আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়। — ফাইল চিত্র।
নেতৃত্ব কথা শুনছেন না। তাঁদের একাংশই দুর্নীতিতে মদত দিচ্ছেন। এই অভিযোগ জানিয়ে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত তৃণমূল ছাত্র পরিষদ (টিএমসিপিতে)-এর সব নেতা একযোগে পদত্যাগ করলেন। ইতিমধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্ক সার্কাস এবং নিউ টাউন ক্যাম্পাসে টিএমসিপির পদাধিকারীরা যৌথ ইস্তফাপত্র পাঠিয়ে দিয়েছেন সংগঠনের রাজ্য সভাপতি তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্যের কাছে। রাজ্য সংগঠনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের পর্যবেক্ষক মীর সিদ্দিকের বিরুদ্ধে দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগ তুলেছেন পদত্যাগীরা। বিষয়টি মেনে নিয়ে তৃণাঙ্কুর আনন্দবাজার অনলাইনকে জানিয়েছেন, কিছু ভুল বোঝাবুঝির জন্যই এটা হয়েছে। সংগঠনে কিছু রদবদল আনা হবে বলে জানিয়ে তৃণাঙ্কুর বলেন, ‘‘সব অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে।’’
প্রসঙ্গত, ২০০৭ সালে বাম আমলে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় তৈরির জন্য প্রস্তাব আনা হয় রাজ্য বিধানসভায়। ২০০৮-০৯ শিক্ষাবর্ষ থেকে সেখানে শুরু হয় পঠনপাঠন। পরে তার কলেবর বৃদ্ধি পায় তৃণমূল আমলে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউ টাউন ক্যাম্পাস তৈরি হয়। সম্প্রতি নানা কারণে অচলাবস্থার অভিযোগ উঠছিল। অনেক দিন ধরেই বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনও স্থায়ী উপাচার্য নেই। দিন কয়েক আগে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস কেরলের অবসরপ্রাপ্ত আইপিএস অফিসার এম ওয়াহাবের নাম অন্তর্বর্তিকালীন উপাচার্য হিসাবে ঘোষণা করেছেন।
কেন একসঙ্গে সবাই মিলে পদত্যাগ? বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউটাউন ক্যাম্পাসের টিএমসিপি-র সাধারণ সম্পাদক ওয়াদিল আলম বলেন, ‘‘আলিয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু এখানে নানা অনিয়ম চলছে। লেখাপড়া তো হচ্ছেই না, তার সঙ্গে একের পর এক দুর্নীতি চলছে। সংগঠনের শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে বার বার অভিযোগ জানিয়েও কাজ হয়নি। তাই আমরা ইস্তফার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’’ এ প্রসঙ্গে তৃণাঙ্কুর যদিও বলেন, ‘‘এটা একেবারেই সংগঠনের অভ্যন্তরীণ বিষয়। আমরা খুব তাড়াতাড়ি নতুন কমিটি তৈরি করব। তবে সংগঠন নিশ্চিত যে, আলিয়ার পড়ুয়ারা আগের মতোই টিএমসিপির সঙ্গেই রয়েছে।’’ যদিও পদত্যাগীদের দাবি, পড়ুয়ারাও ক্ষুব্ধ। নানা কারণে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। পড়ুয়াদের স্বার্থপূরণ করতে না পেরেই পদত্যাগের এই সিদ্ধান্ত।
পদত্যাগীদের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়ের গেট থেকে সাইকেল স্ট্যান্ড তৈরি— সবেতেই দুর্নীতি হয়েছে। টেন্ডার ছাড়াই এক জনকে হস্টেলের খাবারের বরাত দেওয়া হয়েছে। সেখানে নিম্ন মানের খাবার দিলেও পড়ুয়ারা কিছু বলতে পারছেন না বলে দাবি। এ সবের নেপথ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মীরের হাত রয়েছে বলেও অভিযোগ। পদত্যাগীদের আরও অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক জন অধ্যাপক এবং কর্মীর সঙ্গে যোগসাজশ রেখেই আদতে কলকাতা পুরসভার অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার এই সব দুর্নীতিতে মদত দিচ্ছেন। বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে মীর বিভিন্ন অসামাজিক কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত বলেও অভিযোগ। তেমন কিছু ছবি তাঁদের সংগ্রহে রয়েছে জানিয়ে আলিয়ার এক পড়ুয়া বলেন, ‘‘মীর’দা দিনের পর দিন এখানে অরাজকতা করছেন। বার বার তাঁর নামে নালিশ করলেও উচ্চ নেতৃত্ব কোনও ব্যবস্থা নেননি।’’ পদত্যাগপত্রেও এ সব উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, প্রশাসনিক বিভাগ থেকে শুরু করে ওয়েবকুপা— কারও সঙ্গে টিএমসিপির কোনও যোগাযোগ নেই। ফলে ছাত্রছাত্রীদের পরিষেবা দেওয়া যাচ্ছে না।
এ প্রসঙ্গে তৃণাঙ্কুর বলেন, ‘‘যা যা অভিযোগ রয়েছে, সব খতিয়ে দেখা হবে। সংগঠনের জন্য যেটা ভাল, সেটাই হবে। কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ সত্যি হলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।’’ তবে যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মীর। তিনি বলেন, ‘‘আমি সংগঠনের স্বার্থেই যা করার করেছি। কোনও অন্যায় কাজের সঙ্গে আমি যুক্ত নই।’’ তাঁর বিরুদ্ধে অসামাজিক কাজকর্মের যে অভিযোগ উঠেছে, তাকে অবশ্য গুরুত্ব দিতে চাননি মীর।
(এই খবরটি প্রথম প্রকাশের সময়ে অনবধানতাবশত আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় তৃণমূলের আমলে তৈরি হয় বলে লেখা হয়েছিল। আদতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সূচনা বাম জমানায়। ২০১১ সালের পরে এর কলেবর বৃদ্ধি পেয়েছে। অনিচ্ছাকৃত এই ত্রুটির জন্য আমরা আন্তরিক ভাবে দুঃখিত এবং ক্ষমাপ্রার্থী।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy