গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
প্রকাশ্যে ‘ভুল’ স্বীকার করে নিয়েছিলেন তিনি। দলনেত্রীর কাছে ক্ষমা চেয়ে নেবেন বলেও জানিয়েছিলেন। কিন্তু তৃণমূলের সঙ্গে তাঁর ভাঙা সম্পর্ক যে এখনও ঠিকঠাক জোড়া লাগেনি, গত কয়েকদিনের ঘটনাপ্রবাহই তার প্রমাণ। এ বার ‘ইঙ্গিতপূর্ণ’ টুইটে পাণ্ডবেশ্বরের বিধায়ক জিতেন্দ্র তিওয়ারি লিখলেন, ‘পরিস্থিতি কঠিন’। যা থেকে তাঁর দলের অন্দরে আবার জল্পনা তৈরি হয়েছে। যে জল্পনার মূল সুর— জিতেন্দ্র কি এই কঠিন পরিস্থিতিতে তৃণমূলে থাকবেন? নাকি তাঁর শেষ গন্তব্য হতে চলেছে পদ্মশিবির?
রবিবারই তৃণমূলের পশ্চিম বর্ধমান জেলা কমিটি থেকে বাদ পড়েছেন জিতেন্দ্র। এমনকি, জেলা সভাপতি পদেও আর তাঁকে ফেরানো হয়নি। বরং তাঁর ছেড়ে দেওয়া পদটি তুলে দেওয়া হয়েছে অপূর্ব মুখোপাধ্যায়ের হাতে। প্রসঙ্গত, এর আগে জিতেন্দ্র আসানসোলের পুর প্রশাসক পদে ইস্তফা দিয়েছিলেন জিতেন্দ্র। দলে ফেরার পর তাঁকে আর ওই পদে ফেরানো হয়নি। অর্থাৎ, দলের সঙ্গে দূরত্ব আগেই বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছিল তাঁর। এর পর জেলা কমিটি থেকেও তিনি বাদ পড়ায় দেওয়ালের লিখন জিতেন্দ্র শিবিরের কাছে স্পষ্ট বলেই মনে করা হচ্ছে। তার পর তাঁর সোমবারের টুইটে তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে তাঁর রসায়ন নিয়ে নতুন করে জল্পনা শুরু হয়েছে। জেলা কমিটি থেকে বাদ পড়েও ‘দিদির সৈনিক’-এর থেকে বড় কোনও পদ হয় না বলে রবিবার অভিমত ব্যক্ত করেছিলেন জিতেন্দ্র। রাত পোহাতেই টুইটারে নিজের মনের অবস্থা জানিয়েছেন তিনি। সোমবার সকালে নিজের টুইটার হ্যান্ডলে একটি আমেরিকান প্রবাদ উদ্ধৃতি করেছেন পাণ্ডবেশ্বরের এই ডাকাবুকো বিধায়ক। তিনি লিখেছেন, ‘হোয়েন দ্য গোয়িং গেট্স টাফ, দ্য টাফ গেট্স গোয়িং’। অর্থাৎ, পরিস্থিতি যখন কঠিন হয়ে দাঁড়ায়, দৃঢ়চিত্ত মানুষই তার মোকাবিলা করতে পারে।
টুইটটি সামনে আসতেই তৃণমূলে জিতেন্দ্রর ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন করে জল্পনা শুরু হয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, দলে ফিরে আসার পরেও কি জিতেন্দ্রর সঙ্গে তৃণমূলের সম্পর্কে ফাটল রয়ে গিয়েছে? তাঁকে কি বিশ্বাস করতে পারছে না তৃণমূল? নতুন করে গ্রহণযোগ্যতা তৈরি না হওয়াতেই কি মানসিক দ্বন্দ্বের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন জিতেন্দ্র? নিজের অভিব্যক্তি যদিও সবিস্তারে ব্যাখ্যা করেননি তিনি। তবে তৃণমূল সূত্রের খবর, শেষমেশ ঘরে ফিরে এলেও তাঁর বিজেপি-র দিকে পা বাড়ানো মানতে পারেননি তৃণমূল নেতৃত্ব। এখনও যে তাঁর সঙ্গে বিজেপি-র কোনও যোগাযোগ নেই, তা-ও সে কথাও বিশ্বাস করতে রাজি নয় দলের একটা বড় অংশ। তাই ভোট যত এগিয়ে আসছে, ধীরে ধীরে তাঁর ডানা ছেঁটে ফেলা হচ্ছে। তিনি ‘ঘর ওয়াপসি’-র আপ্রাণ চেষ্টা করলেও, দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গে তাঁর দূরত্ব আর ঘোচার নয়। দলের অন্য একটি অংশের মতে, এখনও বিজেপি নেতৃত্বের সঙ্গে জিতেন্দ্রর যোগাযোগ থাকার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। তার জেরে দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গে দৃরত্ব বাড়তে বাড়তে এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে, তৃণমূলে তাঁর জন্য আনুষ্ঠানিক কোনও পদ পাওয়ার আর জায়গা নেই। তাঁর কাছে যে দলের তেমন কোনও প্রত্যাশা নেই, সেটাই উপর্যূপরি ডানা ছাঁটার মাধ্যমে বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
When the going gets tough,
— Jitendra Tiwari (@JitendraAsansol) January 18, 2021
The tough get going!!
আরও পড়ুন: আজ মমতার গড়ে মিছিলে শুভেন্দু, নন্দীগ্রামে শুভেন্দুর ডেরায় সভা মমতার
আরও পড়ুন: বৃক্ষরোপণ, পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে ২৬ জানুয়ারি মসজিদ নির্মাণে সূচনা অযোধ্যায়
তৃণমূলে আগের মতো সমাদর না পেয়ে জিতেন্দ্র নিজেও নতুন করে গেরুয়া শিবিরে যেতে চান কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে এই মর্মে জল্পনা প্রতিদিনই বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর আগে তাঁর বিজেপি-তে যাওয়ার জল্পনা জোর পেলে তা নিয়ে প্রকাশ্যে নিজেদের অসন্তোষের কথা জানিয়েছিলেন আসানসোলের সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়, দলের মহিলা মোর্চার সভানেত্রী অগ্নিমিত্রা পাল প্রমুখ। পরিস্থিতি ‘বেগতিক’ দেখে জিতেন্দ্র কলকাতায় এসে তৃণমূলের সঙ্গে মিটমাট করে নিয়েছিলেন। কিন্তু রাজনৈতিক মহলে জল্পনা, জিতেন্দ্রকে দলে পেতে আবার উদ্যোগী হতে পারে বিজেপি। বিশেষত, যখন দলে কাউকে নেওয়া বা না নেওয়ার বিষয়ে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে বঙ্গ বিজেপি-র নেতাদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে জিতেন্দ্র সোমবারের ‘ইঙ্গিতপূর্ণ’ টুইট গোটা জল্পনায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এখন দেখার, আগামী কয়েকদিনে এই ‘ইঙ্গিত’ কোনও ‘বার্তা’ হয়ে ওঠে কি না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy