Advertisement
০৩ জানুয়ারি ২০২৫
Tourist

Uttarakhand: ‘স্রোতে খড়কুটোর মতো ভেসে যাচ্ছিল সব কিছু, দু'দিন আটকে থেকে কাঠগুদাম রওনা হলাম’

সপ্তমীর দিন হাওড়া থেকে ৪ জন ও কলকাতার ১০ জন, মোট ১৪ জনকে নিয়ে উত্তরাখণ্ডের উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন এই পর্যটন ব্যবসায়ী।

উত্তরাখন্ডের  ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি।

উত্তরাখন্ডের ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি। ছবি: পিটিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০২১ ০৭:৫৮
Share: Save:

অন্ধকার রাতে শুধু কানে আসছিল আকাশভাঙা বৃষ্টি আর ধসের শব্দ। কিন্তু প্রকৃতির রুদ্র রূপ ঠিক কতটা নির্মম হতে পারে, বিদ্যুৎহীন রাতে তা বুঝতে পারেননি কেউই। বোঝা গেল পরের দিন, আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে। সামনের পাহাড়টার প্রায় অর্ধেক ধসে পড়েছে পাশের নদীতে। হাজার হাজার গাছ সমূলে উপড়ে গিয়ে ভেসে যাচ্ছে নদীর তীব্র স্রোতে। সেই স্রোতে ভেসে যাচ্ছে গবাদি পশু থেকে গৃহস্থের ঘরসংসার।

সেই দৃশ্য দেখে নিজের অজানতেই চোখ বুজে ফেলেছিলেন হাওড়ার কোনার বাসিন্দা, টুর অপারেটর সীতানাথ কাঁড়ার। অভিজ্ঞ সীতানাথবাবুর মাথায় তখন একটাই চিন্তা ঘুরছিল— কী ভাবে হাওড়া-কলকাতার ১৪ জন পর্যটককে নিয়ে ওই বিধ্বস্ত এলাকা থেকে বেরিয়ে বাড়ি ফিরবেন। পরিস্থিতি বুঝতে পেরে পরিত্রাণের উপায় বার করতে তৎক্ষণাৎ তিনি স্থানীয় গ্রামবাসীদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেন।

সপ্তমীর দিন হাওড়া থেকে ৪ জন ও কলকাতার ১০ জন, মোট ১৪ জনকে নিয়ে উত্তরাখণ্ডের উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন এই পর্যটন ব্যবসায়ী। এর পরে গত রবিবার থেকে টানা তিন দিন উত্তরাখণ্ডে বৃষ্টি হয়। কৌশানী থেকে ফেরার পথে পাহাড়ের ধসে রাস্তায় আটকে পড়েছিলেন তাঁরা। কাচ্চিধাম নামে ওই জায়গায় মোবাইলের টাওয়ার পাওয়া যাচ্ছিল না। ফলে তাঁদের মধ্যে কেউই বাড়িতে খবর দিতে পারেননি।

সীতানাথবাবুর স্ত্রী মলি কাঁড়ারও কোনার বাড়ি থেকে গত দু’দিন ধরে চেষ্টা করে স্বামীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি। তিনিও বিনিদ্র রজনী কাটিয়েছেন গত কয়েক দিন। শেষে বুধবার বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ স্বামীর সঙ্গে কোনও রকমে যোগাযোগ করতে পারেন তিনি। এ দিন মলি বলেন, ‘‘ওঁর সঙ্গে কথা বলেছি। সকলে ভাল আছেন। বাড়ি ফিরছেন।’’

এ দিন ফোনে সীতানাথবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘‘আমরা উত্তরাখণ্ডের কাচ্চিধামে আটকে পড়েছিলাম। গত তিন দিন খাবার বা পানীয় জল পর্যন্ত জোটেনি। কোনও সরকারি সাহায্য পাইনি। পাশের গ্রামের মানুষ আমাদের দিকে সাহায্যের হাত না বাড়িয়ে দিলে কী যে হত জানি না।’’

সীতানাথবাবু জানান, কাচ্চিধামের পাশের একটি গ্রামের বাসিন্দা তাঁদের বাড়িতে থাকতে দিয়েছিলেন। কিন্তু এত জনের খাবার বা পানীয় জলের জোগাড় করে দিতে পারেননি। এই ভাবে সেখানে দু’দিন আটকে থাকার পর অবশেষে নিজেরাই চেষ্টা করে গাড়ি জোগাড় করেন। কাঠগোদামের উদ্দেশে রওনা হন তাঁরা।

সীতানাথবাবু আরও জানান, ওই এলাকায় সব রাস্তা ভেঙে তছনছ হয়ে গিয়েছে। যখন-তখন পাহাড় থেকে ধস নামছে। পাহাড়ি নদীগুলো উপচে গ্রামের ভিতর দিয়ে বইছে। তিনি বলেন, ‘‘সে এক ভয়াবহ দৃশ্য। নদীর স্রোতে খড়কুটোর মতো ভেসে যাচ্ছিল সব কিছু। প্রতি পদে বিপদের আশঙ্কা নিয়েই আমরা কোনও রকমে কাঠগোদাম এসে পৌঁছেছি। বিমান বা ট্রেনে দিল্লি ফেরার চেষ্টা করছি। জানি না, শেষ পর্যন্ত কী ভাবে ফিরব।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Tourist Uttarakhand Howrah
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy