জয়েন্ট মেইন পরীক্ষায় আঞ্চলিক ভাষা বৈষম্যের অভিযোগ তুলে সরব হলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।—ছবি পিটিআই।
জয়েন্ট এন্ট্রান্স মেইন (জেইই মেইন) পরীক্ষায় আঞ্চলিক ভাষার মধ্যে কেন শুধু গুজরাতিতে হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে এ বার পথে নামছে তৃণমূল।
তৃণমূল ভবনে দলের বিধায়ক-সাংসদদের নিয়ে বৈঠকে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নির্দেশ দেন, আগামী ১১ নভেম্বর রাজ্যজুড়ে সব ব্লক এবং ওয়ার্ডে মিছিল করা হবে। ওই দিন যুব তৃণমূলকেও কলকাতায় মিছিল করতে বলেছেন মমতা। জয়েন্টের পাশাপাশি নিট (ডাক্তারির সর্বভারতীয় পরীক্ষা)-ও সব আঞ্চলিক ভাষায় করার দাবি জানিয়েছেন মমতা। অন্যান্য রাজ্যও যাতে আঞ্চলিক ভাষায় পরীক্ষা নেওয়ার দাবি তোলে, তার জন্য তিনি রাজ্যগুলিকে অনুরোধ করবেন বলেও মমতা জানান।
তবে কেন হিন্দি, ইংরাজির পাশাপাশি শুধু গুজরাতি ভাষায় জয়েন্ট মেইন পরীক্ষা হবে, এই প্রশ্ন তুলে তৃণমূল নেত্রী বিভেদের রাজনীতি করছেন বলে সরব হলেন গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রূপাণি। তাঁর বক্তব্য, ‘‘মিথ্যা অভিযোগ তোলায় ক্ষমা চাওয়া উচিত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের।’’ তবে জাতীয় টেস্টিং এজেন্সি জয়েন্ট মেইন পরীক্ষায় আঞ্চলিক ভাষাগুলির মধ্যে একমাত্র গুজরাতি ভাষাকে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্তে আঞ্চলিক বৈষম্যের অভিযোগ তুলে গত মঙ্গলবার সরব হন তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সিপিএমের বিধায়ক সুজন চক্রবর্তী। সরব হন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও।
বিতর্কের সূত্রপাতেই কেন্দ্র জানিয়েছিল, ২০১৩ সালে দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারের আমলে ঠিক হয়, দেশের সমস্ত ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে পড়ুয়া ভর্তি করা হবে জেইই মেইন-এর ফলের উপরে। একমাত্র গুজরাত কেন্দ্রের সেই নীতি মেনে রাজ্য জয়েন্ট পরীক্ষা বন্ধ করে দেয়। ঠিক হয়, সর্বভারতীয় যে জেইই মেন পরীক্ষা হবে সেই পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে নিজেদের রাজ্যের ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজগুলিতে পড়ুয়া ভর্তি করবে গুজরাত। তাই ওই রাজ্যের গুজরাতি মাধ্যমের পড়ুয়ারা যাতে সর্বভারতীয় পরীক্ষায় বঞ্চনার শিকার না হয় তার জন্য সিবিএসই হিন্দি, ইংরেজির সঙ্গে গুজরাতি ভাষায় পরীক্ষার ব্যবস্থা হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে গুজরাতের ধাঁচেই এগিয়ে আসে মহারাষ্ট্রও। গুজারাতির পাশাপাশি পরীক্ষার ভাষা হিসাবে অন্তর্ভুক্ত হয় মরাঠী ও উর্দুও। কিন্তু ২০১৬ সালের পর ওই ব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে আসে মহারাষ্ট্র। ফলে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয় মরাঠী ও উর্দু ভাষা। পরবর্তী সময়ে ওই ব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে আসে গুজরাতও।
তাহলে কেন এখনও হিন্দি ও ইংরাজির সঙ্গে গুজরাতি ভাষাকে পরীক্ষার মাধ্যম হিসাবে রাখা হয়েছে?
ন্যাশনাল টেস্টিং এজেন্সি বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, ২০১৬ সালে গুজরাত পুরনো ব্যবস্থায় ফিরে যায়। কিন্তু গুজরাত রাজ্যের পক্ষ থেকে জেইই মেনের পরীক্ষায় গুজরাতি ভাষায় প্রশ্নপত্র চালিয়ে যাওয়ার অনুরোধ করা হয়েছিল। গুজরাত ছাড়া অন্য কোনও রাজ্য সে রাজ্যের আঞ্চলিক ভাষায় প্রশ্নপত্র রাখার জন্য আবেদন রাখেনি, তাই সেই ভাষায় প্রশ্ন রাখা হয়নি।
মমতা অবশ্য এ দিন দাবি করেন, ‘‘শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, বেশ কয়েক মাস আগে আমাদের শিক্ষা দফতরও বাংলায় প্রশ্নের জন্য আবেদন জানিয়ে চিঠি পাঠিয়েছে। কেন্দ্র কোন চিঠি কবে পায় না পায়, তা তো জানা যায় না!’’
মমতার বক্তব্য, ‘‘মাতৃভাষায় প্রশ্ন হলে সব রাজ্যের ছেলেমেয়েরাই ভাল উত্তর দিতে পারে। তাতে বেশি নম্বর পেতে পারে। শুধু গুজরাতিতে হলে ওই রাজ্যের ছেলেমেয়েদের ভাল নম্বর পাওয়ার সুযোগ থাকবে।’’ তাঁর প্রশ্ন, ‘‘গুজরাতের আবেদন যদি মানা হয়, তা হলে মহারাষ্ট্র আর বাংলার আবেদন মানা হবে না কেন?’’ এ দিন ফের সর্বভারতীয় জয়েন্টের প্রশ্ন বাংলাতেও করার আর্জি জানিয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন পার্থবাবু।
শুধু কেন গুজরাতি, এই প্রশ্ন তুলে বাংলা-সহ সব আঞ্চলিক ভাষায় প্রশ্নের দাবি জানাতে আজ, শুক্রবার রাজ্যপালের দ্বারস্থ হবেন বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী এবং বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান।
কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় আবার মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে টুইটে লিখেছেন, ‘‘তাড়াতাড়ি বাংলায় জয়েন্টের প্রশ্নপত্র বানানোর অনুরোধ জানিয়ে চিঠি লিখে পাঠিয়ে দিন। এটা যাতে সত্বর করা যায়, তা আমি নিজে দেখব।’’
অন্যদিকে, রূপাণি মমতাকে আক্রমণ করে বলেন, ‘‘ডিভাইডার দিদি, আপনার রাজ্যের লোক উন্নয়ন চায়। বিভেদ নয়। সত্যি যখন সামনে এসে যাওয়ায় এখন জনগণের সামনে আপনার ক্ষমা চাওয়া উচিত।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy