সোমবারই তৃণমূল নির্বাচন কমিশনকে ২৪ ঘণ্টা সময় দিয়েছিল এপিক কার্ড ‘দুর্নীতি’ নিয়ে তথ্য প্রকাশের। কমিশনের পক্ষ থেকে কিছু জানানো হয়নি। আজ সকালে তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ সাকেত গোখলে কমিশনের গত রবিবারের দাবি খারিজ করে এক্স হ্যান্ডলে পোস্ট করেন। কমিশনকে নিশানা করতে তাঁর হাতিয়ার, কমিশনেরই ‘হ্যান্ডবুক ফর ইলেক্টোরাল রেজিস্ট্রেশন অফিসার্স’।
তৃণমূল সাংসদ কমিশনের নিয়মবিধি খুলে তা হলুদ রঙে চিহ্নিত করে পোস্ট করে অভিযোগ করেছেন, একই এপিক নম্বরে একাধিক ভোটারের যে ব্যাখ্যা তাঁরা দিয়েছেন, তা খোদ কমিশনেরই নিয়মবহির্ভূত, বেআইনি। তৃণমূলের অভিযোগ, শাসকদলকে তাদের দুর্বল আসনগুলিতে সুবিধা পাইয়ে দিতে ‘জালিয়াতি’ করা হয়েছে।
সাকেতের বক্তব্য, কমিশন রবিবার জানিয়েছিল, দুই রাজ্যে একই আলফা-নিউমেরিক সিরিজ় ব্যবহারের ফলে একাধিক ভোটারের একই এপিক কার্ড নম্বর হয়ে থাকতে পারে। তা বেআইনি কিছু নয়, ভুয়ো ভোটারের প্রমাণও নয়। অথচ কমিশনের হ্যান্ডবুকে স্পষ্ট লেখা, এপিক নম্বর তিনটি অক্ষর এবং ৭টি সংখ্যা নিয়ে তৈরি হয়। এবং এই তিনটি অক্ষর প্রতিটি বিধানসভা কেন্দ্রের জন্য আলাদা। তৃণমূলের প্রশ্ন, দুই বিধানসভা কেন্দ্রের ভোটারের এই তিনটি অক্ষর মিলে গেল কী ভাবে?
কমিশনের বক্তব্য, একই এপিক নম্বর একাধিক ব্যক্তির হলেও তাঁরা যে বিধানসভার ভোটার, শুধু সেখানেই ভোট দিতে পারবেন। ফলে ভুয়ো ভোটারের ভোটদানের সম্ভাবনা নেই। কিন্তু সাকেতের বক্তব্য, ভোটার তালিকায় ভোটারের ছবি, তাঁর এপিক নম্বরের ভিত্তিতে যুক্ত হয়। তাই পশ্চিমবঙ্গের কোনও ভোটার ভোট দিতে যখন যাবেন, সেখানে তাঁর এপিক নম্বরের পাশে গুজরাতের কোনও ভোটারের (যাঁর এপিক নম্বর ও পশ্চিমবঙ্গের ওই ভোটারের নম্বর একই) ছবি দেখাতে পারে। তখন বাংলার ভোটার বৈধ হলেও ভোট দিতে পারবেন না।
কমিশনের দাবি, আলফা নিউমেরিক কোডের ‘ডুপ্লিকেশন’ হওয়ার ফলে আলাদা লোককে একই এপিক কার্ড দেওয়া হতে পারে। তৃণমূলের বক্তব্য, কমিশনের আইন বলছে, তাঁদের সফটওয়্যারের সাহায্যে সব ব্যবহৃত এপিক নম্বরের উপর সর্বক্ষণ নজর রাখা হয়, যাতে সেটা একাধিক ব্যক্তিকে দেওয়া না হয়। এপিক নম্বরে ভোটারের তথ্য, তাঁর ছবির সঙ্গে সংযুক্ত থাকে। তাই ভোটার কার্ডকে ‘স্থায়ী ইউনিক আইডি’ বলে গ্রাহ্য করা হয়।
তৃণমূলের দাবি, বিজেপি-বিরোধী ভোট আটকাতে এই চক্রান্ত। তাদের দাবি, এমন কত এপিক কার্ডের ‘ডুপ্লিকেশন’ রয়েছে, তার তথ্য প্রকাশ্যে আনুক কমিশন। অবিলম্বে এই ভুয়ো ভোটার দুর্নীতির তদন্ত হোক। বিরোধীদের বক্তব্য, কমিশন ২০১৯-এর ২৫ জুন জানায়, প্রত্যেক ভোটার কার্ডে পৃথক নম্বর থাকবে। এখন কেন কমিশন বলছে, আলাদা লোকের সচিত্র পরিচয়পত্রে একই এপিক নম্বর থাকতে পারে?
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)