ফাইল চিত্র।
অধুনা ‘নতুন’ তৃণমূলে কি পুরনো নেতাদের গুরুত্ব কমছে? তাঁরা কি দলে খানিক অসহায় এবং কোণঠাসা? অধুনা রাজ্যের রাজনৈতিক মহলে সেই জল্পনা এবং আলোচনা শুরু হয়েছিল। কিন্তু সেই জল্পনা উড়িয়ে দিয়ে দলের অন্যতম প্রবীণ নেতা তথা সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় জানালেন, একেবারেই নয়! প্রসঙ্গত, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন তৃণমূল গঠন করছিলেন, তখন যে কতিপয় নেতা তথা বিধায়ক কংগ্রেস ছেড়ে তাঁর সঙ্গ দিয়েছিলেন, সুদীপ তাঁদের অন্যতম।
শুক্রবার কালীঘাটের বাড়িতে দলীয় বৈঠক ডেকেছিলেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই বৈঠকে দেখা যায়, পঞ্চায়েত ভোটের আগে রাজ্যের বিভিন্ন জেলার দেখভালের দায়িত্বে পুরনো নেতাদের ফিরিয়েছে তৃণমূল। শাসক দলের তরফে সেই ঘোষণার পরেই প্রশ্ন উঠেছিল, তবে কি দলে আবার পুরনো নেতাদের গুরুত্ব বাড়ছে? প্রশ্ন শুনে কিছুটা অবাক হয়েই পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দেন সাংসদ সুদীপ। জানতে চান, ‘‘কেন? তৃণমূলে কি কখনও পুরনো নেতারা অসহায় বোধ করছিলেন নাকি?’’ তবে সুদীপ প্রশ্ন করেই থেমে যাননি। উত্তরও দিয়েছেন। বলেছেন, ‘‘দলে কখনওই পুরনোদের গুরুত্ব কমেনি। তাঁরা বরাবরই গুরুত্বপূর্ণ ছিলেন। যাঁরা দলের দুর্দিনে দলের পাশে থেকেছেন, তাঁদের গুরুত্ব কেন কমবে!’’
সুদীপ যা-ই দাবি করুন, তৃণমূলে যে পুরনো নেতাদের গুরুত্ব কমছে বলে যে আলোচনা দলেরই বিভিন্ন স্তরে শুরু হয়েছিল, তাঁদের মধ্যে ছিলেন সুদীপও। তাঁর সঙ্গেই জল্পনা চলছিল আরও দু’একজন প্রবীণ সাংসদকে নিয়েও। এমন একটা আবহ তৈরি হয়েছিল, যাতে মনে করা হচ্ছিল, এই প্রবীণ নেতারা সকলেই ‘মার্গদর্শক’ হয়ে যাবেন। বিজেপিতে লালকৃষ্ণ আডবাণীর মতো। তৃণমূলের অন্দরে যা সকলেরই জানা। এ নিয়ে একটা স্তর পর্যন্ত টানাপড়েনও শুরু হয়েছিল। কিন্তু তার পরেই হাল ধরেন দলনেত্রী মমতা স্বয়ং। তিনিই বুঝিয়ে দেন, দলের দুর্দিনে যাঁরা তাঁর সঙ্গী ছিলেন, তাঁদের তিনি ‘সক্রিয়’ রাখতে চান। দলের অন্দরেও সেই বার্তা দিয়ে দেন তৃণমূলের সর্বময় নেত্রী। শুক্রবারের বৈঠকে ফিরহাদ হাকিম বা অরূপ বিশ্বাসের মতো নেতাদের দলের বিভিন্ন জেলার দায়িত্ব দিয়ে সেই অবস্থানই আরও পোক্ত করেছেন মমতা। তবে প্রত্যাশিত ভাবেই দলের কোনও নেতাই প্রকাশ্যে অন্দরের নবীন-প্রবীণ পরিস্থিতি নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি। করেন না। করবেনও না। যেমন করেননি সুদীপও। উল্টে পাল্টা প্রশ্ন করেছেন। পাশাপাশিই বলেছেন, ‘‘নতুনরা তো আসবেই। ওদেরও দায়িত্ব দিতে হবে। বৈঠকে যুবনেতা হিসেবে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এসেছিলেন। উনি সুন্দর কথা বললেন। আমরা নতুন প্রজন্মকে সবসময় উৎসাহ দিই। তবে যারা দুর্দিনে থেকেছে, লড়েছে, তারা কখনও অনুভব করেনি দলে তাদের গুরুত্ব কমে যাচ্ছে।’’
ঘটনাপরস্পরা লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, গত পুরভোটের সময় ‘নতুন তৃণমূল’ গঠনের ডাক দিয়েছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সময়েই প্রকাশ্যে এসেছিল নবীন-প্রবীণ দ্বন্দ্ব। তবে পরে অভিষেক ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, তিনি ‘নতুন তৃণমূল’ বলতে সেই তৃণমূলকে বুঝিয়েছেন, যারা ২০১১ সালে ‘পরিবর্তন’ এনেছিল। পরে নিয়োগ দুর্নীতিতে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নাম প্রকাশ্যে আসার পর এবং গরু ও কয়লা পাচারকাণ্ডে অনুব্রত মণ্ডল গ্রেফতার হওয়ায় আবার নতুন তৃণমূল তথা ‘শুদ্ধকরণ’-এর দাবি শোনা যাচ্ছিল। তার পর থেকেই রাজনীতির বিভিন্ন মহলে আলোচনা চলছিল, দলে নতুনদেরই বেশি দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু পঞ্চায়েত ভোটের আগে দেখা গেল গুরুত্বপূর্ণ জেলাগুলির দায়িত্বে ফিরিয়ে আনা হয়েছে দলের ‘পুরনো বিশ্বস্ত’দের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy