হাজরায় তথাগত রায়ের বিতর্কিত টুইটের প্রতিবাদে তৃণমূলের বঙ্গজননী বাহিনী। —নিজস্ব চিত্র
যে মন্তব্য তিনি করেছেন, ক্রিকেটের পরিভাষায় তাকে লোভনীয় ডেলিভারি বলা যায়। কোনও ব্যাটস্ম্যানই এ সুযোগ ছাড়বেন না। অতএব তথাগত রায়ের মন্তব্যকে হাতিয়ার করে বিজেপি-কে বেকায়দায় ফেলার সব চেষ্টা শুরু করে দিল তৃণমূল। বাঙালি মেয়েরা মুম্বইয়ে বার ডান্স করেন— তথাগতর এই মন্তব্যকে ‘বাংলার অপমান, বাংলার মা-বোনেদের অপমান’হিসেবে আখ্যা দিয়ে ধর্না শুরু করল তৃণমূলের নতুন শাখা সংগঠন বঙ্গজননী বাহিনী। বৃহস্পতিবার হাজরা মোড়ে অবস্থান বিক্ষোভ চলল কাকলি ঘোষ দস্তিদার, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, শশীপাঁজাদের নেতৃত্বে। শুক্রবার অবস্থান বিক্ষোভ হবে শ্যামবাজারে।
স্কুলের পাঠ্যক্রমে তৃতীয় ভাষা হিসেবে হিন্দির অন্তর্ভুক্তির যে প্রস্তাব কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক এনেছিল খসড়া শিক্ষানীতিতে, সেই সিদ্ধান্তকে সমর্থন করতে গিয়েই বিতর্কটার জন্ম দিয়েছেন প্রাক্তন বিজেপি নেতা তথা মেঘালয়ের রাজ্যপাল তথাগত রায়। যাঁরা হিন্দির বিরোধিতা করছেন, তাঁদের আক্রমণ করে দিন দুয়েক আগে একটি লম্বা টুইট করেন তথাগত রায়। বাংলা যে হেতু বিদ্যাসাগর-রবীন্দ্রনাথ-নেতাজির রাজ্য সে হেতু এখানে হিন্দি শেখা বাধ্যতামূলক হওয়া উচিত নয়— এমন যুক্তি অনেকে দেখাচ্ছেন বলে তথাগত উল্লেখ করেন নিজের টুইটে। তার পরে তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘‘প্রথমত, এই চার জন মনীষীর সঙ্গে হিন্দি শেখার কী বিরোধ, তা আমার বোধগম্য হল না। দ্বিতীয়ত, হায়, এঁদের কে বোঝাবে, এই মনীষীদের কাল বহুদিন গত, তার পর বাংলার বৃহদংশও গত, এখন বাঙালি ছেলেরা হরিয়ানা থেকে কেরল পর্যন্ত সব জায়গায় ঘর ঝাঁট দেয়, বাঙালি মেয়েরা মুম্বইতে বার-ডান্স করে, যা আগে অকল্পনীয় ছিল।’’
তথাগতর এই মন্তব্যকেই হাতিয়ার করেছে তৃণমূল। নেতৃত্বের নির্দেশে বঙ্গজননী বাহিনী পথে নেমেছে তথাগতকে ধিক্কার জানাতে। বুধবার হাজরা মোড়ে যে ধর্না তথা অবস্থান বিক্ষোভ হয়েছে, তাতে তৃণমূলের মহিলা কর্মীদের হাতে হাতে ছিল তথাগত রায়ের ছবি সম্বলিত ফেস্টুন। ছবির উপরে লেখা ‘ছিঃ’। আর ছবির নীচে তথাগতর বিতর্কিত টুইটের একাংশ তুলে ধরা।
শুধু তথাগত রায় অবশ্য নন, বঙ্গজননী বাহিনীর নিশানায় এ দিন ছিলেন হুগলির বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়ও। তাঁর ছবি সম্বলিত ফেস্টুনও ছিল রাজ্যের শাসক দলের মহিলা কর্মীদের হাতে হাতে।
দুপুর ১টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত অবস্থান বিক্ষোভের ডাক দিয়েছিল তৃণমূল। মন্ত্রী, সাংসদ, বিধায়ক, কাউন্সিলর— তৃণমূলের বিভিন্ন স্তরের মহিলা জনপ্রতিনিধিরা ভাষণ দেন সেই অবস্থান মঞ্চ থেকে। বঙ্গজননী বাহিনীর চেয়ারপার্সন কাকলি ঘোষদস্তিদার, তৃণমূল মহিলা কংগ্রেসের সভানেত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বা রাজ্যের নারী, শিশু ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী শশী পাঁজা, বৃহস্পতিবার প্রত্যেকের বক্তব্যের মূল সুরই ছিল এক— হিন্দি ভাষাকে এ রাজ্যের উপরে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে এবং বাঙালিদের আরএসএস-বিজেপি অপমান করছে।
আরও পড়ুন: মমতার সঙ্গে বৈঠক, ভোটে বিপর্যয়ের ধাক্কা সামলাতে প্রশান্ত কিশোরের হাত ধরছে তৃণমূল
আরও পডু়ন: রাজ্যে রাজ্যে কংগ্রেসে বিদ্রোহ, তেলঙ্গানায় দল ছাড়ার হিড়িক, পঞ্জাবে বেসুরো সিধু
তৃণমূল ময়দানে নামার আগে থেকেই অবশ্য বিষয়টি নিয়ে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছেন তথাগত। সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রবল আক্রমণের মুখে পড়েছেন তিনি। টুইটারেই আবার সে সব আক্রমণের কয়েকটির জবাবও তথাগত দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। তিনি টুইট করেছেন,‘‘...আমি ইচ্ছা করে এগুলো বাংলায় টুইট করেছি যাতে এই আলোচনা বাঙালিদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে।’’ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর রিপোর্ট তুলে ধরে তথাগত রায় লিখেছেন, নারী ও শিশু পাচারে পশ্চিমবঙ্গ দেশের মধ্যে প্রথম স্থানে রয়েছে। তবে শুধু পাচার হয়ে নয়, অনেক বাঙালি মেয়েই কোথাও কোনও কাজ না পেয়ে মুম্বইয়ের ডান্স বারে নাচতে চলে যান— এমনও লিখেছেন তথাগত।
যুক্তি তিনি যা-ই দিন, মেঘালয়ের রাজ্যপাল তথা প্রাক্তন বিজেপি নেতার মন্তব্যকে হাতিয়ার করে বিজেপির বিরুদ্ধে সুর তুঙ্গে তোলার চেষ্টা সবরকম ভাবেই করছে তৃণমূল। সঙ্গে লকেট চট্টোপাধ্যায়ের নামটাও তৃণমূল জুড়ে দিয়েছে কৌশলে। তবে এ বিষয়ে লকেটের কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy