Advertisement
১৮ নভেম্বর ২০২৪
অভিযুক্ত টিএমসিপি

লাঠি-রড দিয়ে মার বিরোধী ছাত্রনেতাদের

সবংয়ের পরে এ বার রায়গঞ্জ। ফের ছাত্র পরিষদের উপরে হামলার অভিযোগ উঠল শাসকদলের ছাত্র সংগঠনের বিরুদ্ধে। ছাত্র পরিষদের নেতাদের দিকে গুলি চালানোরও অভিযোগ উঠেছে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের কর্মীদের বিরুদ্ধে।

বুলেটের খোল খুঁজছে পুলিশ।—নিজস্ব চিত্র।

বুলেটের খোল খুঁজছে পুলিশ।—নিজস্ব চিত্র।

গৌর আচার্য
রায়গঞ্জ শেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০১৫ ০৩:৫১
Share: Save:

সবংয়ের পরে এ বার রায়গঞ্জ। ফের ছাত্র পরিষদের উপরে হামলার অভিযোগ উঠল শাসকদলের ছাত্র সংগঠনের বিরুদ্ধে। ছাত্র পরিষদের নেতাদের দিকে গুলি চালানোরও অভিযোগ উঠেছে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের কর্মীদের বিরুদ্ধে। এ দিনও বিরোধীদের দিকেই অশান্তি তৈরির জন্য আঙুল তুললেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী। ফের কলেজ চত্বরে অশান্তির জেরে বন্ধ ডাকা হল।

রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ে সোমবার দুপুরে জনা চল্লিশেক ব্যক্তি ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি নব্যেন্দু ঘোষ ও রাজ্য সম্পাদক প্রসেনজিৎ সাহা-সহ অন্যান্য সদস্যের উপর চড়াও হয়। ছাত্র পরিষদের অভিযোগ, তারা টিএমসিপি-র কর্মী-সমর্থক। তারা খুন করার উদ্দেশে গুলি চালিয়েছিল বলেও অভিযোগ উঠেছে। তবে ওই দুই ছাত্রনেতার গায়ে গুলি লাগেনি। লোহার রডের আঘাতে গুরুতর জখম হন ওই দুই ছাত্রনেতা এবং আরও এক ছাত্র পরিষদ সদস্য। তাঁরা তিন জন হাসপাতালে ভর্তি। পুলিশ অবশ্য গুলিচালনার প্রমাণ পায়নি। তবে স্থানীয় সূত্রে খবর, গুলির শব্দ শুনে উদ্বিগ্ন হয়ে ক্যাম্পাস ছাড়তে শুরু করেন ছাত্রছাত্রীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও পড়ুয়ারা জানান, বিকেল ৩টে নাগাদ টিএমসিপি-র প্রায় ৪০ জন সমর্থক লাঠিসোটা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ভবনের সামনের চত্বরে ঢুকে ছাত্র পরিষদ সমর্থকদের ধাওয়া করে। ছাত্র পরিষদ সমর্থকেরা পালিয়ে পাশে বাংলা বিভাগের সামনের মাঠে চলে যান। সেখানেই টিএমসিপি সমর্থকেরা নব্যেন্দুবাবু, প্রসেনজিৎবাবু-সহ বেশ কয়েক জন ছাত্র পরিষদ সদস্যকে লাঠি ও লোহার রড দিয়ে মারধর করে। ছাত্র পরিষদের বাকি সমর্থকেরা আশপাশের বিভিন্ন ভবনে ঢুকে যান। সেই সময়ই নব্যেন্দুবাবু ও প্রসেনজিৎবাবুকে লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয় বলে অভিযোগ। কলেজের নিরাপত্তারক্ষী শ্যামল সিংহ বলেন, ‘‘সংঘর্ষ শুরু হলে আমি একটি ক্লাসরুমে ঢুকে পড়ি। বাংলা বিভাগের সামনে থেকে পরপর শব্দ হয়। গুলির আওয়াজ বলেই মনে হয়।’’ কিছু ক্ষণের মধ্যেই পুলিশ যায়। কিন্তু তারা নীরব দর্শক হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল বলে অভিযোগ ছাত্র পরিষদের।

ঘণ্টা খানেকের মধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর ফাঁকা হয়ে যায়। উত্তেজনা ছড়ায় শহরে। অভিযোগ, রাতে টিএমসিপি-র এক কর্মীর দোকানে ভাঙচুর হয়। আরেক টিএমসিপি নেতার বাড়ির সামনে শূন্যে গুলি চলে। পুলিশ অবশ্য দাবি করেছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে। অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবিতে কংগ্রেস বিকেলে দু’ঘণ্টা জাতীয় সড়ক অবরোধ করে। আজ, মঙ্গলবার রায়গঞ্জে ১২ ঘণ্টার সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে কংগ্রেস। টিএমসিপি তাদের কর্মীরা আক্রান্ত দাবি করে শহরে পথ অবরোধ করে।

কেন দিন-দুপুরে কলেজে এই হামলা? জেলা কংগ্রেস সভাপতি তথা রায়গঞ্জের বিধায়ক মোহিত সেনগুপ্তের দাবি, রায়গঞ্জ কলেজ ছিল ছাত্র পরিষদের দখলে। বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার পর এখনও ছাত্র সংসদ গঠিত হয়নি। যে কোনও দিন নির্বাচন ঘোষণা হতে পারে। তার আগে তৃণমূলের মদতে বহিরাগতরা বিশ্ববিদ্যালয়ের দখল নিতেই এ দিন হামলা চালায়। তাঁর দাবি, ‘‘নব্যেন্দু ও প্রসেনজিৎকে খুন করতে গুলিও করা হয়।’’

অভিযোগ অস্বীকার করে জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা ইটাহারের বিধায়ক অমল আচার্যের পাল্টা দাবি, ছাত্র পরিষদের কিছু সমর্থক-সহ কিছু পড়ুয়া সম্প্রতি টিএমসিপিতে যোগ দিতে চায়। তাঁর দাবি, ‘‘ভাঙন রুখতে ছাত্র পরিষদের বহিরাগত দুষ্কৃতীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে টিএমসিপি সমর্থকদের টেনে ঢুকিয়ে লাঠি দিয়ে মারধর, গুলি করে খুনের চেষ্টা করে।’’

জেলার এসপি সৈয়দ ওয়াকার রেজা জানান, সিসিটিভির ফুটেজ তাঁরা খতিয়ে দেখছেন। একাধিক ব্যক্তিকে জেরাও করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘‘গুলি চলেছে কি না, স্পষ্ট নয়।’’

রায়গঞ্জের এই প্রতিষ্ঠান বরাবর ছাত্র পরিষদের দখলে থাকলেও, আগেও তৃণমূলের দাপট চোখে পড়েছে। ২০১২ সালে ৫ জানুয়ারিতে তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দিলীপ দে সরকারকে কলেজে ঢুকে মারধরের অভিযোগ ওঠে জেলা তৃণমূলের প্রাক্তন কার্যকরী সভাপতি তিলক চৌধুরী ও টিএমসিপি-র তৎকালীন জেলা পর্যবেক্ষক প্রিয়ব্রত দুবে-সহ তৃণমূল কর্মীদের বিরুদ্ধে।

শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ঘটনার রিপোর্ট তলব করে এ দিন বলেন, ‘‘তৃণমূলের মহাসচিব হিসেবে বলছি, যেখানেই ছাত্র সংসদে বিরোধীরা আছে, সেখানেই গণ্ডগোল পাকানোর চেষ্টা হচ্ছে। সবং-সহ পরপর কয়েকটা ঘটনায় একই জিনিস লক্ষ করা গিয়েছে। কোথাও সিপিএম গোলমাল করছে, কোথাও আবার তারা কংগ্রেসের ছাত্র পরিষদকে পিছন থেকে উৎসাহ দিচ্ছে।’’

কিন্তু প্রতি ঘটনাতেই তো তৃণমূল ছাত্র পরিষদের দিকে অভিযোগের আঙুল উঠছে! পার্থবাবুর বক্তব্য, ‘‘আক্রান্ত হলে তারা কী করবে?’’’ যা শুনে উত্তর দিনাজপুর জেলার সিপিআই নেতা শ্রীকুমার মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘এ কথা বলার অর্থ, যে সব কলেজে বিরোধী সংগঠন আছে, সেগুলোও জোর করে বিরোধীশূন্য করে দিয়ে দখল করতে হবে।’’

সবংয়ের পরে রায়গঞ্জের কলেজে ঘটনার কড়া নিন্দা করে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, ‘‘রাজ্যের সর্বত্র শিক্ষাঙ্গনে শাসক দলের তাণ্ডবের ঘটনা ঘটেই চলেছে।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy