—ফাইল চিত্র।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ এবং প্রশাসনিক বিষয়ে নিয়ন্ত্রণ নিয়ে রাজভবন বনাম নবান্নের সংঘাত এখন সপ্তমে। এই আবহে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের একাধিক পদক্ষেপের বিরুদ্ধে পথে নামতে চলেছে শাসকদল তৃণমূলের ছাত্র সংগঠন। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের তরফে জানিয়ে দেওয়া হল, ১১ সেপ্টেম্বর অর্থাৎ আগামী সোমবার থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর, শুক্রবার পর্যন্ত পাঁচ দিনব্যাপী রাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দিয়েছে তারা।
ছাত্র পরিষদ তরফে জানানো হয়েছে, রাজ্যের মোট ২২টি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি হবে। সোমবার যেমন উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র পরিষদের কর্মসূচি রয়েছে। একই ভাবে মঙ্গলবার কর্মসূচি রয়েছে আলিপুরদুয়ার বিশ্ববিদ্যালয়, মুর্শিদাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়, রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় এবং কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়, পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মসূচি রয়েছে বুধবার। বিশ্বভারতী, আলিয়া এবং বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বৃহস্পতিবার। শুক্রবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ দেখাবে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ। তাদের এই কর্মসূচির পোস্টারে লেখা হয়েছে— ‘‘রাজ্যের উচ্চ শিক্ষা ব্যবস্থাকে বাঁচাতে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে সচল রাখতে এবং ছাত্রছাত্রীদের স্বার্থ রক্ষা করার লক্ষ্যে অবস্থান বিক্ষোভ।’’
রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে উপাচার্য নিয়োগকে কেন্দ্র করে শিক্ষা দফতরের সঙ্গে রাজভবনের সংঘাত বেশ কিছু দিন ধরেই চলছে। সম্প্রতি যা আরও বেড়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে একের পর এক অন্তর্বর্তী উপাচার্য নিয়োগ করেছেন রাজ্যপাল বোস। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে বসানো হয়েছে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শুভ্রকমল মুখোপাধ্যায়কে। মৌলানা আবুল কালাম আজাদ প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক গৌতম মজুমদারকে উপাচার্য করা হয়েছে। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়েও নতুন উপাচার্য হিসাবে নিয়োগ করা হয়েছে রথীন বন্দ্যোপাধ্যায়কে। পরে আবার শুভ্রকমলকে রবীন্দ্রভারতীর সঙ্গে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়েরও দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে, গত মঙ্গলবার শিক্ষক দিবসের সরকারি অনুষ্ঠান থেকেই মুখ্যমন্ত্রী সরাসরি বিরক্তি প্রকাশ করেছিলেন। তিনি হুঁশিয়ারির সুরেই জানিয়েছিলেন, কোনও বিশ্ববিদ্যালয় রাজভবনের কথা মতো চললে অর্থনৈতিক সহায়তা বন্ধ করে দেবে রাজ্য। সেই হুঁশিয়ারিতেও অবশ্য তেমন লাভ হয়নি। সে দিন রাতেই কৃষ্ণনগরের কন্যাশ্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্বর্তিকালীন উপাচার্য হিসাবে অধ্যাপক কাজল দে-কে নিয়োগ করেন রাজ্যপাল। সে ক্ষেত্রেও রাজ্যের সঙ্গে কোনও রকম আলোচনা করেননি বলে অভিযোগ।
রাজ্যপালের এ হেন আচরণ নিয়ে সরকারের পক্ষে সব চেয়ে বেশি আক্রমণাত্মক হন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। তিনি একের পর এক উপমা দিয়ে রাজ্যপালকে কটাক্ষ করতে থাকেন। এমনই আবহে গত শুক্রবার ব্রাত্য রাজ্যের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারকে তলব করেন। কিন্তু শিক্ষামন্ত্রীর ডাকও ১৭ জন রেজিস্ট্রার উপেক্ষা করেছেন বলে অভিযোগ ওঠে। অনুপস্থিত ওই ১৭ জন রেজিস্ট্রারকে শুক্রবার শোকজ়ের হুঁশিয়ারিও দেন শিক্ষামন্ত্রী। পরে অবশ্য তিনি জানান, অনুপস্থিতির কারণ তিনি জানেন। রাজ্যপালকে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, ‘‘তা হলে হুমকির বাতাবরণ তৈরি করছে কে? হাড় হিম করার ঠান্ডা সন্ত্রাস তৈরি করছে কে? কে তবে ভয় দেখাচ্ছে? রাজার বাড়ি না বিকাশ ভবন?’’
এর পরেই রাজ্যপাল বোস জানান, শনিবার মধ্যরাতে তিনি কিছু একটা পদক্ষেপ করবেন। পরে রাত ১২টা বাজার সামান্য আগে (শনিবার, রাত ১১টা ৪২ মিনিট) রাজভবন থেকে জানা গেল, রাজ্যপাল বোস রাতে দু’টি খামবন্দি গোপন চিঠিতে সই করেছেন। একটি নবান্নে, অন্যটি দিল্লির উদ্দেশে প্রেরিত। যদিও চিঠিতে কী রয়েছে, তা এখনও রাজভবন খোলসা করেনি। সেই চিঠির বিষয় শিক্ষা, না কি অন্য প্রশাসনিক বিষয় না কি তাঁর নিজের ইস্তফা, তা নিয়ে রাত থেকে প্রশাসনিক মহলে তৈরি হয়েছে জল্পনা। এ সবের মধ্যেই রাজ্যপালের বিরুদ্ধে পথে নামতে চলেছে শাসকদলের ছাত্র সংগঠন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy