কুণাল ঘোষ। —ফাইল চিত্র।
কুণাল ঘোষের প্রকাশ্য মন্তব্য থেকে দূরত্ব রচনার কাজ শুরু করে দিলেন তৃণমূল নেতৃত্ব। শনিবার বিকালে তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব সূত্রে তেমনটাই খবর মিলেছে। দলের মুখপাত্র এবং রাজ্য সম্পাদক পদ থেকে শুক্রবার ইস্তফা দিয়েছিলেন কুণাল। ‘মুখপাত্র’ হিসাবে কুণালের ইস্তফা গ্রহণ করে নিয়েছেন দলীয় নেতৃত্ব। কিন্তু ‘রাজ্য সম্পাদক’ পদে তাঁর ইস্তফা এখনও গৃহীত হয়নি। অর্থাৎ, কুণাল অতঃপর যা বলবেন, তা ‘দলের লাইন’ বা ‘দলের বক্তব্য’ হিসেবে গৃহীত হবে না। অন্য ভাবে বললে, কুণালের বক্তব্যের কোনও ‘দায়’ নেবে না দল।
সূত্রের খবর, কালীঘাট এবং ক্যামাক স্ট্রিটের সমন্বয়েই ‘মুখপাত্র’ পদে কুণালের ইস্তফা গৃহীত হয়েছে। শুক্রবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে হোয়াট্সঅ্যাপ বার্তা পাঠিয়ে মুখপাত্র এবং রাজ্য সম্পাদক পদে ইস্তফা দিয়েছিলেন কুণাল। রাজ্য সম্পাদক পদে গৃহীত না হলেও মুখপাত্র পদে তাঁর ইস্তফা গৃহীত হয়েছে বলেই খবর। গোটা ঘটনাপ্রবাহে দলের শীর্ষনেতৃত্ব যে ক্ষুব্ধ, তা-ও তৃণমূলের প্রথম সারির নেতারা একান্ত আলোচনায় গোপন করছেন না। দলের নেতারা মনে করছেন, এই ধরনের প্রবণতা অনেক সময়েই ‘সংক্রামক’ হয়। লোকসভা ভোটের আগে তা ছড়াতে শুরু করলে তা তৃণমূলের জন্য ‘স্বাস্থ্যকর’ হত না। তাই বিলম্ব না-করে মুখপাত্রের পদে তাঁর ইস্তফা গ্রহণ করে নিয়েছে দল। ওই পদক্ষেপের মাধ্যমে কুণালকে প্রয়োজনীয় ‘বার্তা’ও দেওয়া হয়েছে বলে জানাচ্ছেন দলের নেতারা। এর পর কুণাল আরও কোনও প্রকাশ্য মন্তব্য করেন কি না, তার দিকেও নজর রাখছে দল। তেমন হলে কি আরও কড়া পদক্ষেপ করা হতে পারে? এক নেতার বক্তব্য, ‘‘দুষ্ট গরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল ভাল!’’
প্রসঙ্গত, এর আগেও এক বার কুণালকে মুখপাত্র হিসেবে ‘সেন্সর’ করেছিল দল। কিন্তু তার পরে কুণালকে আবার মুখপাত্রের দায়িত্ব ফিরিয়ে দেওয়া হয়। এ বার তার পুনরাবৃত্তি হবে কি না, তা এখনই নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারছেন না।
প্রবীণ রাজনীতিকদের বক্তব্য, এক জন মুখপাত্র শুধুমাত্র দলের অবস্থানই বলবেন। সেটাই তাঁর কাজ। তাঁর কোনও আলাদা পছন্দ বা অপছন্দ থাকতে পারে না। কিন্তু কুণাল এ ক্ষেত্রে নিজস্ব পছন্দ-অপছন্দ দেখিয়েছেন। দলের এক নেতার বক্তব্য, ‘‘মুখপাত্র হিসেবে কুণাল তাঁর ভূমিকা অতিক্রম করে গিয়েছেন। অথবা দলের কেউ কেউ তাঁকে ব্যবহার করেছেন। নিজের স্পষ্টবাদিতার কারণে কুণাল দলের অন্দরে অনেক শত্রুও তৈরি করে ফেলেছেন।’’
দলীয় সূত্রের খবর, কুণাল যে ভাবে ক্রমান্বয়ে দলের প্রবীণ সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে লক্ষ্য করে তোপ দাগছেন, তা ভাল ভাবে নেননি এবং নিচ্ছেন না শীর্ষনেতৃত্ব। দলের এক নেতার কথায়, ‘‘দলের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে অনেকের ক্ষোভ-বিক্ষোভ থাকতেই পারে। কিন্তু সেটা দলের মধ্যেই বলা উচিত। যে ভাবে উনি লাগাতার সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে বিষোদ্গার করছেন, তা আর যা-ই হোক, দলকে সাহায্য করছে না।’’ ওই প্রবীণ নেতার আরও বক্তব্য, ‘‘দল সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পর্কে ওঁর বক্তব্য সমর্থন করে না।’’
বস্তুত, কুণাল প্রকাশ্যে এই ভাবে সুদীপের বিরোধিতা করে পরোক্ষে তাঁর প্রার্থিপদ আরও ‘নিশ্চিত’ করে দিচ্ছেন বলেই দলের একাংশের বক্তব্য। দলের এক প্রথম সারির নেতার কথায়, ‘‘সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় এই গোটা পর্বে একটি কথাও বলেননি। কোনও প্রতিক্রিয়া দেননি। চুপচাপ গোটাটা হজম করছেন। সেটাই ওঁর পক্ষে চলে যাচ্ছে।’’
কুণাল যে ভাবে সুদীপ বন্দি অবস্থায় ভুবনেশ্বরের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার সময় তাঁর বিল ইত্যাদি নিয়ে প্রকাশ্যে প্রশ্ন তুলে তাঁর বিরুদ্ধে তদন্তের দাবি তুলেছেন, দল তা-ও সুনজরে দেখছে না। কুণাল তাঁর এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে ওই বিষয়ে তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। দাবি জানিয়েছেন সুদীপের পুনরায় গ্রেফতারিরও। কিন্তু দলের অন্দরে কুণালের বিরোধীরা আরও একটি বিষয় উল্লেখ করছেন। তাঁদের বক্তব্য, কুণাল যে ভাবে ওই পোস্টে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের ডিরেক্টর এবং সিবিআইকে ‘ট্যাগ’ করেছেন, তা ‘দলবিরোধী’। এমনই এক নেতার প্রশ্ন, ‘‘কুণাল সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে বিজেপির সঙ্গে যোগাযোগের অভিযোগ তুলছেন। কিন্তু উনি যে ভাবে ওই পোস্ট করেছেন, তাতে তো তিনিই বিজেপিকে সুবিধা করে দিচ্ছেন! ওই পোস্টে নইলে ইডির ডিরেক্টর আর সিবিআইকে ট্যাগ করার অর্থ কী?’’ ওই নেতার আরও বক্তব্য, ‘‘ভোট যখন দুয়ারে এসে পড়েছে, তখন প্রকাশ্যে এসব কথা বলা কি উচিত?’’
তবে ওই পোস্ট নিয়ে কুণাল আর কথা বাড়াতে রাজি হননি। ওই বিষয়ে প্রশ্ন করায় তিনি বলেছেন, ‘‘আমি ওই পোস্ট নিয়ে আর কোনও মন্তব্য করছি না। আমার মুখে কুলুপ আঁটা আঁটা আছে। উপরওয়ালার নির্দেশ।’’
শুক্রবার এক্স হ্যান্ডলের (সাবেক টুইটার) বায়ো থেকে তৃণমূল মুখপাত্র এবং দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদকের পরিচয় মুছে দিয়েছিলেন কুণাল। পরিচয় হিসাবে রেখেছিলেন শুধুই ‘সাংবাদিক’ আর ‘সমাজকর্মী’। তার পর তিনি শুক্রবারে সংবাদমাধ্যমে বলেছিলেন, ‘‘দলের সিস্টেমে আমি মিসফিট। দ্বিধাদ্বন্দ্ব কাজ করছে। তা নিয়ে আমি থাকতে চাই না।’’
সারদাকান্ডে জেল খাটার পরে কুণাল ধীরে ধীরে তৃণমূলে নিজের জায়গা করেছিলেন। দলের প্রধান মুখপাত্র, রাজ্য তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদকের পদ পেয়েছিলেন। সংবাদমাধ্যমে তিনিই দলের ‘লাইন’ ব্যাখ্যা করতেন। কুণাল যে জায়গায় নিজেকে তুলে নিয়ে গিয়েছিলেন, তাতে রাজ্যের মন্ত্রী শশী পাঁজা একটি অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, ‘‘আমি কুণালদার কথা শুনে ভাবি, লোকটা বলে কী করে এই ভাবে? কী সাহস!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy