(বাঁ দিক থেকে) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, জহর সরকার এবং জগদীপ ধনখড়। —ফাইল চিত্র।
তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ জহর সরকার তাঁর পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার বিষয়ে মনস্থির করেই ফেলেছেন। এ বার পালা দিল্লি গিয়ে উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়ের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার। ইতিমধ্যে সেই প্রস্তুতিপর্বও শুরু করে দিয়েছেন এই প্রাক্তন আমলা। বুধবার নিজের ইস্তফার পথ প্রশস্ত করতে দিল্লি যাচ্ছেন জহর। ওই দিনই উপরাষ্ট্রপতির দফতরে গিয়ে সাক্ষাতের সময় চাইবেন। সাক্ষাতের সুযোগ পেলে নিজের পদত্যাগপত্র জমা দিয়ে রাজনীতির যাত্রা শেষ করবেন বলে জানিয়েছেন তিনি। কিন্তু দিল্লিতে খোঁজখবর নিয়ে জেনেছেন, বর্তমানে রাজ্যসভার চেয়ারম্যান তথা উপরাষ্ট্রপতি ধনখড় দিল্লিতে নেই। বিশেষ কাজে তিনি রাজধানীর বাইরে গিয়েছেন। তাই বুধবার দিল্লি পৌঁছে উপরাষ্ট্রপতির সাক্ষাতের সময় চেয়ে লিখিত আবেদন করবেন জহর। আবেদনপত্র জমা দিয়েই ফের কলকাতায় ফেরার কথা প্রসার ভারতীর এই প্রাক্তন অধিকর্তার।
উপরাষ্ট্রপতি সাক্ষাতের সময় দিলে দিল্লি গিয়ে নিজের পদত্যাগপত্র জমা দেবেন বলে জানিয়েছেন জহর। রবিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি লিখে নিজের সাংসদ পদ ছাড়ার কথা জানান তিনি। পরে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয় তাঁর পদত্যাগের খবর। ওই দিন বিকেলেই জহরকে বোঝাতে ফোন করেন মমতা। দীর্ঘ ক্ষণ কথা হয় দু’জনের মধ্যে। সেই ফোনে বরফ গলেনি। তাঁর পক্ষে যে দলনেত্রীর অনুরোধ রাখা সম্ভব হচ্ছে না, তা-ও দ্ব্যর্থহীন ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন জহর। এ প্রসঙ্গে বিদায়ী সাংসদ বলেন, ‘‘মনস্থির যখন করেই ফেলেছি, তখন আর ইস্তফার জন্য বিলম্ব করতে চাই না। রাজ্যসভার চেয়ারম্যান এখন রাজধানীতে নেই। তাই দিল্লি গিয়ে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য আবেদন জানিয়ে আসব। তিনি ফিরলেই যাতে আমাকে সাক্ষাতের সময় দেন, সে ভাবেই আবেদন জানাব।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘উপরাষ্ট্রপতি সময় দিলেই দিল্লি গিয়ে আমি আমার পদত্যাগপত্র জমা দিয়ে আসব। অযথা সময় নষ্ট করতে চাই না।’’
প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের বাজেট অধিবেশন চলাকালীন বক্তৃতা করতে করতেই নিজের পদত্যাগের কথা ঘোষণা করে দেন তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ দীনেশ ত্রিবেদী। ওই বছর ছিল পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার ভোট। সেই নির্বাচন পর্ব মিটে গেলে দীনেশের শূন্যপদে প্রাক্তন আমলা জহরকে রাজ্যসভায় পাঠায় তৃণমূল। পরের বছর জুলাই মাসে তৃণমূলের তৎকালীন মহাসচিব তথা রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও তাঁর বান্ধবী অর্পিতা মুখোপাধ্যায় ইডির হাতে গ্রেফতার হন। অর্পিতার টালিগঞ্জ ও বেলঘরিয়ার ফ্ল্যাট থেকে ৫২ কোটি টাকা নগদ উদ্ধার করে ইডি। সেই ঘটনার সময়ও উষ্মাপ্রকাশ করে সংবাদমাধ্যমে বিবৃতি দিয়েছিলেন জহর। তাঁর এমন বিবৃতিতে দলের অন্দরেই সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল তাঁকে। ফলস্বরূপ তাঁর ঘনিষ্ঠ মহল জানায়, সেই সময়েই সাংসদ পদ ছাড়তে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সেই সময় ইস্তফা না দিলেও, আরজি কর হাসপাতালে মহিলা চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় উত্তাল রাজ্য রাজনীতির পরিস্থিতি দেখে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন প্রাক্তন এই আমলা।
শেষমেশ মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখে নিজের ইস্তফা দেওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করেছেন জহর। চিঠিতে তিনি লিখেছেন, ‘‘আমি গত এক মাস ধৈর্য ধরে আরজি কর হাসপাতালের ঘৃণ্য ঘটনার বিরুদ্ধে সবার প্রতিক্রিয়া দেখেছি আর ভেবেছি, আপনি কেন সেই পুরনো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে সরাসরি জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে কথা বলছেন না। এখন সরকার যে সব শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিচ্ছে, তা এক কথায় অতি অল্প এবং অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে।’’ তিনি আরও লিখেছেন, ‘‘মাননীয়া মহোদয়া, বিশ্বাস করুন, এই মুহূর্তে রাজ্যের সাধারণ মানুষের যে স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন ও রাগের বহিঃপ্রকাশ আমরা সবাই দেখছি, এর মূল কারণ কতিপয় পছন্দের আমলা ও দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের পেশিশক্তির আস্ফালন। আমার এত বছরের জীবনে এমন ক্ষোভ ও সরকারের প্রতি সম্পূর্ণ অনাস্থা আগে কখনও দেখিনি।’’ আরজি করের ঘটনার সঙ্গে দুর্নীতিও যে তাঁর সাংসদ পদ ছাড়ার অন্যতম কারণ, সে কথাও জানাতে ভোলেননি জহর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy