মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —গ্রাফিক শৌভিক দেবনাথ।
লোকসভা ভোটে বাংলায় কি কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলের জোট হবে? বৃহস্পতিবার তৃণমূলের সর্বময় নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্যে প্রস্তাবিত জোট নিয়ে জল্পনা আরও জোরদার হল।
বৃহস্পতিবার উত্তর ২৪ পরগনার চাকলায় তৃণমূলের কর্মিসভায় মমতা বললেন, ‘‘সারা দেশে ‘ইন্ডিয়া’ থাকবে। বাংলায় তৃণমূল কংগ্রেস লড়াই করবে। কারণ, তৃণমূলই পারে বিজেপিকে শিক্ষা দিতে। সারা ভারতকে পথ দেখাতে।’’
মমতার ওই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে জল্পনা শুরু হয়েছে এ নিয়েই যে, মমতা ঠারেঠোরে বুঝিয়ে দিতে চেয়েছেন, সারা দেশে বিজেপি-বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’ যেমন লড়াই করছে তেমনই করবে। কিন্তু বাংলায় তৃণমূল একার শক্তিতেই বিজেপির বিরুদ্ধে লড়বে। অর্থাৎ, কারও সঙ্গে জোট বেঁধে নয়। তৃণমূলের একাংশের মতে, বাংলায় ‘ইন্ডিয়া’র প্রতিভূ হিসেবে তৃণমূলকেই তুলে ধরতে চেয়েছেন মমতা। আবার অনেকের মতে, জোট বা আসন সমঝোতার আলোচনার আগে তৃণমূল নেত্রী কংগ্রেসের উপর ‘চাপ’ তৈরি করতে চাইলেন। তিনি এটাই বুঝিয়ে দিতে চেয়েছেন যে, বাংলায় তৃণমূলই জোটের ‘চালিকাশক্তি’। তৃণমূলই বিজেপিকে ‘শিক্ষা’ দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট। কারণ, মমতা এক বারও এমন বলেননি যে, বাংলায় কোনও জোট হবে না। প্রসঙ্গত, আসন সমঝোতার প্রশ্নে মমতা বরাবরই বলে এসেছেন যে, রাজ্যে যারা আসল ক্ষমতাধর, তারাই সংশ্লিষ্ট রাজ্যে জোটের ‘নিয়ন্ত্রক’ হবে। ফলে বাংলায় তৃণমূল চাইবে তাদের হাতেই জোটের ‘নিয়ন্ত্রণ’ থাকুক। মমতা সেই বিষয়টিই আরও স্পষ্ট করে দিয়েছেন। যাতে আসন সমঝোতার সময় দর কষাকষিতে তিনি ‘সুবিধাজনক’ অবস্থানে থাকেন।
আবার অনেকে বলছেন, মমতা এই কথা বলে কংগ্রেসকে ‘নমনীয়’ হওয়ার বার্তা দিয়ে থাকতে পারেন। কারণ, এর মধ্যেই পাহাড়ের দুই নেতা বিনয় তামাং এবং অজয় এডওয়ার্ডকে নিয়ে রাহুল গান্ধীর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। যা দেখে অনেকে মনে করছেন, দার্জিলিং আসনে লড়াইয়ের জন্য কংগ্রেস ঘুঁটি সাজাতে শুরু করেছে। তবে বৃহস্পতিবার মমতা যা বলেছেন, তাতে জোট নিয়ে জল্পনা আরও বাড়ল বলেই মনে করা হচ্ছে।
গত প্রায় এক মাস ধরে কংগ্রেস-তৃণমূল জোট নিয়ে নানাবিধ সম্ভাবনার কথা শোনা গিয়েছে। রাহুল গান্ধীর সঙ্গে তাঁর ‘ইন্ডিয়া’র বৈঠক নিয়ে কথা হয়েছিল বলে নিজেই জানিয়েছিলেন মমতা। তার পরেই কংগ্রেসের সূত্রে জানা গিয়েছিল, রাহুলের সঙ্গে মমতার তিনটি আসন ছাড়ার বিষয়ে কথা হয়েছে। আগের বারের জেতা বহরমপুর, মালদহ দক্ষিণ ছাড়াও রায়গঞ্জ আসনটি তাদের ছেড়ে দেওয়ার আশ্বাস মমতা দিয়েছিলেন বলে দাবি করা হয়েছিল দিল্লি কংগ্রেসের সূত্রে। তার পরে গত ১৯ ডিসেম্বর ‘ইন্ডিয়া’র বৈঠকের পরদিনই কংগ্রেস হাইকমান্ড বাংলার নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেন। সেখানে অবশ্য বঙ্গ কংগ্রেসের সিংহভাগ নেতাই তৃণমূলের সঙ্গে জোটের বিষয়ে আপত্তি জানান। সেই আবহে আবার বুধবার মালদহ দক্ষিণের কংগ্রেস সাংসদ আবু হাসেম খান চৌধুরী (ডালু) দাবি করেন, মমতা তাঁদের কথা দিয়ে দিয়েছেন গত বারের জেতা দু’টি আসন ছাড়বেন। পাশাপাশি, আরও কিছু আসন নিয়ে আলোচনা চলছে। তবে ডালু এ-ও জানিয়েছিলেন যে, ওই দু’টি আসন ছাড়ার বিষয়টি তিনি সংবাদমাধ্যম মারফত জেনেছেন। ডালুর সেই বক্তব্যের পরে ২৪ ঘণ্টা কাটার আগেই মমতা বুঝিয়ে দিলেন, বাংলায় তৃণমূলই বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করার মতো শক্তিধর।
প্রসঙ্গত, গত কয়েক মাস ধরেই কংগ্রেসের সম্পর্কে প্রকাশ্যে কড়া মন্তব্য করেননি মমতা। ২১ জুলাইয়ের মঞ্চ থেকেও কংগ্রেস সম্পর্কে দিদি ছিলেন নীরব। কিন্তু বৃহস্পতিবার বেশ কয়েক বার বঙ্গ কংগ্রেসকে আক্রমণ শানান তৃণমূলের সর্বময় নেত্রী। মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের গ্রেফতারির প্রসঙ্গ উল্লেখ করে মমতা বলেন, ‘‘বালু অনেক কাজ করেছে। ওকে অ্যারেস্ট করেছে, যাতে পার্টির কাজ করতে না পারে। আর সিপিএম-কংগ্রেস-বিজেপি রাস্তায় বেরিয়ে পড়েছে।’’ অর্থাৎ, তিন দলকে একই বন্ধনীতে রেখেছেন মমতা। যা সাম্প্রতিক সময়ে শোনা যায়নি। যা শুনে অনেকেই মনে করছেন, বাংলায় তৃণমূল একলা লড়তে পারে, এমন ইঙ্গিতও দিয়ে রেখেছেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy