এমনই মাওবাদী পোস্টার উদ্ধার ঘিরে চাঞ্চল্য জঙ্গলমহলে। —নিজস্ব চিত্র
শান্ত জঙ্গলমহল। তাই বেলপাহাড়ি থানা পেরিয়ে ওদলচুঁয়ার রাস্তা ধরে ঝাড়খণ্ড লাগোয়া গ্রামে বেড়াতে গিয়েছিলেন খড়্গপুরের কয়েকজন পর্যটক। কিন্তু তাঁরা ফিরে এলেন অতীত জঙ্গলমহলের স্মৃতি নিয়ে।
পুলিশ সূত্রে খবর, ওই পর্যটক দলটি মুখোমুখি হয় একটি সশস্ত্র মাওবাদী স্কোয়াডের। পর্যটকদলে মহিলারাও ছিলেন। লাল গেরিলারা পর্যটকদের মারধর না করলেও, কেড়ে নিয়েছে মোবাইল ফোন। বৃহস্পতিবার ভর দুপুরে ঘটনাটি ঘটেছে বেলপাহাড়ি থানা এলাকার ঢাঙ্গিকুসুম গ্রামে। এলাকাটি পড়শি রাজ্যের সীমানা ঘেঁষা। পাথরের তৈরি বিভিন্ন জিনিসপত্রের জন্য বিখ্যাত এই এলাকা। আগে সুযোগসুবিধা না থাকলেও, সম্প্রতি পাকা রাস্তা হয়েছে। আর সেই রাস্তা ধরেই গিয়েছিলেন পর্যটকরা। প্রায় ১০ বছর পর এই প্রথম এ ভাবে প্রকাশ্যে দিনে দুপুরে দেখা গেল গেরিলা স্কোয়াডকে।
পুলিশ সূত্রে খবর, আতঙ্কিত ওই পর্যটকরা পুলিশকে জানিয়েছেন, ঘটনাটি ঘটেছে বেলা ১২টা নাগাদ। তাঁরা পাহাড়ের কোলে ঘুরছিলেন। হঠাৎই তাঁদের সামনে চলে আসে ৭ জন সশস্ত্র তরুণ-তরুণী। বাংলা এবং হিন্দি মিশিয়ে ওই পর্যটকদের পরিচয় জিজ্ঞাসা করেন ওই রাইফেল ধারীরা। পর্যটকরা পুলিশকে যে বর্ণনা দিয়েছেন তা থেকে জানা গিয়েছে, সাত জনের মধ্যে তিন জন মহিলা ছিলেন। প্রত্যেকের কাছেই রাইফেলের মতো দেখতে আগ্নেয়াস্ত্র ছিল। মুখ ঢাকা ছিল। পর্যটকদের দাবি, ওই সশস্ত্র তরুণ-তরুণীরা কোনও দুর্বব্যহার করেননি। তবে সবার মোবাইল নিয়ে নেন। রাজ্য গোয়েন্দা পুলিশের একটি সূত্র ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন। তবে পুলিশ এবং সিআরপিএফের একটি অংশের দাবি, সম্ভবত ঢাঙ্গিকুসুম গ্রাম পেরিয়ে ঝাড়খণ্ডের দিকে কিছুটা গিয়েছিলেন পর্যটকরা। সেখানে মুখোমুখি হয়ে থাকতে পারেন গেরিলা স্কোয়াডের।
আরও পড়ুন: ‘প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় কিছুটা উত্তেজনা রয়েছে’, বলছেন সেনাপ্রধান
গোটা ঘটনা জানার পর পুলিশ এবং সিআরপিএফ নিঃসন্দেহ এটা মাওবাদীদের একটা স্কোয়াড। সম্ভবত এরাই নিয়মিত ঘোরাফেরা করছে ঝাড়খণ্ড সীমানা লাগোয়া জঙ্গলমহলের গ্রামগুলোতে। কারণ পরের দিনই অর্থাৎ শুক্রবার সকালে বেলপাহাড়ি থানা এলাকার ভুলাভেদা গ্রাম পঞ্চায়েতের সিন্দুরিয়া গ্রামের বিভিন্ন প্রান্তে প্রায় ২৫ টি বাংলা ও হিন্দিতে লেখা পোস্টার দেখতে পান স্থানীয় বাসিন্দারা। এ বার পোস্টার দিয়ে রাস্তার কাজ বন্ধ করার হুমকি দিল মাওবাদীরা। সাদা কাগজে লাল কালি দিয়ে লেখা পোস্টারে স্থানীয় এক ঠিকাদার সৌরভ রায়কে হুমকি দেওয়া হয়েছে। সিপিআই (মাওবাদী) নামাঙ্কিত ওই পোস্টারগুলিতে ওই ঠিকাদারকে হুমকি দিয়ে বলা হয়েছে অবিলম্বে রাস্তার কাজ বন্ধ করতে। ওই এলাকায় প্রধানমন্ত্রী গ্রামীণ সড়ক যোজনার আওতায় একটি রাস্তার কাজ শুরু হয়েছে। সেই কাজ বন্ধ করার হুমকি দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন খাবেন কি খাবেন না, ডাক্তারের উপর ছাড়ুন
গত মাসে স্বাধীনতা দিবসের দিন ভুলাভেদা এলাকাতেই প্রচুর মাওবাদী নামাঙ্কিত পোস্টার পাওয়া গিয়েছিল। বেলপাহাড়ি থানা এলাকায় কয়েকজন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে মাওবাদীরা টাকা দাবি করে চিঠি দিয়েছে, এমন অভিযোগও জমা পড়েছে পুলিশের কাছে। সেই তালিকায় নতুন সংযোজন এ দিনের হুমকি পোস্টার।
স্থানীয় সূত্রে খবর, এই ঠিকাদারের বাড়ি লালগড় বাসস্ট্যান্ডের কাছে। সম্প্রতি এলাকায় বেশ বড় কিছু সরকারি বরাত পেয়েছেন তিনি।
ঝাড়গ্রাম জেলা পুলিশ আগের ঘটনাগুলির মতো এ ক্ষেত্রেও কোনও মন্তব্য করতে চায়নি। তবে বেলপাহাড়ি থানার পচাপানিতে এক গ্যাস এজেন্টের বাড়ি লক্ষ্য করে গুলি চলার ঘটনার পর রাজ্য পুলিশের শীর্ষ আধিকারিকদের একটি দল ওই এলাকায় কেন্দ্রীয় রিজার্ভ পুলিশের আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন। ওই এলাকায় টহলদারি বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে ভুলাভেদায় এদিনের পোস্টার ঘিরে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে বেশ আতঙ্ক তৈরি হয়েছে।
বনপার্টি বা মাওবাদী গেরিলারা যে নিয়মিত ওই এলাকায় যাতায়াত করেছে তার ইঙ্গিত দিয়েছেন বেশ কিছু স্থানীয় বাসিন্দা। এলাকায় তাঁরা যে বাসিন্দাদের একাংশের কাছ থেকে কিছুটা হলেও সমর্থন পাচ্ছে তাও এই হুমকি থেকে অনেকটা স্পষ্ট বলে মনে করছেন গোয়েন্দারা। গোয়েন্দাদের একটা অংশের ধারণা, এই স্কোয়াডের মাথা মাওবাদী নেতা মদন মাহাতো। মহিলাদের মধ্যে নন্দীগ্রাম থেকে মাওবাদী স্কোয়াডে যোগ দেওয়া মিতা রয়েছে বলে ধারণা গোয়েন্দাদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy