Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
TMC

Mamata Banerjee: পার্থ-কেষ্ট পর্বের ধাক্কা সামলাতে পাল্টা আক্রমণাত্মক হওয়ার পথে নেমেছে তৃণমূল

তৃণমূল নেতাদের সুর চড়া। শোনা যাচ্ছে হুঁশিয়ারির কণ্ঠস্বরও। আপাতদৃষ্টিতে এগুলি বিচ্ছিন্ন মনে হলেও, এর নেপথ্যে রয়েছে সুচিন্তিত সাংগঠনিক কৌশল।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দু’জনেই পার্থের গ্রেফতারি নিয়ে আক্রমণাত্মক ঢঙেই বক্তব্য রেখেছেন প্রকাশ্যে।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দু’জনেই পার্থের গ্রেফতারি নিয়ে আক্রমণাত্মক ঢঙেই বক্তব্য রেখেছেন প্রকাশ্যে। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ অগস্ট ২০২২ ১৮:১৮
Share: Save:

আক্রমণই রক্ষণের শ্রেষ্ঠ উপায়— প্রথমে পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং পরে অনুব্রত মণ্ডল গ্রেফতার হওয়ার পর, চাপে পড়া তৃণমূলের কৌশল আপাতত এটাই। পার্থকে দল থেকে সরিয়ে দিলেও, তাঁর গ্রেফতারির পর তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের সুর মোটামুটি চড়া-ই ছিল। অনুব্রতর গ্রেফতারির পর জেলায় জেলায় শাসক দলের নানা স্তরের নেতাদের আরও বেশি আক্রমণাত্মক সুর শোনা যাচ্ছে। শোনা যাচ্ছে হুঁশিয়ারির কণ্ঠস্বরও। আপাতদৃষ্টিতে এগুলিকে ক্ষোভ বা অস্বস্তির বিচ্ছিন্ন কিছু বহিঃপ্রকাশ মনে হলেও, আসলে কিন্তু এর নেপথ্যে রয়েছে সুচিন্তিত সাংগঠনিক কৌশল। চাপের মুখে গুটিয়ে থাকা নয়, উল্টে, পাল্টা আক্রমণের ভাষায় শান দিয়ে পরিস্থিতির মোকাবিলা করাই এর উদ্দেশ্য।

পার্থকে দল থেকে সাসপেন্ড করার কথা ঘোষণা করেছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তার আগেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মন্ত্রিত্ব থেকে সরিয়েছেন পার্থকে। কিন্তু দু’জনেই পার্থর গ্রেফতারি নিয়ে আক্রমণাত্মক ঢঙেই বক্তব্য রেখেছেন প্রকাশ্যে। মমতা বিরোধীদের ‘কালি ছেটানোর’ বদলে ‘আলকাতরা’র হুঁশিয়ারি দেন। অভিষেক বলেন, “আর একটা দল দেখান যে তাদের মন্ত্রীকে এ ভাবে সরিয়ে দিতে পারে।”

এই আক্রমণের সুর বজায় ছিল ১৯ জন নেতানেত্রীর সম্পদ বৃদ্ধি নিয়ে উঠে আসা মামলার ক্ষেত্রেও। রাজ্যের বর্তমান ছয় মন্ত্রীর নাম এই তালিকায় রয়েছে। ফিরহাদ হাকিম, অরূপ বিশ্বাস, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, ব্রাত্য বসু, মলয় ঘটক এবং শিউলি সাহা। ছ’জনই একসঙ্গে সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে বলেন, এই তালিকা আংশিক। সম্পদ বৃদ্ধি নিয়ে মামলার তালিকায় কংগ্রেসের অধীর চৌধুরী বা সিপিএমের সূর্যকান্ত মিশ্রের নাম থাকলেও তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে চেপে যাওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ আনেন তাঁরা। সেই সাংবাদিক সম্মেলনের ভাষা এবং প্রকাশভঙ্গিও ছিল বেশ আক্রমণাত্মক।

তবে আক্রমণ তীক্ষ্ণতর হয়ে উঠেছে অনুব্রত গ্রেফতার হওয়ার পর। বিরোধীরা তৃণমূলের গায়ে ‘চোর’ তকমা লাগাতে ব্যস্ত। বিজেপি তাদের কর্মসূচির নামই দিয়েছে, ‘চোর ধরো, জেল ভরো।’ বার বার বিরোধীদের বক্তব্য, মমতা থেকে অভিযেকের বিরুদ্ধে দুর্নীতিতে মদতের অভিযোগ উঠছে। এমন পরিস্থিতিতে শনিবার চুঁচুড়ায় তৃণমূলের প্রতিবাদ কর্মসূচি থেকে স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক অসিত মজুমদার স্লোগান দেন, ‘‘অভিষেকের নামে কুৎসা হলে ধোলাই হবে, পেটাই হবে।’’

একই মঞ্চ থেকে একযোগে সিপিএম, বিজেপি এবং কংগ্রেসের উদ্দেশে হুঁশিয়ারি দেন শ্রীরামপুরের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘মমতাদি একটা ভুল করেছেন। দিদির সমালোচনা করা আমার উচিত নয়। কিন্তু আমার এখন যেন মনে হচ্ছে, আগে মনে হয়নি কখনও, ‘বদলা নয়, বদল চাই’— এর বদলে ‘বদলা চাই’— এটাই হওয়া উচিত ছিল।’’ এখানেই থামেননি কল্যাণ। বলেন, ‘‘যে ভাবে সিপিএম, কংগ্রেস এবং বিজেপি নোংরামি করছে, তাতে আমাদের সেই দিনই বলা উচিত ছিল বদলার বদলে বদলা নিতে হবে।’’

আরও গল উঁচিয়ে কামারহাটির বিধায়ক মদন মিত্র শনিবার বলেন, ‘‘দিলীপ ঘোষকে বলি, বেশি ইট-পাটকেল করবেন না। কলকাতা-সহ বাংলায় যদি তৃণমূল কর্মীদের গায়ে হাত পড়ে তা হলে ইট-পাথর তো দূরের কথা, কার কোমরে-গলায় বকলস পরায় জানেন তো? আপনাদের গলায় এ বার বকলস পরিয়ে ঘোরানো হবে। তার জন্য তৈরি থাকুন।’’

একই রকম চড়া সুরে রবিবার দমদমের সাংসদ সৌগত রায় বলেন, ‘‘যারা আমাদের বেশি নিন্দা করছে, তৃণমূলের সমালোচকদের গায়ের চামড়া দিয়ে পায়ের জুতো তৈরি হবে। এই দিন অপেক্ষা করছে।’’ এর পরে সৌগত আরও বলেন, ‘‘তৃণমূলের সব চোর বলে কেউ মিছিল করলে তাঁদের বিরুদ্ধে এমন ব্যবস্থা নেব যে পার্টি অফিসে ঢুকে যেতে হবে।’’ এ ছাড়াও জেলাস্তরের অনেক নেতাই হুমকি বা হুঁশিয়ারির সুরে কথা বলতে শুরু করে দিয়েছেন প্রকাশ্যে।

তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, বিভিন্ন জায়গায় অসিত, কল্যাণ, মদন, সৌগতদের এই বক্তব্য মোটেও বিচ্ছিন্ন নয়। আক্রমণের মাধ্যমেই তৈরি হওয়া পরিস্থিতি থেকে নিষ্ক্রমণের খোঁজ করছে দল। রাজ্যস্তরের এক নেতা বলেন, ‘‘যাঁরা আমাদের বিরুদ্ধে কথা বলছেন তাঁরা যে কেউ ধোয়া তুলসিপাতা নয় সেটাই আমরা তুলে ধরব। দলের সিদ্ধান্ত, গোটা রাজ্যেই বিরোধীদের যথাযোগ্য জবাব দেওয়া হবে।’’

তবে তাতেও চুপ নেই বিরোধী পক্ষ। বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘বাংলার রাজনীতিকে ওরা আরও কত নীচে নিয়ে যেতে চাইছেন? কার বিরুদ্ধে বদলা নেবেন? নেতাদের কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি পাওয়া গিয়েছে। এর পরও যদি ওদের কেউ চোর বলে তা হলে তার বদলা নেবেন? ওঁরা যেন ভুলে না যান যে বাংলার মানুষ এখন খুবই সজাগ। যাঁরা একসময় জিতিয়েছিলেন তাঁরাই এ বার শুধু হারানোই নয়, বদলও নেবেন।’’ প্রায় একই সুরে সিপিএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেন, ‘‘এটা ওঁদের পুরনো নীতি। নিজেদের দোষ ঢাকতে পাল্টা আক্রমণ করা। কিন্তু এ বার আর সেটা করে কোনও লাভ হবে না। মানুষের সামনে তৃণমূলের মুখোশ খুলে গিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীও আর ‘সততা’-র দাবি করতে পারবেন না।’’

তৃণমূল সূত্রে জানা যাচ্ছে, আগামী কয়েক দিনে বিরোধীদের প্রতি পাল্টা আক্রমণের ঝাঁজ আরও বাড়বে। কিন্তু তাতেও কি দলের ভাবমূর্তিতে লাগা আঘাত পুরোপুরি এড়িয়ে যাওয়া যাচ্ছে? এমন প্রশ্ন রয়েছে তৃণমূলেই। ইডি ও সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার দু’জনের একজন দলের মহাসচিব ছিলেন। অপরজন বীরভূমের জেলা সভাপতি। আরও বড় কথা, দু’জনেই দলের জাতীয় কর্মসমিতির সদস্য। তাই ধাক্কা কম নয়। সেই ধাক্কা সামাল দিতে আপাতত বিরোধীদের ত্রুটি খোঁজার উদ্যোগ বাড়িয়ে দিয়েছে তৃণমূল। পার্থ গ্রেফতার পরেই মেহুল চোক্সী থেকে নীরব মোদীর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ছবি সামনে এনেছে রাজ্যের শাসক দল। কবে কোথায় কোন বিজেপি ও কংগ্রেস ঘনিষ্ঠদের থেকে কোথায় কালো টাকা উদ্ধার হয়েছে, তাঁর নজিরও সামনে আনার চেষ্টা হয়েছে।

আক্রমণ যে আরও তীব্র হবে, তা স্পষ্ট হল রবিবার তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেত্রীর বক্তৃতাতেও। পার্থের বিধানসভা কেন্দ্রে দাঁড়িয়ে অনুব্রতের গ্রেফতারির বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানালেন মমতা।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy