অভিষেকের মতে, সাগরদিঘিতে কংগ্রেসের বাইরন বিশ্বাসের জয়ের পর আদতে বিজেপি অক্সিজেন পেয়েছে। — নিজস্ব চিত্র।
সাগরদিঘিতে কংগ্রেসের জয়ে লাভ হয়েছে বিজেপিরই। হাত শক্ত হয়েছে তাদের। ‘জনসংযোগ যাত্রা’ শেষে মুর্শিদাবাদের রানিনগরে জনসভা করে এমন মন্তব্য করলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। একই সঙ্গে দাবি করলেন, কংগ্রেসের থেকে কোনও ভয় নেই বলেই সাগরদিঘিতে তাদের জয়ের পর পেট্রলের দাম কমায়নি বিজেপিশাসিত কেন্দ্রীয় সরকার। যা তারা ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে হারের পর করেছিল। তাঁর মতে, সাগরদিঘিতে কংগ্রেসের বাইরন বিশ্বাসের জয়ের পর আদতে বিজেপি অক্সিজেন পেয়েছে। সে কারণে তারা সাংবাদিক বৈঠক করে বহরমপুরের সাংসদ অধীর চৌধুরীর নামে কখনও কিছু বলে না। অধীরও গত পাঁচ বছরে কোনও সমস্যা নিয়ে একটি চিঠিও প্রধানমন্ত্রীকে লেখেননি বলে অভিযেকের অভিযোগ। মুর্শিদাবাদে দাঁড়িয়ে এ ভাবেই কংগ্রেস-বিজেপির ‘বোঝাপড়া’র দিকে আঙুল তুললেন অভিষেক।
শনিবার অভিষেক বিজেপি এবং কংগ্রেসের ‘বোঝাপড়া’র কথা বলতে গিয়ে সিপিএমের প্রসঙ্গও তুলে এনেছেন অভিষেক। সাররদিঘির ভোটে কংগ্রেসের জোটসঙ্গী ছিল তারা। অভিষেক জানিয়েছেন, এই ‘বোঝাপড়া’য় রয়েছে বামেরাও। তিনি বলেন, ‘‘বিমান বসু, মহম্মদ সেলিম কোনও দিন অমিত শাহ, শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে বলছেন, দেখবেন না। কাকে আক্রমণ করছেন? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। অন্য দিকে দেখবেন না যে, বিজেপি সাংবাদিক বৈঠক করে অধীর চৌধুরীকে আক্রমণ করেছে।’’ কেন বিজেপির আক্রমণের লক্ষ্য তৃণমূল, তা-ও জানিয়েছেন অভিষেক। তিনি বলেন, ‘‘আক্রমণের কেন্দ্রবিন্দু তৃণমূল। কারণ তৃণমূলকে এরা ধমকে-চমকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। বিজেপি ভাইরাস হলে ভ্যাকসিন তৃণমূল।’’
তৃণমূলকে বিজেপি কতটা ভয় পায়, তা বলতে গিয়ে পেট্রলের দাম কমানোর প্রসঙ্গও তুলে এনেছেন অভিষেক। তিনি জানিয়েছেন, তৃণমূল জেতার পর বিজেপি জ্বালানির দাম কমিয়েছিল। কিন্তু অন্য রাজ্যে বা সাগরদিঘিতে যখন কংগ্রেস জিতেছিল, তখন বিজেপি জ্বালানির দাম কমানোর পথে হাঁটেনি। তাঁর কথায়, ‘‘২০২১ সালে বিজেপি বাংলায় হারার পর বাধ্য হয়েছিল পেট্রল আর ডিজেলের দাম কমাতে। হিমাচল প্রদেশে কংগ্রেস জিতেছে তিন মাসের বেশি সময় আগে। পেট্রলের দাম কমেনি। ডিজেলের দাম কমেনি। সাগরদিঘিতে কংগ্রেস জিতেছে, পেট্রলের দাম কমেনি। ডিজেলের দাম কমেনি। যদি তৃণমূল জিতত, আরও পাঁচ টাকা পেট্রল-ডিজেলের দাম কমত।’’
অভিষেকের দাবি, বিজেপিকে বাড়তি অক্সিজেন জুগিয়েছে সাগরদিঘি। তিনি বলেন, ‘‘সাগরদিঘি হওয়ার পর বিজেপি নতুন করে অক্সিজেন পেয়েছে। রামনবমীর নাম করে চারদিকে অস্ত্রের ঝনঝনানি শুরু করেছে।’’ তিনি যে ভোটের আগে মানুষকে সতর্ক করেছিলেন, সে কথাও মনে করিয়ে দিয়েছেন অভিষেক। প্রচারে এসে কী বলেছিলেন তা-ও মনে করিয়েছেন। অভিষেকের দাবি, সেই সময় তিনি বলেছিলেন, কংগ্রেসকে ভোট আর বিজেপিকে ভোট দেওয়া এক। কংগ্রেস প্রার্থী বাইরনের সঙ্গে বিজেপি নেতাদের ছবি প্রকাশ্যে এনেছিলেন, তা-ও শনিবার জানিয়েছেন। তবে মানুষ যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তাকে স্বাগত জানিয়েছেন অভিষেক। তিনি বলেন, ‘‘এটাই তৃণমূলের রীতিনীতি।’’
তার পরেই ফের কংগ্রেসের জয়ে বিজেপির লাভবান হওয়ার প্রসঙ্গ তুলেছেন তৃণমূল সাংসদ। তৃণমূল জিতলে এ রকম যে হত না, সে কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘সাগরদিঘিতে বাইরন জেতার পর বিজেপির হাত শক্তিশালী হয়েছে। কংগ্রেস হেরে তৃণমূল জিতলে এদের খুঁজে পাওয়া যেত না। রামনবমীর নামে, ধর্মের চারিদিকে এনআরসি পরিবেশ তৈরি করছে। মানুষ যাঁকে ভোট দিচ্ছেন, দেবেন। কিন্তু যত দিন বাংলায় মা-মাটি-মানুষের সরকার রয়েছে, এনআরসির এন-ও হতে দেব না। বুক ঠুকে বলে যাচ্ছি। এনআরসির প্রশ্নই ওঠে না। আমরা বৈচিত্রের মধ্যে একতার মন্ত্রে বিশ্বাসী।’’
বিজেপির সঙ্গে বহরমপুরের কংগ্রেস সাংসদ অধীরকেও কটাক্ষ করেছেন অভিষেক। তাঁর অভিযোগ, মুর্শিদাবাদের বহু মানুষ ১০০ দিনের কাজের টাকা পাননি। অথচ এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে কোনও চিঠি দেননি অধীর। সাংবাদিক বৈঠক করে নরেন্দ্র মোদীকেও তিনি আক্রমণ করেননি। যা মমতার ক্ষেত্রে তিনি করেন বলে অভিষেকের অভিযোগ। তাঁর কথায়, ‘‘একটা দৃষ্টান্ত দেখান, কংগ্রেসের কেউ বলেছেন, বাংলার বকেয়া ফিরিয়ে দাও! আমি পরের দিন থেকে মুর্শিদাবাদে পা রাখব না।’’ জনসংযোগ যাত্রা এবং পঞ্চায়েত ভোটের পর তিনি বাংলার মানুষের দাবিদাওয়া নিয়ে দিল্লি যাবেন বলেও জানিয়েছেন। পাশাপাশি আশ্বাস দিয়েছেন, পরিষেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে তৃণমূল দল বিচার করবে না। যেখানে তারা হেরেছে, সেখানকার মানুষও পরিষেবা পাবেন, স্বাস্থ্যসাথীর সুবিধা, লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের টাকা পাবেন বলে জানিয়েছেন অভিষেক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy