দলীয় দুই সাংসদ তথা সতীর্থের মধ্যে এই বাগ্যুদ্ধ নিয়ে প্রকাশ্যে কেউই কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি। —ফাইল চিত্র।
ব্যারাকপুর কাণ্ডে বিবৃতি এবং পাল্টা বিবৃতি দিয়ে একে অপরের সঙ্গে বাগ্যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছেন তৃণমূলের দুই সাংসদ অর্জুন সিংহ এবং সৌগত রায়। অর্জুন ব্যারাকপুরের সাংসদ (খাতায়কলমে বিজেপির)। আর সৌগত তার অনতিদূরের লোকসভা কেন্দ্র দমদমের সাংসদ। ব্যারাকপুরের সোনার দোকানে ডাকাতি এবং ডাকাতদের গুলিতে দোকানের মালিকের যুবক পুত্রের মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে শোরগোল পড়েছে। সেই প্রেক্ষিতেই এলাকার সাংসদ হিসেবে পুলিশের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছিলেন অর্জুন। যা তাঁর এখনকার বাস্তবের দল তৃণমূলকে ‘অস্বস্তি’তে ফেলেছে। সৌগত আবার প্রকাশ্যেই অর্জুনের সমালোচনা করেছেন। তাতে আরও ‘বিড়ম্বনা’য় দল।
দলীয় দুই সাংসদ তথা সতীর্থের মধ্যে এই বাগ্যুদ্ধ নিয়ে প্রকাশ্যে কেউই কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে ‘বিড়ম্বনা’ মেটাতে দলের অন্দরে পদক্ষেপের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পৃথক ভাবে সৌগত এবং অর্জুনের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে চান দমদম ব্যারাকপুর সাংগঠনিক জেলা তৃণমূলের সভাপতি তাপস রায়। তবে তিনিও প্রকাশ্যে মুখ খুলতে নারাজ।
ব্যারাকপুরের ঘটনার পর অর্জুন বলেছিলেন, ‘‘যেখানে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নেই, সেখানে নিজে ভিভিআইপি নিরাপত্তা নিতে লজ্জা হয়! ব্যারাকপুরের সাংসদ হয়ে সাধারণ মানুষকে নিরাপত্তা দিতে পারছি না। এ দিকে আমি নিজে ভিভিআইপি নিরাপত্তা নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছি!’’
অর্জুনকে সমর্থন করেছিলেন কামারহাটির তৃণমূল বিধায়ক তথা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী মদন মিত্র। কিন্তু অর্জুনের সরাসরি বিরোধিতা করেন প্রবীণ সাংসদ সৌগত। তিনি বলেন, ‘‘অর্জুন সিংহের এমনটা বলা ঠিক হয়নি। উনি আমাদের পার্টির বিরোধিতা করেই তো বিজেপির হয়ে জিতেছিলেন! তার পর আবার অভিষেক (বন্দ্যোপাধ্যায়) ওঁকে তৃণমূলে নেন। ওঁর সাংগঠনিক ভাবে যা বক্তব্য, তা শোনা হয়েছে। এখন যদি অর্জুন সিংহ রোজ পুলিশ-প্রশাসনের বিরুদ্ধে বিবৃতি দেন, তা হলে তো পার্টি এ সব ভাল ভাবে নেবে না।’’
অর্জুনের বিরুদ্ধে ‘পদ্ধতিগত ত্রুটি’র কথাও বলেছেন সৌগত। তাঁর কথায়, ‘‘অর্জুন সিংহ তাঁর কথা পার্টির কাছে বলতে পারতেন! মুখ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে বলতেন! ওঁর বক্তব্যের কোনও ভিত্তি আছে বলে আমি মনে করি না। উনি যেটা করছেন, সেটা ঠিক করছেন বলেও আমি মনে করি না। তবে আমরা চাই উনি (দলে) থাকুন।’’ সৌগতের এমন মন্তব্যের জবাব কড়া ভাবেই দিয়েছেন ব্যারাকপুরের সাংসদ অর্জুন। তিনি পাল্টা বলেন, ‘‘যাঁরা আমাকে নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন, তাঁরা তো ভাল ভাবে কোনওদিনও সিপিএমের বিরুদ্ধে লড়াই করেননি! অর্জুন সিংহ কোনওদিন নাটক করে না। আর অর্জুন সিংহ যে নাটক করে না, তার প্রমাণ দিয়ে দেবে জনগণ। সৌগত রায় তিন মাস আগে কী বলেছেন, আর তিন মাস পরে কী বলছেন, তার মধ্যেই বিস্তর ফারাক থাকে! তাঁর কথা আমি কী আর জবাব দেব?’’
পুরো বিষয়টি যেদিকে গড়াচ্ছে, তাতে তৃণমূলের ‘বিড়ম্বনা’ বৃদ্ধি পাওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। দলের প্রবীণ সাংসদ সৌগতের সঙ্গে বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে আসা অর্জুনের বিবাদ আর যাতে না বাড়ে, সে বিষয়ে নজর রাখছেন দলের শীর্ষনেতৃত্বও। তাই দমদম ব্যারাকপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি তাপসের মারফৎ দু’পক্ষের কাছেই আপাতত মুখ বন্ধ রাখার বার্তা পাঠানো হতে পারে বলে দলের একাংশের অনুমান।
তবে ঘটনাপ্রবাহ বলছে, সৌগতও শুক্রবার অর্জুনের সুরেই পুলিশ-প্রশাসনের সমালোচনা করেছিলেন। শুক্রবার বিকেলের পরে কামারহাটি থানার এক অনুষ্ঠানে গিয়ে সৌগত বলেছিলেন, ‘‘সব পুলিশ ভাল, এটা আমি বলতে পারছি না। ব্যারাকপুরের আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতি খুব খারাপ। পুলিশ ঘুষ খায়। কাজ করে না। আমি পুলিশের দালাল নই। গুণ্ডা নিয়ে গাড়িতে চলাফেরা করি না।’’ দমদমের সাংসদ আরও বলেছিলেন, ‘‘কোনও ঘটনা ঘটলে আমাকে জানান। থানার ওসি কাজ না করলে আমাকে জানান! আমি পুলিশ কমিশনারকে বলব। পুলিশ কমিশনার কাজ না করলেও আমাকে জানান। আমি মুখ্যমন্ত্রীকে বলব।’’
অর্জুনের সুরে সুর মিলিয়ে সৌগতের সেই বক্তব্য প্রকাশ্যে আসতেই নড়েচড়ে বসেন তৃণমূল নেতৃত্ব। তার কিছু পরে শুক্রবার রাতেই সৌগত আবার অর্জুনের সমালোচনা করতে শুরু করেন। যার কড়া জবাব দেন অর্জুন। ফলে গোটা বিষয়টি আরও বিভ্রান্তিকর হয়ে উঠেছে।
তবে সম্প্রতি বারবারই বেফাঁস মন্তব্য করে দলের ‘অস্বস্তি’ বাড়িয়েছেন সৌগত। ব্যারাকপুরের ঘটনার পর তিনি বলেছিলেন, সেখানে কর্মসংস্থান কম বলে কিছু ছেলে অপরাধপ্রবণ হয়ে পড়বে। সৌগত আরও বলেছিলেন, ‘‘এই সব শিল্পাঞ্চলে জুয়া-সাট্টা চলে। পুলিশের খুব কড়া নজরদারি রাখতে হয়। অন্য জায়গায় এত অপরাধ হচ্ছে না। ব্যারাকপুর সবথেকে ঘনবসতিপূর্ণ শিল্পাঞ্চল।’’ তাঁর ওই মন্তব্যের পরেও শাসক তৃণমূলকে বিরোধীদের কটাক্ষের সম্মুখীন হতে হয়েছিল। কিন্তু শুক্রবার ব্যারাকপুরের ঘটনা এবং অর্জুনকে নিয়ে তিনি কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে যে দু’টি মন্তব্য করেছের একটির সঙ্গে অন্যটির সঙ্গতি নেই। সেই কারণেই তাঁর সঙ্গে কথা বলতে চান দলীয় নেতৃত্ব। কথা বলতে চান অর্জুনের সঙ্গেও। ব্যারাকপুরের ঘটনায় কয়েকজন অভিযুক্ত ধরা পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে দুই সাংসদকেই মুখ বন্ধ রাখার বার্তা দিতে চায় তৃণমূল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy