তৃণমূল সাংসদ শত্রুঘ্ন সিন্হা সম্প্রতি গোটা দেশে আমিষ খাবার নিষিদ্ধ করার দাবি তুলেছিলেন। মঙ্গলবারের বারবেলায় সংসদে একটি বক্তৃতায় শ্রীরামপুরের তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় মনে করিয়ে দিলেন, ‘ভাতে-মাছে বাঙালি’।
কেন্দ্রীয় বাজেটে মৎস্যজীবীদের জন্য প্রকল্প ঘোষণা করেছেন দেশের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন। তৃণমূলের অভিযোগ, সেই খাতে বরাদ্দ পাওয়া রাজ্যের তালিকায় অন্ধ্রপ্রদেশ, কেরল-সহ অন্যান্য রাজ্যের নাম থাকলেও পশ্চিমবঙ্গের নাম নেই। অথচ বাংলায় কয়েক লক্ষ মানুষের জীবিকা মাছের উপর নির্ভরশীল। সেই প্রসঙ্গেই সংসদে কল্যাণ বাংলাকে বরাদ্দ দেওয়ার দাবি তোলেন সংসদে। সে কথা বলতে গিয়েই স্মরণ করিয়ে দেন, প্রবাদেই রয়েছে ‘ভাতে-মাছে বাঙালি’।
কল্যাণ কি এক ছিপে জোড়া বঁড়শি নিয়ে নেমেছিলেন? শ্রীরামপুরের সাংসদের ঘনিষ্ঠদের বক্তব্য, কেন্দ্রীয় সরকার বাংলার মৎস্যজীবীদের প্রতি যে বঞ্চনা করেছে, কল্যাণ সেটাই বলেছেন। এর সঙ্গে শত্রুঘ্নের প্রসঙ্গের কোনও যোগ নেই। যদিও শত্রুঘ্ন যে দিন আমিষ-বিরোধী মন্তব্য করেছিলেন, তার পর আনন্দবাজার অনলাইনকেই কল্যাণ স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিলেন, ‘‘কে কী খাবে, কে কী পরবে, এটা কেউ ঠিক করে দিতে পারে না।’’
আরও পড়ুন:
উল্লেখ্য, তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভাষা, পোশাক, খাদ্যাভাস, ধর্মাচরণ— এই সমস্ত ক্ষেত্রেই বহুত্ববাদের পক্ষে সওয়াল করেন। তিনি প্রায়ই বলেন, বিজেপি নানা ভাবে এই সমস্ত মৌলিক অধিকারের উপর নিজেদের মত চাপিয়ে দিতে চাইছে। ফলে শত্রুঘ্নের মন্তব্য ছিল দলের ‘লাইনের’ পরিপন্থী। তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, শত্রুঘ্নের বক্তব্য মমতাও ভাল ভাবে নেননি। নেত্রীর মনোভাব তাঁকে জানিয়েও দেওয়া হয়েছিল।
এর আগে বাঙালিকে ‘মেছো’ বিদ্রুপ করে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন বিজেপি-ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত অভিনেতা পরেশ রাওয়াল। গুজরাতে লোকসভা ভোটের প্রচারে পরেশ বলেছিলেন, ‘‘মুদ্রাস্ফীতি সহ্য করতে পারবেন গুজরাতের মানুষ। কিন্তু পাশের বাড়িতে যদি রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু কিংবা বাংলাদেশিরা এসে ওঠেন, তখন গ্যাস সিলিন্ডার নিয়ে কী করবেন? বাঙালিদের জন্য মাছ ভাজবেন?” পরেশের ওই বক্তব্যকে হাতিয়ার করে লোকসভা ভোটে বিজেপির বিরুদ্ধে প্রচার চালিয়েছিল তৃণমূল। সিপিএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম আবার পরেশের বিরুদ্ধে এফআইআর করেছিলেন। যদিও পরে তা হাই কোর্টে খারিজ হয়ে গিয়েছিল। তবে সেই সময়ে তৃণমূল বা সিপিএমের অভিন্ন উদ্দেশ্য ছিল ‘মৎস্যপ্রিয় বাঙালির মন জয়’। কল্যাণও সংসদে মনে করালেন, বাঙালিয়ানার সঙ্গে মাছ জড়িয়ে রয়েছে। আনুষ্ঠানিক ভাবে কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্দেশে হলেও শত্রুঘ্নর প্রসঙ্গকে জুড়েই দেখছেন অনেকে। কারণ, রাজনীতিতে সময় চিরকালই গুরুত্বপূর্ণ।