Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Mahua Moitra

মহুয়াকে নিয়ে তৃণমূলের দুই নেতার মন্তব্যে ‘দুই সুর’ কেন? মুখপাত্রের জবাব, ‘কোনও মন্তব্য নয়’!

মহুয়ার বিষয়ে তৃণমূলের ‘নীরবতা’ নিয়ে কটাক্ষ করছে বিজেপি। তাদের শীর্ষ নেতৃত্ব দাবি করেছেন, মহুয়াকে আসলে ‘ত্যাগ’ করেছেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

derek mahua and firhad

derek mahua and firhad ডেরেক ও’ব্রায়ান, মহুয়া মৈত্র এবং ফিরহাদ হাকিম (বাঁ দিক থেকে)

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০২৩ ২১:২১
Share: Save:

মহুয়া-বিতর্কে তৃণমূলের অবস্থান কী? টাকা নিয়ে সংসদে প্রশ্ন করার অভিযোগে অভিযুক্ত কৃষ্ণনগরের সাংসদ মহুয়া মৈত্রকে নিয়ে কী কোনও পদক্ষেপের কথা ভাবছে তৃণমূল? এখনও তা স্পষ্ট নয়। তবে মহুয়া-বিতর্কে দু’রকম সুর শোনা গেল তৃণমূলের অন্দরে। এক জন ডেরেক ও’ব্রায়েন। তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ। অন্য জন, ফিরহাদ হাকিম। রাজ্যের মন্ত্রী এবং কলকাতার মেয়র। ডেরেক জানাচ্ছেন অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা। কিন্তু ফিরহাদ আগেই বলে দিচ্ছেন, মহুয়ার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। তা হলে মহুয়াকে নিয়ে তৃণমূলের অবস্থান ঠিক কী? তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলছেন, ‘‘কোনও মন্তব্য নয়।’’

নগদ অর্থ এবং উপহারের বিনিময়ে সংসদে আদানিদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীকে জড়িয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মহুয়া। তৃণমূল সাংসদের বিরুদ্ধে এমনই অভিযোগ এনেছেন বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে। তাঁর দাবি, শিল্পপতি দর্শন হীরানন্দানি এবং মহুয়া মিলে গৌতম আদানির তথা আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ‘অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র’ করেছেন। এই মর্মে তিনি লোকসভার স্পিকার এবং লোকপালকে চিঠি লেখেন। দাবি করেন, কোথায় কবে, কত টাকা নিয়েছেন মহুয়া— সে সব প্রমাণও হাতে রয়েছে তাঁর। এমনকি, সেই ঘুষের অঙ্ক ২ কোটি টাকা বলেও দাবি করেছেন দুবে।

শিল্পপতি হীরানন্দানিও কার্যত মেনে নিয়েছেন সেই অভিযোগ। মহুয়ার এক সময়ের ঘনিষ্ঠ বন্ধু জয় অনন্ত দেহদ্রাই-ও একই অভিযোগ করেছেন সিবিআইয়ের কাছে। এর মাঝে মহুয়া পাল্টা মানহানির মামলা করেছেন দেহদ্রাই এবং দুবের বিরুদ্ধে।

দুবে আবার অভিযোগের বহর বাড়িয়ে জানিয়েছেন, সংসদে লগ-ইন করার নিজের কোড হীরানন্দানিকে দিয়েছেন মহুয়া। কৃষ্ণনগরের সাংসদ যদিও এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

এই বিতর্কে তৃণমূল এখনও পর্যন্ত মহুয়া থেকে দূরত্ব বজায় রেখেই চলছে। আগে এ বিষয়ে তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক তথা মুখপাত্র কুণাল জানিয়েছিলেন, আপাতত এ ব্যাপারে দলের কিছু বলার নেই। অন্য দিকে, তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন রবিবার সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে জানান, কৃষ্ণনগরের সাংসদের বিরুদ্ধে সংসদীয় প্যানেলের তদন্ত শেষ হলে তাঁকে নিয়ে দল যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার নেবে। ডেরেকের কথায়, ‘‘সংশ্লিষ্ট সদস্যকে তাঁর বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের বিষয়ে অবস্থান স্পষ্ট করার জন্য দলীয় নেতৃত্বের পক্ষ থেকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তিনি (মহুয়া) ইতিমধ্যেই তা করেছেন। তবে, যে হেতু বিষয়টি এক জন নির্বাচিত সাংসদের সঙ্গে সম্পর্কিত, তাই তাঁর অধিকার এবং সুযোগ-সুবিধার বিষয়টি আগে সংসদের সঠিক ফোরামে তদন্ত হোক। তার পর দলীয় নেতৃত্ব উপযুক্ত সিদ্ধান্ত নেবে।’’

এই আবহে ভিন্ন কথা বলেন ফিরহাদ। রবিবারই এবিপি আনন্দকে তিনি বলেন, ‘‘মহুয়া নিজে যথেষ্ট সাবলীল এই বিষয় থেকে বেরিয়ে আসার জন্য।’’ ফিরহাদের সংযোজন, ‘‘আমি মনে করি, মহুয়ার কণ্ঠরোধ করার জন্য একটা ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। মহুয়া যে হেতু ভোকাল বেশি, তাই এ রকম করা হচ্ছে।’’ তিনি দাবি করেন, মহুয়া বিজেপির বিরুদ্ধে প্রশ্ন তোলেন বলেই তাঁকে বিপাকে ফেলার চেষ্টা হচ্ছে। ফিরহাদের প্রশ্ন, ‘‘প্রথম বার নরেন্দ্র মোদীর ভোট প্রচারের জন্য প্লেন, হেলিকপ্টার কারা দিয়েছিল? বিজেপি সাংসদের আদানিকে বাঁচানোর ব্যাপারে এত উৎসাহ কেন? নিশ্চিত ভাবে ডাল মে কুছ কালা হ্যায়।’’

মহুয়ার বিষয়ে তৃণমূলের ‘নীরবতা’ নিয়ে কটাক্ষ করছে বিজেপি। তাদের শীর্ষ নেতৃত্ব দাবি করেছেন, মহুয়াকে আসলে ‘ত্যাগ’ করেছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজেপির একাংশ এ প্রশ্ন-ও তুলেছে, এত কিছুর পরেও কেন মহুয়াকে বহিষ্কার করেননি শীর্ষ নেতৃত্ব। এক্স (পূর্বতন টুইটার) হ্যান্ডলে বিজেপির জাতীয় মুখপাত্র শেহজাদ পুনওয়াল্লা লেখেন, ‘‘তৃণমূল সরকারি ভাবে জানিয়েছে, ‘আমরা মন্তব্য করব না। সাংসদ নিজে আত্মরক্ষা করবেন’। এর অর্থ, এক, তৃণমূল মেনে নিয়েছে, মহুয়া মৈত্র গুরুতর অন্যায় করেছেন। সুবিধা নিয়ে বিদেশের মাটি থেকে তাঁর সংসদের লগ-ইন আইডি ব্যবহার করতে দিয়েছেন। দুই, তৃণমূল এটা মেনে নিলে তাঁকে কেন বহিষ্কার করছে না?’’ এর পাল্টা কুণাল বলেছেন, বিজেপি তাদের দলের কথা ভাবুক। তৃণমূলকে নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। কিন্তু একই দিনে কেন দলের দুই শীর্ষ নেতা মহুয়া-বিতর্কে দু’রকম কথা বলছেন, তা নিয়ে কিছুই বলতে চান না তৃণমূল মুখপাত্র।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy