বেসরকারি সংস্থার উড়ানের যাত্রী মুকুলের বোর্ডিং কার্ডের ছবি দিয়ে আনন্দবাজার অনলাইন জানিয়েছিল, মুকুল দিল্লিতেই গিয়েছেন। গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ।
তিনি ‘নিখোঁজ’ নন। দিল্লি পৌঁছে জানিয়ে দিলেন মুকুল রায়। যেমন সোমবার রাতে জানিয়েছিল আনন্দবাজার অনলাইন। মুকুল ‘নিখোঁজ’ বলে যখন বলা হচ্ছে, তখনই একটি বেসরকারি সংস্থার উড়ানের যাত্রী মুকুলের বোর্ডিং কার্ডের ছবি দিয়ে আনন্দবাজার অনলাইন জানিয়েছিল, মুকুল দিল্লিতেই গিয়েছেন। তিনি যে দিল্লিতে, তা এ বার জানালেন মুকুল নিজেই।
কিন্তু আচমকা কাউকে কিছু না জানিয়ে কৃষ্ণনগর উত্তরের বিধায়ক দিল্লিতে এসে হাজির হলেন কেন, আপাতত সেই প্রশ্নেই তোলপাড় রাজ্য রাজনীতি। একটি ভিডিয়োয় মুকুল নিজে সে প্রশ্নের জবাব দিয়ে দিয়েছেন। দিল্লি পৌঁছতেই তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, দিল্লির আসার কারণ। মুকুল উত্তর দেন, ‘‘এমনিই এসেছি। দিল্লিতে কি আমি আসতে পারি না? আমি তো আগেও অনেক বার দিল্লি এসেছি। এ বার একটু দেরি হয়ে গেল আসতে। আমি তো এখানকার এমএলএ। এখানকার এমপি! যত দিন প্রয়োজন, তত দিন থাকব। আমি এমনি কাজে এসেছি দিল্লিতে। কোনও বিশেষ কারণে আসিনি।’’
তিনি কি ডাক্তার দেখাতে দিল্লি এসেছেন? জবাব, ‘‘না, ডাক্তার দেখাতে দিল্লিতে আসতে হবে কেন! আমি প্রয়োজনে এসেছি।’’
যদিও তাঁর সেই ‘প্রয়োজন’টি কী, তা নিয়েই শুরু হয়েছে জল্পনা। সোমবার সন্ধ্যার উড়ানে কলকাতা থেকে দিল্লি পৌঁছন মুকুল। সঙ্গে ছিলেন দু’জন। উড়ানের যাত্রিতালিকা থেকে জানা যাচ্ছে, তাঁদের নাম ভগীরথ মাহাত এবং রাজু মণ্ডল। তিনি যে দিল্লি যাচ্ছেন, তা জানা ছিল না মুকুলের পুত্র শুভ্রাংশু রায়েরও। তৃণমূল নেতা শুভ্রাংশু সোমবার সন্ধ্যায় দু’টি থানায় তাঁর বাবার নিখোঁজ হওয়ার অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। প্রথমে বিমানবন্দর থানা এবং পরে বীজপুর থানায়। যদিও রাতে আর তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।
কাকতালীয় ভাবে মুকুলের দিল্লি যাত্রার পর বিজেপি নেতা অনুপম হাজরার একটি পোস্ট মুকুলকে নিয়ে জল্পনা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। অনুপম লিখেছেন একটিই শব্দ— ‘প্রত্যাবর্তন’। এর অর্থ কি মুকুলের বিজেপিতে ফিরে যাওয়া? অনুপমকে প্রশ্ন করায় তিনি শুধু বলেছেন, ‘‘একটা দিন অপেক্ষা করুন। সবই স্পষ্ট হয়ে যাবে।’’ এর বেশি তিনি কিছু বলতে চাননি। তবে বিজেপি সূত্রে জানানো যাচ্ছে, রবিবার রাতে দিল্লির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তরফে মুকুলের কাছে একটি ফোন এসেছিল। যদিও তার সত্যতা কেউই স্বীকার করেননি। সেই ফোনের প্রেক্ষিতেই মুকুলের দিল্লিযাত্রা কি না, তা-ও বলতে পারেননি কেউই।
সোমবার সন্ধ্যায় সল্টলেকের বাড়ি থেকে বেরিয়ে দুই সঙ্গীকে নিয়ে মুকুল কলকাতা বিমানবন্দরে পৌঁছন। সাধারণত জনপ্রতিনিধিরা যে গেট দিয়ে বিমানবন্দরে প্রবেশ করেন, সেখান দিয়েই তিনি ভিতরে যান। জনপ্রতিনিধিরা কেউ উড়ান ধরতে গেলে সাধারণত বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে আগে থেকে জানিয়ে রাখেন। যদি কোনও প্রয়োজন হয়। কিন্তু বিমানবন্দর সূত্রের খবর, মুকুল তেমন কিছু কাউকে জানাননি। তিনি দুই সঙ্গীকে নিয়ে টিকিট-সহ বিমানে উঠে পড়েন।
তার কিছু পরে বিমানবন্দরে পৌঁছন শুভ্রাংশু। তিনি লিখিত ভাবে সংশ্লিষ্ট বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে জানান, তাঁর বাবা অসুস্থ। তাঁকে না জানিয়ে তাঁর বাবাকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। মুকুলকে যেন বিমান থেকে নামিয়ে আনা হয়। কিন্তু তেমন কিছু ঘটেনি। মুকুল এবং তাঁর দুই সঙ্গীকে নিয়ে বিমান উড়ে যায় দিল্লির পথে। মঙ্গলবার শুভ্রাংশু অভিযোগ করেন, বিমানবন্দরে কর্মরত কেন্দ্রীয় বাহিনী সিআইএসএফ তাঁকে কোনও সাহায্য করেনি। পরে শুভ্রাংশু বীজপুর থানায় একটি নিখোঁজ ডায়েরি করেন।
মুকুল দিল্লিতে কী করেন, তা নিয়ে মঙ্গলবার সকাল থেকেই আলোচনা শুরু হয়েছে। জল্পনা শুরু হয়েছে, মুকুল আবার বিজেপিতে ফিরে যাবেন কি না। বলা হচ্ছে, মঙ্গলবার বিজেপির এক শীর্ষনেতার সঙ্গে দেখা হতে পারে মুকুলের। প্রসঙ্গত, তৃণমূলে যোগ দিলেও মুকুল খাতায়কলমে এখনও কৃষ্ণনগর উত্তরের ‘বিজেপি বিধায়ক’। বলা হচ্ছে, ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের পরে যে ভাবে মুকুল বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন, সে ভাবেই আবার বিজেপিতে ফিরতে পারেন তিনি।
মুকুলের দিল্লিযাত্রা নিয়ে মঙ্গলবার সকালে একটি সাংবাদিক বৈঠক করে মুকুলের পুত্র শুভ্রাংশু বলেছেন, ‘‘বাবার পারকিনসন্স রয়েছে, ডিমেনশিয়া রয়েছে। এমনকি, লিভার সিরোসিসও রয়েছে। বর্তমানে দেশের রাজনীতিতে কী হচ্ছে জানতে চাওয়া হলে উনি বলেন, ভারতের সঙ্গে আমেরিকার সমস্যা চলছে। উনি অসুস্থ। এমতাবস্থায় ওঁকে নিয়ে এই জল্পনার নীচু মানের রাজনীতি না করাই কাম্য।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy