দুর্নীতির প্রতিবাদে এবং অভিযুক্ত মন্ত্রীদের অপসারণের দাবিতে বেহালায় সিপিএমের মিছিল
রাজ্যের মন্ত্রী ও তৃণমূল কংগ্রেসের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যাযের ঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের বাড়ি থেকে বিপুল সম্পত্তি উদ্ধারের ঘটনা থেকে দূরত্ব রাখছে শাসক দল। আবার আদালতে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার আগে এখনই পার্থবাবুদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নিতে নারাজ তৃণমূল কংগ্রেস। এই পরিস্থিতিতে শাসক দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে নিশানা করেই সরব হল বিরোধীরা। তাদের দাবি, ব্যক্তি পার্থ একা দায়ী নন। দুর্নীতির গোটা চক্রকে উন্মোচিত করতে হবে এবং অভিযুক্ত মন্ত্রীদের বরখাস্ত করতে হবে। দুর্নীতির জন্য জবাবদিহি করতে হবে মুখ্যমন্ত্রীকেই। দুর্নীতির প্রতিবাদে এবং অভিযুক্ত মন্ত্রীদের অপসারণের দাবিতে শনিবারই পথে নেমে পড়েছে সব বিরোধী দল।
দু’দিন আগে তৃণমূলের ২১শে জুলাইয়ের মঞ্চে অর্পিতার উপস্থিতির ছবি দিয়ে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর মন্তব্য, ‘‘চিনি না, জানি না, দলের কেউ দায় নেবে না! কিন্তু শত চেষ্টা করলেও এ বড় বেয়াড়া দাগ! সহজে উঠবে না! প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর ‘বন্ধু’ ২১শে জুলাই ‘ঐতিহাসিক’ সমাবেশের মঞ্চেও তো ছিলেন।’’ পরে খড়গপুরে একটি কর্মসূচিতে গিয়ে শুভেন্দু দাবি করেছেন, জেলা থেকে যাঁরা পার্থবাবু বা তাঁর ঘনিষ্ঠদের কাছে টাকা পৌঁছে দিয়েছেন, তাঁদেরও ধরা উচিত। তাঁর বক্তব্য, ‘‘খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ওই অর্পিতা মুখোপাধ্যায়কে মঞ্চে স্থান দিয়েছেন। এখন যদি বলে পার্থ চট্টোপাধ্যায় তৃণমূলের কেউ নন, তা হলে সেটা কেউ মানবে না!’’
দুর্নীতির প্রশ্নে মুখ খুলেছেন রাজ্য সফরে আসা কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরাও। ওয়েস্ট মেট্রোর শিয়ালদহ স্টেশন পরিদর্শনে এসে কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান বলেন, ‘‘শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে দুর্নীতির কথা শোনা যাচ্ছিল। তার মধ্যে যে ভাবে টাকার পাহাড় উদ্ধার হল, তাতে নিন্দার ভাষা নেই। ওই ঘটনার পরে শাসক দলের বিবৃতি শুনে মনে হচ্ছে, ঠাকুর ঘরে কে, আমি তো কলা খাইনি!’’ নিয়োগের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষক-প্রার্থীদের সঙ্গেও দেখা করেছেন ধর্মেন্দ্র। দক্ষিণেশ্বর মেট্রো স্টেশনে অন্য এক অনুষ্ঠানে আর এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া বলেন, ‘‘এই সরকার দুর্নীতির আর অসততার। দূর্নীতির সব সীমা অতিক্রম করেছে এরা।’’
এরই পাশাপাশি বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের দাবি, যেটা উদ্ধার হয়েছে, সেটা কিছুই নয়। আরও দুর্নীতি সামনে আসবে। তাঁর মন্তব্য, ‘‘ইউজিসি-র নিয়ম ভেঙে শুধুমাত্র পার্থবাবুর ‘ঘনিষ্ঠ’ হওয়ার সুবাদে এক অধ্যাপিকা মাত্র চার বছরের মধ্যে অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর থেকে অস্যসিয়েট প্রফেসর পদে উন্নীত হয়েছিলেন। বোঝাই যাচ্ছে, সর্বস্তরে দুর্নীতি হয়েছে। এখনও প্রাথমিক টেটের ফাইল খোলা বাকি আছে। আর কত নাম যে তখন উঠে আসবে দেখতে থাকুন!’’
দুর্নীতির প্রতিবাদে এবং অভিযুক্ত মন্ত্রীদের অপসারণের দাবিতে এ দিন মৌলালি থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত মিছিল করে এসএফআই-ডিওয়াইএফআই। রাজ্য জুড়ে আজ, রবিবার ও কাল, সোমবার বিক্ষোভ, অবরোধ এবং মুখ্যমন্ত্রীর কুশপুতুল পোড়ানোর ডাকও দিয়েছে এসএফআই। একই দাবিতে সন্ধ্যায় বেহালায় মিছিল করে সিপিএম। ওই প্রতিবাদ মিছিলে ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতোই। বিজেপির যুব মোর্চা প্রতিবাদে নেমেছিল কলেজ স্কোয়ার ও নাকতলায়। সিপিআইয়ের কলকাতা জেলা সম্পাদক প্রবীর দেবের নেতৃত্বে দলের প্রতিনিধিরা গিয়েছিলেন গান্ধীমূর্তির কাছে চাকরি-প্রার্থীদের অবস্থান-মঞ্চে। ‘চাকরিপ্রার্থী মঞ্চে’র তরফে মিছিল ছিল শিয়ালদহ থেকে। মধ্য কলকাতা জেলা কংগ্রেসের আয়োজনে অভিযুক্ত মন্ত্রীদের বরখাস্তের দাবিতে বিক্ষোভ হয়েছে মৌলালিতে।
দুর্নীতিগ্রস্ত নেতা, আধিকারিকদের গ্রেফতার এবং যোগ্য প্রার্থীদের চাকরির দাবিতে আদালতের ভিতরে ও বাইরে আন্দোলন চলবে বলে জানিয়েছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। বহরমপুরে এ দিন তাঁর বক্তব্য, ‘‘দুর্নীতবাজদের শুধু আটক করলে হবে না, বরখাস্ত করতে হবে, কঠোর শাস্তি দিতে হবে। আর বাংলার মানুষকেও সিদ্ধান্ত নিতে হবে, পরিবর্তনের নামে তাঁরা কি এই রকম রাজ্যই দেখতে চেয়েছিলেন?’’
সিপিএম এবং কংগ্রেস, দু’দলেরই দাবি, ব্যক্তি পার্থ একা নন। নিয়োগের নামে দুর্নীতির ঘটনায় গোটা শাসক দল ও প্রশাসনের অনেকেই জড়িত। এই কেলেঙ্কারির জন্য জবাবদিহি করতে হবে মুখ্যমন্ত্রীকেই। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর মন্তব্য, ‘‘রাজীব কুমারকে রক্ষা করতে মুখ্যমন্ত্রী রাস্তায় ধর্না দিয়েছিলেন। এখন মন্ত্রীর জন্য কি সিজিও কমপ্লেক্সে (সিবিআই এবং ইডি-র আঞ্চলিক দফতর) ধর্নায় বসবেন? আর সেটা যদি না করেন, তা হলে ওঁদের বরখাস্ত করুন!’’ অভিযুক্ত মন্ত্রীদের অপসারণ, আইনসঙ্গত প্রক্রিয়ায় বিচার ও যোগ্য চাকরি-প্রার্থীদের নিয়োগের দাবি তুলেছেন সিপিআই(এম-এল) লিবারেশনের সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্য, এসইউসি-র রাজ্য সম্পাদক চণ্ডীদাস ভট্টাচার্যেরাও।
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীও বলেছেন, ‘‘বাংলার মানুষ যা দেখছেন, তা হিমশৈলের চূড়ামাত্র। আরও উপর দিকে যাঁরা আছেন, তাঁরা টাকা লুকিয়ে ফেলে ইডি-র কাছে গিয়ে হাজিরা দিয়েছেন। এঁরা পারেননি। তদন্ত শুধু বেহালা বা নাকতলায় থামলে চলবে না! তদন্ত ঠিক পথে গেলে হাজরা, ভবানীপুর, কালীঘাটেও তার হাত পৌঁছনো উচিত!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy