অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। — ফাইল চিত্র
রাজ্যের পঞ্চায়েত ভোটে আবহেই নিজের লোকসভা ভোটের প্রচার শুরু করে দিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। রবিবার ফলতায় সাংসদ হিসেবে নিজের কাজের খতিয়ান তুলে ধরলেন তিনি। ‘নিঃশব্দ বিপ্লব’ নামে একটি পুস্তিকা প্রকাশ করেন সাংসদ। ৯ বছর সাংসদ হিসেবে ডায়মন্ডহারবার এলাকার জন্য তিনি কী কী করেছেন, তা এই পুস্তিকার মাধ্যমে তুলে ধরলেন অভিষেক। সঙ্গে তাঁর স্ত্রী-পুত্র-কন্যাকে বিমানবন্দরে আটক করা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করলেন তিনি। সঙ্গে ডায়মন্ডহারবারের মানুষের কাছে ৪ লক্ষ ভোটে জয়ী করার আশ্বাসও চাইলেন দু’বারের সাংসদ।
তিনি বলেন, ‘‘২০১৪ সালের প্রথম বার যখন আমি ডায়মন্ডহারবারে দাঁড়িয়েছিলাম তখন আমি ৭১ হাজার ২৯৯ ভোটে জয়ী হয়েছিলাম। কিন্তু ২০১৯ সালে আমার কেন্দ্রে প্রধানমন্ত্রী এসে প্রচার করে বলে গিয়েছিলেন ডব্বা গুল হো জায়েগা। কিন্তু আপনারা আমাকে ৩ লক্ষ ২২ হাজার ভোট জয়ী করেছিলেন। পশ্চিমবঙ্গের ৪২টি লোকসভা আসনের মধ্যে আপনারা আমাকে সর্বাধিক ভোট পেতে সাহায্য করেছিলেন।’’ অভিষেক আরও বলেন, ‘‘২০২৪ সালের লোকসভা ভোটে আমাকে আপনারা ৪ লক্ষের বেশি ভোটে জয়ী করুন। জবাব আপনাদের দিতে হবে। ২০২১ সালে সোনালী গুহ ও দীপক হালদারদের যোগদান করিয়ে ভেবেছিল অনেক কিছু হবে।’’
অভিষকে বলেন, ‘‘মোদীজির ৫৬ ইঞ্চি ছাতি। আমার ৩ বছরের বাচ্চা, তাঁকেও ছাড়েনি। ৯ বছরের মেয়ে তাঁকে আটকাচ্ছে। এয়ারপোর্টে আটকানো হয়েছিল তাঁদের। কেন? তাঁদের বাবার নাম অভিষেক ব্যানার্জি।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হবে। আপনাকেও কংগ্রেস আমেরিকায় যেতে দেয়নি। মানুষ জবাব দিয়েছিল। আগামী দিনেও মানুষ জবাব দেবে। মনে আছে আপনি আমেরিকায় যেতে চেয়েছিলেন। কংগ্রেস আপনাকে ভিসা দেয়নি। বিদেশ মন্ত্রক থেকে আপনাকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়নি। মানুষ এগুলো পছন্দ করে না।’’
অভিষেকের চ্যালেঞ্জ, ‘‘আপনি আমার সঙ্গে রাজনৈতিক লড়াই করুন। আপনি জনতার দরবারে আমার সঙ্গে লড়াই করুন, কেউ আপনাকে বাধা দেবে না। আপনি ব্যক্তিগত ভাবে যে ভাবে আমার স্ত্রীকে, আমার ৯ বছরের মেয়ে, আমার ৩ বছরের শিশু সন্তানকে পর্যন্ত আপনি আক্রমণ করেছেন এর জবাব মানুষ দেবে। আমি দেব না।’’ তাঁর আরও জবাব, ‘‘আপনি অনেক বড় নেতা, দেশের প্রধানমন্ত্রী। আপনাকে জবাব দেওয়ার অধিকার বা ধৃষ্টতা আমার নেই। কিন্তু মানুষ আপনাকে জবাব দেবে, কারণ আমি মনে করি গণতন্ত্রে কোনও শাসক বা বিরোধী শেষ কথা বলে না’’
উল্লেখ্য, গত ৫ জুন কলকাতা বিমানবন্দরে আটকে দেওয়া হয়েছিল অভিষেকের স্ত্রী রুজিরা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁদের পুত্র-কন্যাকে। সেই সময় নিজের নবজোয়ার কর্মসূচীতে ব্যস্ত ছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। সূত্রের খবর, ওইদিন দুই সন্তানকে নিয়ে তিনি দুবাইয়ের বিমান ধরার জন্য বিমানবন্দরে গিয়েছিলেন। বিমান ধরার আগেই তাঁকে ‘বাধা’ দেয় অভিবাসন দফতর। বেশ কিছু ক্ষণ অপেক্ষা করার পর বিমানবন্দর ছেড়ে বেরিয়ে যান অভিষেক-পত্নী। সেইদিনই নিজের কর্মসূচি থেকে নিজের স্ত্রী-কন্যা ও পুত্রর সঙ্গে এমন আচরণের জন্য ক্ষোভপ্রকাশ করেছিলেন অভিষেক। তিনি বলেছিলেন, “ইডিকে জানানো হয়েছিল। চিঠি দিয়ে বলা হয়েছিল, ৫ তারিখ দুবাই যাবে, ১৩ তারিখ ফিরবে। ইডির আপত্তি থাকলে তখনই জানাতে পারত। আমার সঙ্গে না পেরে স্ত্রী, সন্তানদের টার্গেট করা হচ্ছে। কিন্তু এ ভাবে আমাকে দমানো যাবে না। স্ত্রী, সন্তানদের গ্রেফতার করা হলেও মাথা নত করব না।”
কিন্তু রবিবার ফলতার সভায় সেই ঘটনার জন্য সরাসরি দেশের প্রধানমন্ত্রীকে আক্রমণ করলেন তিনি। তবে এই বক্তৃতার পিছনে অনেকে অভিষেকের কুশলী রাজনীতিকের ভুমিকা দেখেছেন। কারণ পঞ্চায়েত ভোটের আবহেই কার্যত তিনি ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটের প্রচার শুরু করে দিলেন বলেই মনে করছেন ডায়মন্ডহারবার লোকসভা এলাকার তৃণমূল নেতৃত্ব। তাই তিনি একদিকে যেমন সাংসদ হিসাবে নিজের ৯ বছরের কাজের খতিয়ান তুলে ধরেছেন। তেমনই আবার তৃণমূলের হয়ে বিজেপি বিরোধী রাজনীতি করতে গিয়ে যে তাঁকে পারিবারিক ভাবেও কেন্দ্রীয় সরকার তথা প্রধানমন্ত্রী আক্রমণের শিকার হতে হচ্ছে, সে কথাও উল্লেখ করেছেন। সঙ্গে ডায়মন্ড হারবার লোকসভায় ২০২৪ সালের ভোটে ৪ লক্ষ ভোটে তাঁকে জেতানোর কথাও বলেছেন সাংসদ।
অভিষেকের হুঁশিয়ারি, ইডি, সিবিআই, বিচারব্যবস্থার একাংশ, সংবাদমাধ্যমের একাংশকে। তিনি বলেন, ‘‘যতদিন যাবে তৃণমূল বটবৃক্ষে পরিণত হবে। ইডি সমন দিলে খুব নাচছে, আর প্রার্থী কে খুঁজবে ইডি? সারা বছর রাজনীতি না করলে প্রার্থী পাওয়া যায় না। দুয়ারে দুয়ারে পৌঁছে যাচ্ছি। তাই স্ত্রী, কন্যা ও পুত্রকে আটকানো হলেও, আমি মাথা নত করব না।’’ তাঁর কথায়, ‘‘ভয় দেখিয়ে মুকুল রায়, হিমন্ত বিশ্বশর্মা, নারায়ণ রানে, শুভেন্দু অধিকারীদের বিজেপি ভাঙিয়ে নিয়ে গিয়েছে। আমাকে ভাঙাতে পারবে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy