আইএনএলডি নেতা ওমপ্রকাশ চৌটালা। ফাইল চিত্র।
বৃহস্পতিবার তৃণমূল কংগ্রেস বলেছিল, ‘গাঁয়ে মানে না আপনি মোড়ল’!
শুক্রবার বিরোধী শিবিরের একাংশ বলছে, ‘এ যেন চোরের উপর রাগ করে মাটিতে ভাত খাওয়ার শামিল’!
রবিবার হরিয়ানার ফতেবাদে আইএনএলডি নেতা ওমপ্রকাশ চৌটালা আয়োজিত সমাবেশের আগে দ্বিধাবিভক্ত বিরোধী রাজনীতি। এনসিপি প্রধান শরদ পওয়ারের উপর ধারাবাহিক ভাবে ক্ষোভ উগরে দেওয়া তৃণমূল শীর্ষ পর্যায়ের প্রতিনিধি পাঠাচ্ছে না ওই সমাবেশে। সূত্রের বক্তব্য, তৃণমূল কংগ্রেসের ধারণা, শরদ পওয়ার ফের বিরোধী জোটের ‘মসিহা’ হয়ে উঠতে চাইছেন। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের তিক্ত অভিজ্ঞতার পর, তাতে আর শামিল হতে চায় না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল। তৃণমূল পাঠাচ্ছে প্রাক্তন সাংসদ, বর্তমানে জোড়াসাঁকোর বিধায়ক বিবেক গুপ্তকে। আর এখনও পর্যন্ত পাওয়া খবর অনুযায়ী অন্য দলের নেতাদের মধ্যে যাচ্ছেন জেডিইউ-র নীতীশ কুমার, এনসি-র ফারুক আবদুল্লা, আরজেডি-র তেজস্বী যাদব, এনসিপি-র শরদ পওয়ার, ডিএমকে-র কানিমোঝি, সিপিএমের সীতারাম ইয়েচুরিরা। থাকবেন রাজস্থানের নির্দল সাংসদ হনুমন্ত বেনিওয়াল। যেতে পারেন শিবসেনা নেতা উদ্ধব ঠাকরেও।
চৌটালার তরফে ওই সমাবেশে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। দল স্থির করেছিল, যাবেন রাজ্যসভার মুখ্যসচেতক সুখেন্দুশেখর রায়। কিন্তু অনিবার্য কারণে সুখেন্দুশেখর যেতে না পারায় স্থির হয়েছে পাঠানো হবে বিবেককে। জাতীয় রাজনীতির শীর্ষ পর্যায়ে যাঁকে গুরুত্ব পেতে দেখা যায়নি কখনও।
কংগ্রেস এই সমাবেশে আমন্ত্রিত নয়। তাই অকংগ্রেসী বিরোধী এই সমাবেশে বিভিন্ন আঞ্চলিক দল যখন তাদের শীর্ষ নেতাকে পাঠাচ্ছে, তখন তৃণমূল কেন এক জন সংসদীয় শীর্ষ নেতাকেও পাঠাচ্ছে না? এই প্রশ্নের সরাসরি উত্তর দেয়নি দল। তবে দলীয় সূত্রে জানানো হয়েছে, এই সমাবেশে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছেন শরদ পওয়ার। যিনি রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে ‘দ্বিচারিতা’ করেছিলেন।
তৃণমূলের অভিযোগ, এখন তিনি বিজেপির হয়েও ‘গোপনে ব্যাটিং’ করছেন (কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার ভয়ে) আবার কংগ্রেস এবং সিপিএম-কেও উৎসাহ দিচ্ছেন। এ হেন পওয়ার-সঙ্গ কদাচ নয়! কিন্তু রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে, এতে কি বিরোধী রাজনীতিতে দলছুট হয়ে পড়ল না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল?
রবিবারই নয়াদিল্লি আসছেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার এবং আরজেডি নেতা লালু প্রসাদ। সোমবার অর্থাৎ হরিয়ানা বৈঠকের পরের দিন, কংগ্রেস নেত্রী সনিয়া গান্ধীর সঙ্গে তাঁরা বৈঠক করবেন বলে স্থির রয়েছে। রাজনৈতিক শিবিরের মতে, হরিয়ানার বৈঠকটি জাতীয় বিরোধী রাজনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে চলেছে। দেবীলালের পথানুসারে আইএনএলডি-র শীর্ষ নেতৃত্বের বক্তব্য, তৃতীয় ফ্রন্ট গড়ার এটি একটি প্রয়াস। এখানেকংগ্রেস চাইলে বাইরে থেকে যোগ দিতে পারে।
সাধারণ ভাবে এ হেন ফ্রন্টই তৃণমূলের কাম্য, যেখানে কংগ্রেস নেতৃত্বে নেই। ফতেবাদের মঞ্চ সেই অর্থে তৃণমূলের জন্য বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ডাক দেওয়ার এক আদর্শস্থল। যে নেতারা যাচ্ছেন, তাঁদের চেয়ে সংসদে মমতার শক্তিও বেশি। কিন্তু পওয়ার তাঁদের সঙ্গে রাজনৈতিক বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন এই অভিযোগকে জিইয়ে রেখে, এমন একটি মঞ্চকে পূর্ণ শক্তিতে কাজে না-লাগানো, অর্থহীন বলেই মনে করছেন বিরোধী নেতাদের অনেকেই।
দ্বিতীয়ত, নীতীশ কুমারের ভূমিকা এখানে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে চলেছে। চৌটালারা যতই কংগ্রেসকে বাইরে রেখে এগোনোর বার্তা দিন না কেন, নীতীশের কৌশল, কংগ্রেসকে নিয়ে বিজেপি-বিরোধিতায় অগ্রসর হওয়া। সে ক্ষেত্রে এই তথাকথিত তৃতীয় ফ্রন্ট এবং কংগ্রেসের মধ্যে তিনি সংযোগ সেতুর কাজটি করতে পারবেন। জেডিইউ নেতা কে সি ত্যাগীর কথায়, “নীতীশ কুমারের জোট ফর্মুলায় কংগ্রেস, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অরবিন্দ কেজরীওয়াল, সবাই শামিল। আমরা রাজনৈতিক অস্পৃশ্যতায় বিশ্বাস করি না।”
ওই সমাবেশে ডাকা হয়েছে বিজেপির প্রবীণ জাঠ নেতা চৌধরি বীরেন্দ্র সিংহকে। তাঁকে অবশ্য ব্যক্তিগত সম্পর্কের জেরে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন চৌটালা। ৪২ বছর কংগ্রেসের সঙ্গে থাকার পর ২০১৪ সালে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন হরিয়ানার এই নেতা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy