তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র। ছবি: পিটিআই।
মহুয়া মৈত্রের বিরুদ্ধে ঘুষ নিয়ে সংসদে প্রশ্ন তোলার অভিযোগের ব্যাপারে তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্ব সতর্ক ভাবে পা ফেলছেন। মহুয়ার বিরুদ্ধে বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে লোকসভার স্পিকারকে চিঠি লেখার পরে ২৪ ঘণ্টা কেটে গেলেও তৃণমূলের তরফে এখনও কোনও বিবৃতি দেওয়া হয়নি। উল্টো দিকে এই ঘটনায় এ বার মোদী সরকার ও আদানি গোষ্ঠী জড়িয়ে পড়েছে। জয় অনন্ত দেহাদ্রাই নামে যে আইনজীবী মহুয়ার বিরুদ্ধে সিবিআই ও বিজেপি সাংসদ নিশিকান্তকে চিঠি লিখেছিলেন, তিনি মহুয়ার এক সময়ের ঘনিষ্ঠ বন্ধু বলে জানা গিয়েছে। অভিযোগ, বন্ধুত্বে বিচ্ছেদের পর থেকেই তিনি মহুয়াকে হুমকি দিচ্ছিলেন।
রবিবার বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে লোকসভার স্পিকারকে অভিযোগ জানিয়েছিলেন, মহুয়া শিল্পপতি দর্শন হীরানন্দানির থেকে ঘুষ-বাবদ টাকা, উপহার নিয়ে তাঁর ব্যবসায়িক স্বার্থরক্ষায় প্রশ্ন তুলেছিলেন। হীরানন্দানি গোষ্ঠী এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। কিন্তু আজ কেন্দ্রীয় ইলেকট্রনিক্স ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী রাজীব চন্দ্রশেখর বলেছেন, এই সংস্থা কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে যে বিষয়ে দরবার করছিল, তৃণমূল সাংসদের প্রশ্নেও সেই একই বিষয় রয়েছে। ওই সংস্থার প্রধান যখন তাঁর সঙ্গে দেখা করেছিলেন, তিনি যে ভাষায় কথা বলেছিলেন, সাংসদের প্রশ্নের ভাষার সঙ্গে তার মিল রয়েছে। উদাহরণ হি
সেবে ১৬ মার্চ, ২০২২-এ মহুয়ার লোকসভায় করা একটি লিখিত প্রশ্নও তুলে ধরেছেন মন্ত্রী। নিশিকান্তের অভিযোগ ছিল, মহুয়া সংসদের পোর্টালে তাঁর লগ-ইন আইডি ও পাসওয়ার্ড দর্শন হীরানন্দানিকে দিয়ে দিয়েছিলেন। আজ তিনি কেন্দ্রীয় ইলেকট্রনিক্স ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবকে চিঠি লিখে এ বিষয়ে তদন্তের দাবি জানিয়েছেন।
দিল্লির আইনজীবী জয় অনন্ত দেহাদ্রাই কৃষ্ণনগরের সাংসদ মহুয়া মৈত্রের বিরুদ্ধে নিশিকান্ত দুবেকে চিঠি লিখেছিলেন। জয় অনন্তের দেওয়া নথির ভিত্তিতেই নিশিকান্ত স্পিকারকে চিঠি লেখেন। জয় অনন্ত সিবিআইয়ের কাছেও অভিযোগ জানিয়েছেন। আজ আদানি গোষ্ঠীর মুখপাত্র বিবৃতি দিয়ে বলেছে, ‘জয় অনন্ত দেহাদ্রাই সিবিআইয়ের কাছে অভিযোগে হলফনামা দিয়ে জানিয়েছেন, মহুয়া মৈত্র ও দর্শন হীরানন্দানি নির্দিষ্ট ভাবে গৌতম আদানি ও তাঁর সংস্থাকে নিশানা করেছিলেন।…এই ঘটনাক্রম আমাদের ৯ অক্টোবরের বিবৃতিতেই সিলমোহর দিচ্ছে, যেখানে আমরা বলেছিলাম, কিছু ব্যক্তি ও গোষ্ঠী আমাদের সুনাম, বাজারে অবস্থান নষ্ট করার চেষ্ট করছে।’
উল্টো দিকে আজ মহুয়া মৈত্র তাঁর বিরুদ্ধে ‘মিথ্যে, মানহানিকর অভিযোগ’ তোলার জন্য বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত ও আইনজীবী জয় অনন্তকে আইনি নোটিস পাঠিয়েছেন। যে সব সংবাদমাধ্যম তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগের খবর প্রকাশ করেছে, তাদেরও আইনি নোটিস পাঠিয়েছেন মহুয়া। তাৎপর্যপূর্ণ হল, ওই আইনি নোটিসে জানানো হয়েছে, সিবিআই ও নিশিকান্তের কাছে অভিযোগ জানানো আইনজীবী জয় অনন্ত ও মহুয়া ‘ঘনিষ্ঠ বন্ধু’ ছিলেন। পরে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। তার পরে জয় অনন্ত মহুয়াকে হুমকি দিয়ে মেসেজ করেন। তাঁর সরকারি বাসভবনে বিনা অনুমতিতে ঢুকে মহুয়ার পোষা কুকুর ও অন্যান্য জিনিসপত্র চুরি করে নিয়ে যান। পরে কুকুর ফেরত দেন। বারবার হেনস্থা করায় মহুয়া জয় অনন্তের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগও জানিয়েছিলেন। সূত্রের বক্তব্য, রবিবার মহুয়ার কিছু ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়া হয়। তা জয় অনন্তেরই কাজ বলে সন্দেহ। কারণ, এর মধ্যে কিছু ছবিতে জয় অনন্ত নিজেই মহুয়ার সঙ্গে ছিলেন। এখন তিনিই সিবিআইকে চিঠি লিখে মহুয়া বিভিন্ন সময়ে দর্শন হীরানন্দানির থেকে নানা সময়ে নগদ টাকা, দামি ব্যাগ, প্রসাধনী উপহার পেয়েছিলেন বলে অভিযোগ জানিয়েছেন।
এই পরিস্থিতিতে তৃণমূল নেতৃত্ব অত্যন্ত সতর্ক হয়ে পা ফেলতে চাইছে। তৃণমূলের লোকসভায় দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপির অভিযোগের বিরুদ্ধে পাল্টা প্রশ্ন তুলেছিলেন। মহুয়া নিজে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগের জবাব দিচ্ছেন বলে জানিয়েছিলেন। উদ্ধব ঠাকরের শিবসেনার সঞ্জয় রাউত, জেডিইউ নেতা নীরজ কুমার মহুয়ার পাশে দাঁড়িয়েছেন। রাউত বলেছেন, ‘‘কেউ আদানি নিয়ে প্রশ্ন তুলছে, বিজেপির তা হজম হচ্ছে না। বিজেপি মহুয়ার মনোবল ভাঙতে চাইছে।’’ নীরজ প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘কে সংসদে কী প্রশ্ন তুলবেন, তা কি বিজেপি ঠিক করবে?” অন্য দলের সাংসদেরা মুখ খুললেও তৃণমূলের বিশেষ কেউ এ নিয়ে মুখ খোলেননি। তৃণমূল কংগ্রেস কোনও দলীয় বিবৃতি দেয়নি।
মহুয়া মৈত্রের প্রথম থেকেই অভিযোগ ছিল, আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে প্রশ্ন তোলার জন্যই তাঁর বিরুদ্ধে অপপ্রচার শুরু হয়েছে। আইনি নোটিসে মহুয়া বলেছেন, তিনি নিশিকান্ত দুবের ভুয়ো ডিগ্রি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন বলে নিশিকান্ত তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যে অভিযোগ তুলেছেন। আজ আদানি গোষ্ঠীর বিবৃতির জবাবে মহুয়া এক্স-হ্যান্ডলে লিখেছেন, ‘‘মিস্টার এ, এই বানানো বিবৃতিটাই আপনার একমাত্র হাতিয়ার? ভুয়ো ডিগ্রিওয়ালা সাংসদ ও হতাশ প্রাক্তনের মিথ্যে কথাই আপনার ভরসা?’’ মহুয়া আরও লিখেছেন, ‘‘যত ক্ষণ না ইডি, সিবিআই ১৩ হাজার কোটি টাকার কয়লা কেলেঙ্কারির তদন্ত করছে, তত ক্ষণ আমি থামব না। আমি শুনেছি, নরেন্দ্র মোদীও আপনাকে ও আপনার প্রতারণা নিয়ে বিরক্ত।’’ সংসদের পোর্টালে অন্য কারও লগ-ইন করা নিয়ে মহুয়ার বক্তব্য, সাংসদের কাজকর্ম তাঁর আপ্ত সহায়ক, সহায়ক, অন্যান্যরা করে থাকে। সব সাংসদেরই লগ-ইন তথ্য প্রকাশ করা হোক।
মহুয়া যে শিল্পপতিকে লগ-ইন আইডি দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ, সেই দর্শন হীরানন্দানি বর্তমানে হীরানন্দানি গোষ্ঠীর সিইও। তাঁদের তথ্যভান্ডার বা ডেটা, জ্বালানির ব্যবসার জন্যও সংস্থা রয়েছে। কেন্দ্রীয় তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রীর অভিযোগ ছিল, মহুয়া ২০২২-এ বিভিন্ন অ্যাপ নিষিদ্ধ করা, অ্যাপ থেকে বিদেশে তথ্য চুরি যাওয়া, তথ্যভান্ডারকে এ দেশে রাখা নিয়ে সরকারের নীতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। ওই শিল্পপতিও তাঁর কাছে একই দরবার করেছিলেন। সেই ভাষাতেই মহুয়া সংসদে প্রশ্ন তুলেছেন।
মহুয়ার জবাব, ‘‘আমি তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রকের সংসদীয় কমিটি ও তথ্য সুরক্ষা নিয়ে যৌথ সংসদীয় কমিটির সদস্য। যদি অন্য দেশ অ্যাপ থেকে তথ্য চুরি করতে পারে, তা হলে অন্য দেশে রাখা তথ্য থেকে চুরি করতে পারে না? যে কোনও ভারতীয়ের কাছেই এটা ন্যায্য প্রশ্ন। অন্য কারও হয়ে কথা বলছি বলে আমার বুদ্ধিমত্তাকে অপমান করবেন না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy