নরেন্দ্র মোদী, দীনেশ ত্রিবেদী এবং অমিত শাহ। ফাইল চিত্র।
বিশ্বনাথপ্রতাপ সিংহের সময় থেকেই তিনি বণিক গোষ্ঠীর আস্থাভাজন। তাই বলে কচ্ছের এই ব্রাহ্মণসন্তানের গণভিত্তি রয়েছে, এমন তাঁর পরম মিত্রকেও বলতে শোনা যায়নি। এ হেন দীনেশ ভাই ত্রিবেদী পশ্চিমবঙ্গে ভোটের মুখে কোন সমঝোতায় তাঁর রাজ্যসভার দীর্ঘ বকেয়া (প্রায় সাড়ে পাঁচ বছর) মেয়াদকে জলাঞ্জলি দিয়ে তৃণমূল ছাড়লেন, সেই প্রশ্ন আজ ঘুরছে রাজনৈতিক শিবিরে।
রাজনৈতিক সূত্রের বক্তব্য, মুখে ‘অন্তরাত্মার ডাক’ বলছেন ঠিকই। কিন্তু তাঁর বিজেপি-তে যাওয়ার ডাক নেহাতই কিছু সময়ের অপেক্ষা মাত্র। যা আজ আরও স্পষ্ট হয়ে গেল একটি বেসরকারি চ্যানেলের অনুষ্ঠানে। বিজেপি-র নেতা তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় দীনেশকে বিজেপি-তে স্বাগত জানিয়ে বললেন, ‘‘আপনি শুধু ব্যাটসম্যানই নন, খুব ভাল বোলারও! আশা করব, আরও কয়েকটা উইকেট নেবেন!’’ তাঁর কথায়, ‘‘বিজেপি-তে আপনাকে স্বাগত। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং অমিত শাহের নেতৃত্বে আমরা এক সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গে এমন সরকার গড়তে চাই যা সুশাসন এনে দেবে।’’ সহাস্য দীনেশ বলেন, ‘‘‘আমার সঙ্গে নরেন্দ্রভাই, অমিতভাইয়ের সম্পর্ক সব সময়ই ভাল।’’
শুধু তাই নয়, এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী এবং অমিত ভাই আমার দীর্ঘদিনের বন্ধু। বিজেপি-তে যোগ দেওয়ার মধ্যে তো অন্যায় কিছু নেই। আমাকে আমন্ত্রণ জানাতে হবে কেন। আমি গেলেই হল। রাজনৈতিক জীবনে কোনও পূর্ণচ্ছেদ হয় না।’’ তাঁর অভিযোগ, ‘কিছু স্তাবক এবং নিজেদের পদ নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকা নেতা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ক্রমাগত ভুল বুঝিয়ে তৃণমূলের ক্ষতি করেছে।’’
কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, বিজেপি-তে যোগ দিয়ে তিনি কী পাবেন যা তাঁর সাড়ে পাঁচ বছরের রাজ্যসভার বকেয়া মেয়াদকে ছাপিয়ে যেতে পারে? উল্টো প্রশ্নটিও সমান গুরুত্বপূর্ণ। বিজেপি নেতৃত্বই বা তাঁর মতো জনতার সঙ্গে সংযোগহীন নেতার কাছে কী প্রত্যাশা করে? সঙ্গে আরও একটি প্রশ্ন, আসন্ন ভোটে কোন ভূমিকায় তাঁকে দেখা যাবে?
রাজনৈতিক সূত্রে বেশ কয়েকটি সম্ভাবনা উঠে আসছে। প্রথমত, গুজরাতে মার্চের গোড়াতেই দু’টি রাজ্যসভার খালি আসনে (আহমেদ পটেল এবং অভয় ভরদ্বাজ) ভোট। মনোনয়নপত্র দাখিল করার শেষ তারিখ ১৮ ফেব্রুয়ারি। বিজেপি চাইলে তাঁকে দলে অন্তর্ভুক্ত করে ওই দু’টি আসনের একটি থেকে জিতিয়ে এনে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় জায়গা দিতে পারে, পশ্চিমবঙ্গে ভোটের আগে তাঁর গুরুত্ব বাড়ানোর জন্য। কিন্তু দীনেশ ত্রিবেদীর মতো এক জন নেতার জন্য এতটা উদ্যোগী হয়ে বিজেপি-র লাভ কী, সেই মূল প্রশ্নটি আবার উঠে আসছে। কর্নাটকেও একটি রাজ্যসভার আসন খালি রয়েছে, কিন্তু নির্বাচনের তারিখ এখনও স্থির হয়নি। দ্বিতীয় সম্ভাবনা, দীনেশকে পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভায় বিজেপি-র কোনও ভাল আসন থেকে দাঁড় করানো এবং জিতলে মন্ত্রিত্ব দেওয়া। তৃতীয়ত, তাঁকে তৃণমূল থেকে বের করে এনে মমতা তথা তৃণমূল নেতৃত্বের উপর মনস্তাত্ত্বিক চাপ তৈরি করা।
তৃণমূল সূত্রে জানানো হচ্ছে, গত তিন মাস ধরেই দলের নির্দেশ অবজ্ঞা করতে শুরু করেছিলেন দীনেশ ত্রিবেদী। টিভি চ্যানেলে গিয়ে দলবিরোধী কথা বলা, তৃণমূলের হয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করতে বলা হলে তা এড়িয়ে যাওয়া, বিজেপি-র বিরুদ্ধে কোথাও মুখ না খোলার মতো ঘটনা ঘটতে শুরু করলে তৃণমূল নেতৃত্ব তাঁকে সতর্ক করেন। সেপ্টেম্বরে সংসদের বর্যাকালীন অধিবেশনে যখন কৃষি আইন আনা নিয়ে তৃণমূল বেঞ্চ উত্তাল, তাঁকে দেখা গিয়েছে ট্রেজারি বেঞ্চে বসে গল্পগুজব করতে। আজ এই প্রসঙ্গে দীনেশ বলেন, ‘‘আমাকে বলা হত প্রধানমন্ত্রীকে, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে কটু ভাষায় আক্রমণ করতে। এটা বাংলার সংস্কৃতি নয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy