আয়ত্তের বাইরে চলে গিয়েছিল। পুলিশের একাধিক সূত্রের আশঙ্কা, আজ, শুক্রবার তৃতীয়ার দিনেও যানজটে ভুগতে পারে মহানগর। তার ওপর আজ শহরে বামেদের মিছিল হওয়ার কথা। ফলে ভোগান্তি আরও বাড়বে।
পুলিশ বলছে, শহরের উত্তর থেকে দক্ষিণ— বিভিন্ন এলাকায় রাস্তা আটকে পুজোর মণ্ডপ তৈরি হয়েছে। নিয়মিত গাড়ি চলাচল করে এমন রাস্তায় ‘নিয়মমাফিক’ ছাড় রাখলেও তা কতটা পর্যাপ্ত, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে। ট্রাফিক পুলিশেরই একাংশ বলছে, কোনও রাস্তার উপরে মণ্ডপ তৈরি হলে নিয়মমাফিক রাস্তার মোট চওড়ার এক-তৃতীয়াংশ জায়গা ছাড়তে হয়। তাতে রাস্তা পুরো বন্ধ করতে না হলেও গাড়ি চলাচল ব্যাহত হয়। তার ফলে ওই গলিতে যেমন যানজট তৈরি হয় তেমনই অনেক গাড়িচালক গলি এড়িয়ে বড় রাস্তায় চলে আসার ফলে সেখানেও যানবাহনের চাপ বাড়ে।
এই সূত্রেই উঠে এসেছে বেলেঘাটা, ভবানীপুর, গড়িয়াহাট, সুকিয়া স্ট্রিটের মতো বিভিন্ন এলাকার কথা। বেলেঘাটা সিআইটি রোডের কাছে রাস্তার উপরেই মণ্ডপ তৈরি হচ্ছে। ভবানীপুর-পদ্মপুকুর এলাকাতেও রাস্তার উপরেই সেজেছে একাধিক পুজোর মণ্ডপ। গড়িয়াহাট এলাকার একাধিক রাস্তায় নামী পুজোর মণ্ডপ রয়েছে। সুকিয়া স্ট্রিটের রাস্তার অনেকটাই আটকে পুজোর মণ্ডপ তৈরি হওয়ায় যানবাহনের গতি থমকাচ্ছে। এ ভাবে পুজো হয় কেন? লালবাজারের অনেক কর্তাই বলছেন, পুজোগুলো দীর্ঘদিন ধরেই এ ভাবে হয়ে আসছে। রাস্তা কতটা ছাড়তে হবে, সে ব্যাপারে হাইকোর্টের নির্দেশিকা রয়েছে। ‘‘ক্লাবগুলো তা মানলে আমাদের কিছু বলার থাকে না,’’ মন্তব্য এক পুলিশকর্তার। আর যদি না মানে? ওই পুলিশকর্তা বলছেন, ‘‘সে ক্ষেত্রে পুজোর কর্তা কতটা প্রভাবশালী, সেটাই আমাদের দেখতে হয়।’’
পুলিশের একাংশ বলছে, এই যানজটের পিছনে পুজোর ভিড় এবং মণ্ডপগুলো অনেকটাই দায়ী। পুজো এগিয়ে আসায় কাজের দিন দুপুরেও হাতিবাগান, গড়িয়াহাট, নিউ মার্কেটে লোকজন কেনাকাটা করতে আসছেন। ফলে রাস্তায় লোক এবং গাড়ি বেড়ে গিয়েছে। তার উপরে পুজোয় ভিড় সামলানোর জন্য প্রচুর রাস্তায় বাঁশের ব্যারিকেড বসেছে। তাতে রাস্তার বহর কমেছে। যানজট বেড়েছে।
পুলিশ সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার দ্বিতীয়ার সকাল থেকেই হাতিবাগান, নিউ মার্কেট, গড়িয়াহাটে লোক জমতে শুরু করেছিল। যানজটের মধ্যে সেই ভিড় সামলাতে তখন রীতিমতো নাজেহাল অবস্থা ওই এলাকার ট্রাফিক সার্জেন্টদের। একই পরিস্থিতি উত্তর কলকাতা কিংবা মধ্য কলকাতাতেও। হাতিবাগানের সামনে দাঁড়িয়ে এক সার্জেন্ট পরিচিতকে দেখে মুচকি হাসলেন— ‘‘কী অবস্থা দেখছেন তো!’’ এসপ্ল্যানেড মেট্রোর সামনে বেলা বারোটা নাগাদ যানজট সামলাতে আপ্রাণ লড়ে যাচ্ছিলেন কয়েক জন পুলিশ অফিসার।
দুপুরের পর কিছু ক্ষণের জন্য পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছিল। কিন্তু বিকেল হতেই ফের যানজট পাকাতে শুরু করে বিভিন্ন বাজার এলাকায়। গড়িয়াহাটের কয়েকটি পুজো মণ্ডপে হাজির হয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তা নিয়ে নিরাপত্তার কড়াকড়িতে ব্যস্ত ছিল পুলিশ। সন্ধ্যায় গড়িয়াহাট বাজারের সামনে দাঁড়িয়ে এক পুলিশ অফিসার বলছিলেন, ‘‘একে পুজোর ভিড় আর যানজট। তার উপরে এলাকায় ভিআইপি। আমাদের চাপটা ভাবুন তো!’’ একই পরিস্থিতি ছিল শ্যামবাজারে। এক যুবক বলছেন, ‘‘রাস্তাটা যেন থমকে ছিল। কয়েক জন পুলিশ অফিসার এসে তড়িঘড়ি সামাল দিলেও পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি।’’ যানজটের ধাক্কায় থমকে গিয়েছিল কাঁকুড়গাছি, উল্টোডাঙা, খন্না মোড়ও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy