মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও দিব্যেন্দু অধিকারী।—ফাইল চিত্র।
‘ন্যায়বিচার’ চেয়ে তৃণমূল চেয়ারপার্সন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি লিখছেন তমলুকের সাংসদ তথা শুভেন্দু অধিকারীর ভাই দিব্যেন্দু। বৃহস্পতিবার বছরের শেষদিনে সেই চিঠি দিব্যেন্দু দলনেত্রীকে পাঠাতে চান বলে বুধবার আনন্দবাজার ডিজিটালকে জানিয়েছেন তিনি।
চিঠিতে তমলুকের তৃণমূল সাংসদ দলনেত্রীর কাছে জানতে চাইবেন, কোন ‘অপরাধে’ কাঁথি পুরসভার প্রশাসক সৌম্যেন্দু অধিকারীকে তাঁর পদ থেকে সরানো হল। কী অপরাধে কাঁথির বর্তমান পুরবোর্ড ভেঙে সিদ্ধার্থ মাইতিকে নতুন প্রশাসক নিয়োগ করা হল? দিব্যেন্দুর কথায়, ‘‘সৌম্যেন্দু তো এখনও তৃণমূলেই আছে। দল ছাড়বে, এমনকিছুও তো কাউকে বলেনি। তা হলে ওকে হঠাৎ করে সরিয়ে দেওয়া হল কেন? ওর অপরাধ কী? সেটা জানতে চেয়ে এবং ন্যায়বিচার চেয়ে আমি দলনেত্রীকে চিঠি পাঠাচ্ছি।’’
পাশাপাশিই সৌম্যেন্দুর দাদা তথা কাঁথির তৃণমূল সাংসদ শিশির অধিকারীর মধ্যম পুত্র আরও জানিয়েছেন, যত দিন পর্যন্ত ‘ন্যায়বিচার’ মিলবে না, তত দিন তিনি এবং শিশির কাঁথি পুরসভা ভবনে ঢুকবেন না। বস্তুত, কাঁথি পুরসভার চেয়ারম্যান পদে থাকার রেকর্ড আছে শিশিরের। তিনি এ রাজ্যে দীর্ঘমেয়াদি চেয়ারম্যানদের মধ্যে অন্যতম। তিনি চেয়ারম্যান পদ ছেড়ে দেওয়ার পরেও (তখনও অবশ্য পদটি অধিকারী পরিবারের হাতেই ছিল) তাঁর জন্য পুরসভায় একটি ঘর বরাদ্দ ছিল। বিধায়ক এবং সাংসদ থাকাকালীন ওই ঘরটিতে গিয়ে তিনি বসতেন। যেমন দিব্যেন্দুর জন্যও বরাদ্দ ছিল একটি ঘর। কিন্তু মমতার থেকে ‘ন্যায়বিচার’ না পাওয়া পর্যন্ত বাপ-ব্যাটা কেউই আর কাঁথির পুরভবনে ঢুকবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন দিব্যেন্দু। যাবেন না পুরসভার প্রাক্তন প্রধান প্রশাসক সৌম্যেন্দুও।
আরও পড়ুন: আনন্দ করুন, বাড়াবাড়ি করবেন না, বর্ষবরণের আগে বার্তা রাজ্যের
মঙ্গলবার সৌম্যেন্দুকে প্রশাসকের পদ থেকে সরানোর নির্দেশ যায় রাজ্য পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর থেকে। তার পরেই সরব হয়েছিলেন দিব্যেন্দু। তিনি বলেছিলেন, ‘‘যাঁকে প্রধান প্রশাসক পদে বসানো হয়েছে, তিনি এলাকার ভোটারই নন! প্রায় ৫০ বছর ধরে কাঁথি পুরসভার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক। ওই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছি। আমি তৃণমূল সাংসদ। বাবা তৃণমূলের জেলা সভাপতি। দিদির প্রতি আমাদের সম্পূর্ণ আস্থা রয়েছে।’’ সেই ‘আস্থা’ থেকেই ‘অপরাধ’ জানতে চেয়ে এবং তার পাশাপাশি ‘ন্যায়বিচার’ চেয়ে দিব্যেন্দু মমতাকে চিঠি দিচ্ছেন বলে অধিকারী মহলের বক্তব্য। ওই মহলের আরও বক্তব্য, নতুন প্রশাসক শেষমেশ দায়িত্ব পেলে অধিকারীরা কেউই আর পুরভবনে যাবেন না।
মঙ্গলবার সৌম্যেন্দুকে সরানোর সিদ্ধান্ত সম্পর্কে পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ (ববি) হাকিম জানিয়েছিলেন, পুরসভার কাজ ঠিক ভাবে হচ্ছিল না বলে অভিযোগ আসায় প্রশাসক বদল করা হয়েছে। দিব্যেন্দু-সৌম্যেন্দুর দাদা শুভেন্দু সদ্যই বিজেপি-তে যোগ দিয়েছেন। কিন্তু অধিকারী পরিবারের বাকি তিন জনপ্রতিনিধি এখনও তৃণমূলেই রয়েছেন। তবে তাঁদের সঙ্গে দলের দূরত্ব ক্রমশই বাড়ছে। প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার খড়দহের এক সভায় শুভেন্দু বলেছেন, রামনবমী আসুক। বাসন্তীপুজো আসুক। তাঁর পরিবারের লোকেরাও পদ্ম ফোটাবেন। এখন সবে পদ্মে কুঁড়ি ধরেছে! ঘটনাচক্রে, তার পরেই সৌম্যেন্দুকে সরানোর সিদ্ধান্ত প্রকাশ্যে আসে। কাঁথির রাজনীতি বলছে, সৌম্যেন্দুর অপসারণের ঘটনায় তৃণমূলের সঙ্গে অধিকারীর পরিবারের দূরত্ববৃদ্ধি আরও ত্বরাণ্বিত হল।
আরও পড়ুন: ছত্রধরকে নিয়ে নেতাইয়ে সভার হুঙ্কার, বহুদিন পর ময়দানে মদন
ঘটনাচক্রে, বুধবার সকালে কাঁথির অধিকারী বাড়িতে গিয়েছিলেন পুরুলিয়ার বিজেপি সাংসদ জ্যোতির্ময় মাহাতো। তাঁর সঙ্গে ছিলেন ছত্তীসগঢ়ের এক বিজেপি সাংসদও। তাঁরা দু’জন শুভেন্দুর সঙ্গে দেখা করেন। শিশির বা দিব্যেন্দুর সঙ্গে তাঁদের দেখা হয়নি বলেই জানা যাচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy