Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪
Cyclone Dana

বেপরোয়া পর্যটক, মৃত্যু দোকানির

দূর থেকেই সমুদ্র দর্শন পর্যটকদের। দিঘার বিশ্ববাংলা পার্কে বৃহস্পতিবার। ছবি: শুভেন্দু কামিলা

দূর থেকেই সমুদ্র দর্শন পর্যটকদের। দিঘার বিশ্ববাংলা পার্কে বৃহস্পতিবার। ছবি: শুভেন্দু কামিলা

কেশব মান্না
দিঘা ও তমলুক শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০২৪ ০৮:২৭
Share: Save:

সরকারি প্রচার এবং প্রচেষ্টা দুই-ই চলছে। তবু ঘূর্ণিঝড় দানা আছড়ে পড়ার আগে বৃহস্পতিবারও নাছোড় পর্যটকেরা। তাঁদের অনেকেই দিঘার হোটেল ছাড়েননি। পুরোপুরি পর্যটকশূন্য করা যায়নি মন্দারমণিও। অনেকে সমুদ্রের ভয়ঙ্কর সৌন্দর্য দেখতে বেরিয়ে পড়েছেন। খোলা ছিল সৈকতের কিছু দোকানও।

পরিস্থিতি দেখে দুপুর থেকে অভিযান চালায় পুলিশ। দোকান বন্ধের অনুরোধ করা হয়। তার পরেও নিউ দিঘার হলিডে হোম ঘাটের কাছে দোকান বন্ধ না হওয়ায় লাঠিচার্জ করে পুলিশ। মন্দারমণিতে মাচার উপরে লুকিয়ে বসে থাকা পর্যটকদেরও টেনে নামানো হয়। মন্দারমণিতে সমুদ্র দেখতে গিয়ে জলের তোড়ে ভেসে স্থানীয় এক দোকানির মৃত্যুও হয়েছে। মৃতের নাম গোপাল বর্মণ (৩০)। স্থানীয় সূত্রে খবর, বুধবার রাতে দোকান বন্ধ করে বাড়ি ফেরার পথে মত্ত অবস্থায় সমুদ্র দেখতে গিয়েছিলেন গোপাল। তখনই ঢেউয়ের ঝাপটায় তলিয়ে যান। এ দিন সকালে সমুদ্রের ধারে ভেসে আসে দেহ।

বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই ঘূর্ণিঝড় দানার প্রভাব বাড়তে শুরু করে পূর্ব মেদিনীপুরের উপকূলে। দিনভর ছিল ঘন কালো মেঘ, সঙ্গে ঝোড়ো হাওয়ার দাপট। সকালে বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি হলেও সন্ধের পরে টানা বৃষ্টি শুরু হয়। সমুদ্রে পরপর এবং বড় ঢেউ ওঠে। দিঘায় সৈকতে যাওয়ার সব রাস্তা বাঁশ দিয়ে ঘিরে দিয়েছিল পুলিশ। তবু উত্তাল সমুদ্র দেখতে অনেকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সমুদ্রের ধারে অপেক্ষায় ছিলেন। পর্যটকদের এমন আগ্রহকে ‘ডার্ক টুরিজ়ম’ বা আঁধার পর্যটন বলা হয়, জানাচ্ছেন সংশ্লিষ্ট মানুষজন।

দোকানের ছাউনিতে আশ্রয় নেওয়া মুর্শিদাবাদের শেখ মইদুল বলেন, ‘‘সমুদ্র বহুবার দেখেছি। কিন্তু ঝড়ের সময় তার রূপ কেমন হয়, তার সাক্ষী থাকতে দল বেঁধে এসেছি।’’ তিনি মেনে নেন, ‘‘প্রশাসনের নিষেধ রয়েছে। তবু উঁকি মেরে দেখছি, কেমন উঁচু হয়ে ফুলে উঠছে জল।’’ নিউ দিঘায় সমুদ্র দেখতে বেরিয়েছিলেন নদিয়ার রানাঘাট থেকে আসা চম্পক বিশ্বাস এবং তার স্ত্রী। চম্পক বলছেন, ‘‘কতক্ষণ আর ঘরবন্দি থাকা যায়! তাই একটু ঘুরে গেলাম।’’

পর্যটকদের অনেকেই অবশ্য এ দিন সকালে বাড়ি রওনা দেন। তবে দিঘা, মন্দারমণির প্রায় সব হোটেলেই কম-বেশি পর্যটক রয়েছেন। হোটেল মালিকরা জানাচ্ছেন, পর্যটকেরা দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় দিঘা ঘুরতে পছন্দ করেন। তাঁদের আরও বক্তব্য, ইয়াসের মতো দানা অত ভয়ঙ্কর হবে না বলেই পর্যটকদের একাংশ হোটেল ছড়তে আগ্রহী নন। দিঘা হোটেল মালিক সংগঠনের সহ-সভাপতি গিরিশচন্দ্র রাউত মানছেন, ‘‘সমুদ্র তীরবর্তী সব হোটেল সম্পূর্ণ খালি। তবে শহরের ভিতরে কিছু হোটেলে পর্যটক রয়ে গিয়েছেন।’’

অথচ প্রশাসন জানিয়েছিল, ২৩ অক্টোবর থেকে দিঘা, মন্দারমণি-সহ উপকূলের সব হোটেলের বুকিং বাতিল করতে হবে। এই নির্দেশ কার্যকর থাকবে ২৬ অক্টোবর পর্যন্ত। বুকিংয়ের টাকাও ফেরত দেওয়া হয়েছে। তবু কেন সৈকত পর্যটকশূন্য করা গেল না?

পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার সৌম্যদীপ ভট্টাচার্যের কথায়, ‘‘বার বার পর্যটকদের অনুরোধ করা হয়েছে। সমুদ্রের ধারে যাতে কোনও হোটেলে পর্যটক না থাকে, তার জন্য নিয়মিত তল্লাশিও চলছে। কাউকেই রাস্তায় কিংবা সমুদ্রের ধারে যেতে দেওয়া হচ্ছে না।’’ দিঘা হোটেল মালিক সংগঠনের যুগ্ম সম্পাদক বিপ্রদাস চক্রবর্তীর মতে, ‘‘পর্যটনের ভরা মরসুম এটা। অনেকেই পরিকল্পনা করে এসেছেন। তাঁদেরই কেউ কেউ ছুটি কাটাতে থেকে গিয়েছেন।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Cyclone Dana digha
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy