এ ভাবে চলেছিল প্রণতির অনুশীলন। ফাইল চিত্র
মেয়েটা কী ভাবে অনুশীলন করেছিলেন, ঘনিষ্ঠরা জানেন। করোনা অতিমারিতে সাই কমপ্লেক্স বন্ধ। বাড়িতে বস্তায় ইট ভরে ভারোত্তোলন। দু’টো গাছের মাঝে বাঁশ বেঁধে চিন আপ। বার, বিমস অনুশীলনের উপায় ছিল না। তবুও মেয়েটা অলিম্পিক্সে সুযোগ পেয়েছিলেন। স্বপ্ন দেখেছিল তাঁর পরিবার। স্বপ্ন ছিল দেশবাসীরও।
শেষমেশ স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে। কোয়ালিফায়িং রাউন্ডেই আটকে গিয়েছেন। তবুও প্রণতি নায়েকের লড়াইকে কুর্নিশ করছেন মেদিনীপুরবাসী। প্রণতিও টোকিয়ো থেকে হোয়াটসঅ্যাপের ‘ভয়েস মেসেজে’ বলছেন, ‘‘অলিম্পিক্সের আগে দু’মাস সময় পেয়েছিলাম। আমি যতটা পেরেছি, চেষ্টা করেছি। নিজের পারফরম্যান্সে খুশি।’’
হতাশ নয় প্রণতির পরিবারও। রবিবার সকালে পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলার করকাই গ্রামের বাড়িতে পড়শিদের নিয়ে মেয়ের খেলা দেখতে বসেছিলেন প্রণতির বাবা শ্রীমন্ত ও মা প্রতিমা। মেয়ের ভাল ফলের কামনায় আগের দিন বাড়িতে পুজোও দিয়েছিলেন তাঁরা। অলিম্পিক্সে ভল্ট, আনইভেন বারস, ব্যাল্যান্স বিম ও ফ্লোর— চারটি ইভেন্টে যথাসাধ্য চেষ্টা করেন প্রণতি। সাফল্য না-মেলায় বাবা-মায়ের মন খারাপ। তবে ভেঙে পড়েননি। শ্রীমন্ত জানান, করোনার কারণে গত দেড় বছর প্রণতি সাই ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে ছিলেন। ওই সময়ে অনলাইন ক্লাস হলেও হাতে কলমে অনুশীলনের কোনও ব্যবস্থা ছিল না। শ্রীমন্ত বলেন, ‘‘অলিম্পিক্সে সুযোগ পাওয়ার পরে প্রণতি মাত্র দু’মাস কলকাতা সাইয়ে অনুশীলনের সুযোগ পেয়েছে। তা নিয়েই আমার মেয়ে জিমন্যাস্টিক্সে উন্নত পরিকাঠামো পাওয়া দেশের মেয়েদের সঙ্গে লড়াই করেছে।’’
প্রণতির ফলে মন খারাপ হলেও তাঁকে নিয়ে গর্ব করছেন মেদিনীপুর জেলা জিমন্যাস্টিক্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক অভিমন্যু দাস। তিনি বলেন, ‘‘পিংলার প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে অলিম্পিক্সের মঞ্চে যোগ দেওয়া আমাদের কাছে স্বপ্ন। প্রণতি সেই স্বপ্ন ছুঁয়েছে। এটা মেদিনীপুরবাসীর কাছে ইতিহাস হয়ে থাকবে।’’ জেলার জিমন্যাস্টিক্স প্রশিক্ষক রণজিৎ দাস চৌধুরী মানছেন, ‘‘আমাদের জেলায় জিমন্যাস্টিক্সের পরিকাঠামোর অনেক অভাব। জেলায় যদি একটি জিমন্যাস্টিক্স ইন্ডোর স্টেডিয়াম থাকত, তাহলে করোনার সময় প্রণতি বিশেষ অনুমতি নিয়ে একা একা অনুশীলন করতে পারত। হয়তো তাতে টোকিয়োয় আরও ভাল ফল হত।’’ পিংলার বিধায়ক অজিত মাইতির বক্তব্য, ‘‘প্রণতি নিজের অধ্যাবসায়ে এই জায়গায় পৌঁছেছেন। ওঁকে এবং ওঁর পরিবারকে মুখ্যমন্ত্রীর তরফে আমি শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। প্রণতি বাড়ি ফিরলে ওঁর সঙ্গে কথা বলে জিমন্যাস্টিক্সে জেলার পরিকাঠামো উন্নতির চেষ্টা করব।’’
প্রণতির শুভানুধ্যায়ীদের কেউ কেউ বলছেন, অলিম্পিক্সে সুযোগ পাওয়ার পরে ওঁকে নিয়ে চর্চা শুরু হল। সোশ্যাল মিডিয়ায় রোজই প্রণতি। কিন্তু মেয়েটা তার আগে কী প্রতিকূলতার মধ্যে বাড়িতে অনুশীলন করেছে তা নিয়ে কোনও হইচই হয়নি। জেলায় প্রণতি ঘনিষ্ঠরা বলছেন, এই পরিকাঠামোয় কি অলিম্পিক্সের মতো মঞ্চে ভাল ফল হয়!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy