খড়্গপুরে রেলের বৈঠকে পাশাপাশি প্রদীপ সরকার ও প্রেমচাঁদ ঝা (চিহ্নিত)। নিজস্ব চিত্র
মেলার মঞ্চে বিজেপি রাজ্য সভাপতি তথা দলের সাংসদ দিলীপ ঘোষের পাশে বসে শো-কজ হয়েছেন পাশের জেলা পূর্ব মেদিনীপুরের তৃণমূল বিধায়ক সমরেশ দাস।
তার পরেই পশ্চিম মেদিনীপুরের তৃণমূল বিধায়ক শ্রীকান্ত মাহাতোকে সেই একই শাস্তির মুখে পড়তে হয়েছে স্কুলের অনুষ্ঠানে ঝাড়গ্রামের বিজেপি সাংসদ কুনার হেমব্রমের সঙ্গে একই মঞ্চে দেখা যাওয়ায়। এ বার খড়্গপুরের সদ্য নির্বাচিত তৃণমূল বিধায়ক প্রদীপ সরকারকে দেখা গেল দিলীপ ঘোষেরই ‘ঘনিষ্ঠ’ রেলশহরের প্রথম সারির বিজেপি নেতা প্রেমচাঁদ ঝা-র পাশে!
বিজেপি-কে সর্বতো ভাবে বর্জনের ডাক দিয়েছে তৃণমূল। সৌজন্য সাক্ষাতেও কোপে পড়তে হচ্ছে দলের বিধায়কদের। তারই মধ্যে খড়্গপুরে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের জেনারেল ম্যানেজারের সঙ্গে বৈঠকে প্রেমচাঁদের সঙ্গে প্রদীপের সাক্ষাতের বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় শোরগোল পড়েছে। শুক্রবার বিকেলে খড়্গপুর স্টেশনেই শহরের জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন রেলের জেনারেল ম্যানেজার সঞ্জয়কুমার মোহান্তি। শহরে একসময় বিধায়ক দিলীপ ঘোষের প্রতিনিধি ছিলেন প্রেমচাঁদ। গত বিধানসভা উপ-নির্বাচনে তিনি ছিলেন তৃণমূলের প্রদীপের প্রতিদ্বন্দ্বী। রেলের বৈঠকে প্রেমচাঁদকে নিজের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হিসাবেই পরিচয় করাতে দেখা গিয়েছে প্রদীপকে। এমনকি তিনি প্রেমচাঁদের বন্ধু বলেও পরিচয় দিয়েছেন।
তবে কি এগরার বিধায়ক সমরেশ দাস, শালবনির বিধায়ক শ্রীকান্ত মাহাতোর মতোই এ বার ‘কোপে’ পড়বেন প্রদীপ?
তৃণমূলের জেলা সভাপতি অজিত মাইতি বলছেন, “আমি জানি না কী কারণে, কোন পরিস্থিতিতে প্রদীপ সরকার ও প্রেমচাঁদ ঝা-কে একসঙ্গে দেখা গিয়েছে। খড়্গপুরে গিয়ে খোঁজ নিয়ে মতামত জানাব।” প্রদীপের মুখে অবশ্য সৌজন্যের কথা। প্রেমচাঁদের সঙ্গে বৈঠকে হাজির থাকা নিয়ে তৃণমূল বিধায়কের ব্যাখ্যা, “আমি রেলের জিএমের সঙ্গে শহরের স্বার্থে বৈঠক করতে গিয়েছিলাম। বৈঠকে রেল কাকে ডেকেছে জানব কী ভাবে! কারও নাম ছাপানো আমন্ত্রণপত্রও ছিল না। কোনও মঞ্চও ছিলনা। শহরের বিধায়ক হিসাবে শহরের কোনও বাসিন্দার সঙ্গে চলার পথে দেখা হলে কি সৌজন্য দেখাব না! আমাদের দল তো সৌজন্যের বিরোধী নয়।”
সৌজন্যের রাজনীতি খড়্গপুরে দীর্ঘ দিনের। একসময় শহরের ‘চাচা’ দশবারের বিধায়ক প্রয়াত জ্ঞানসিংহ সোহন পালের থেকে এই শহর রাজনীতির সৌজন্য শিখেছিল। এ বারও উপ-নির্বাচনের প্রচারে নিজেকে ‘জননেতা’, ‘জনসেবক’ বলে দাবি করা প্রদীপও সৌজন্য দেখিয়েছেন। কখনও কংগ্রেসের প্রবীণ প্রার্থীকে প্রণাম করেছেন, কখনও বিজেপি প্রার্থী এই প্রেমচাঁদের সঙ্গে ভোট গনণাকেন্দ্রে একসঙ্গে দেখা গিয়েছে প্রদীপকে। ভোটে জেতার পরে প্রদীপের এই
সৌজন্যের প্রশংসা করে গিয়েছেন তৃণমূলের জেলা পর্যবেক্ষক তথা মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীও।
কিন্তু বিজেপি নেতা-সাংসদদের সঙ্গে একসঙ্গে বসায় শো-কজের নতুন ধারা দেখা যাচ্ছে তৃণমূলে। ফলে প্রশ্নের মুখে রাজনীতির সেই সৌজন্য। বিজেপির জেলা সভাপতি শমিত দাশের বক্তব্য, “রাজনীতিতে তো সৌজন্য থাকবে। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজনীতিকে ঘৃণ্য পথে নিয়ে গিয়েছেন। একজন সাংসদ, বিধায়ক একসঙ্গে বসতে পারবেন না এটা ভারতীয় ঐতিহ্যের বিরোধী। আমার মনে হচ্ছে সৌজন্য পালন করে প্রদীপ সরকার কোনও ভুল করেনি।”
প্রেমচাঁদ অবশ্য খোঁচা দিতে ছাড়ছেন না। বলছেন, “প্রদীপ সরকার আমাকে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার কে? আমি তো আগে থেকেই ছিলাম। তবে তৃণমূল যেটা করছে সেটা ঠিক নয়। আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তো নিজেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বসলেন। এখন কে ব্যবস্থা নেবে?”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy